ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সিলেটে ফ্যাক্টর ‘সংখ্যালঘু’ ভোটার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
সিলেটে ফ্যাক্টর ‘সংখ্যালঘু’ ভোটার সংখ্যালঘু এসব ভোটারদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া পূরণ যিনি পূরণ করতে পারবেন তিনিই হবেন নগরপিতা

সিলেট থেকে: সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের বাকি নেই এক সপ্তাহও। আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সবাই। তবে ভোটের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই পাল্টে যাচ্ছে হিসাব নিকাশ।

সিলেট নগরের বাসিন্দারা মনে করছেন, নগরপিতা নির্ধারণে বড় ‘ফ্যাক্টর’ হতে পারে ‘সংখ্যালঘু’ ভোট। মেয়র প্রার্থীর বিজয়ের মালা গলায় পরতে হলে সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে টানা ছাড়া বিকল্প নেই।

আর এসব ভোটারদের দাবি শ্মশান ঘাট উন্নয়ন, মন্দির উন্নয়ন ও জন নিরাপত্তাকে যিনি অগ্রাধিকার দেবেন তাকেই নগরপিতা হিসেবে বেছে নেওয়া হবে।  

সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার সুব্রত চক্রবর্ত্তী জুয়েলের মন্তব্যও এমনই, ‘সংখ্যালঘু ভোটারদের সমর্থন যেদিকে যাবে, তিনিই এবারের নগরপিতা নির্বাচিত হবেন’।

তিনি বলেন, সিলেট নগরে ৯৫ হাজার সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। এসব ভোট যেদিকে যাবে, সেই প্রার্থীর পাল্লা ভারী হবে। আমাদের চাওয়া-পাওয়া খুব বেশি নয়। দীর্ঘদিন ধরে মাদারবাগের শ্মশান ঘাটের উন্নয়ন হয়নি। অনেক মন্দিরের সংস্কার কাজও থেমে আছে। এসব কাজ যিনি করে দেবেন তাকেই আমরা ভোট দেবো।  

অনেকে আমাদের কাছে ভোটের জন্য আসেন, কিন্তু ভোটের পর তাদের কোনো খবর থাকে না বলেও আক্ষেপ ঝাড়েন এ ভোটার।

সিলেট সিটি নির্বাচনে মোট ২৮ শতাংশ ভোটার সংখ্যালঘু। নির্বাচন কমিশনের হালনাগাদ তালিকায় নগরীতে বর্তমানে মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন।  

কমিশনের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে নগরীতে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। এর মধ্যে মণিপুরী সম্প্রদায়ের ভোটার প্রায় ১০ হাজার।
  
সরেজমিন কথা বলে শহরের মির্জাজাঙ্গাল, মণিপুরী রাজবাড়ী, শিবগঞ্জ, আম্বরখানা, মাছিমপুর মণিপুরী পাড়ার ভোটারদের বিভিন্ন দাবি জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম নিরাপদ পানি, সড়ক উন্নয়ন, নতুন শ্মশান ঘাটের উন্নয়ন ও বিভিন্ন উৎসবে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি।
 
সরকারি চাকরিজীবী শেরাম নিরঞ্জন বলেন, আমাদের সামাজিক চাহিদা খুব বেশি নয়। তারপরও ভোটের পরে আমাদের প্রতি অনেকের নজর থাকে না। আমাদের সম্প্রদায়ের বসতি যেখানে গড়ে উঠেছে সেখানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান নয়। শ্মশান ঘাটের উন্নয়ন ও মন্দিরের সংস্কারও করা হয় না। অনেক সময় এসব সংস্কার করতে হয় সামাজিকভাবে।
 
এদিকে সিলেটে ভোটের মাঠে প্রার্থীরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী এবারও নির্বাচন করছেন ধানের শীষ প্রতীকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নগরীর উন্নয়নে তিনি অনেক পরিকল্পনা নিলেও সরকারের ষড়যন্ত্র তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

তবে দুইবারের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান যিনি এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তার অভিযোগ, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ আরিফুল হক।
 
প্রার্থীরা একে অপরকে দোষারোপ করলেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে মণিপুরী সম্প্রদায়ের ভোটারদের মধ্যে। কামরান ও আরিফুল এ সম্প্রদায়ের লোকজনের পছন্দের প্রার্থী। দুই প্রার্থীই তাদের মন জয় করেছেন। তারপরও নগরপিতা হিসেবে একজনকেই বেছে নিতে হচ্ছে এসব সম্প্রদায়ের ভোটারদের।
 
লামাবাজার মণিপুরী পাড়ায় কথা হয় অর্চণা দেবীর সঙ্গে। কামরান-আরিফুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আরিফ-কামরান দুইজনেই বালা। তারা আমরার (আমাদের) খুঁজ-খবর নেয়। ইবারও (এবারও) রথ উৎসবে তারা দুজনেই ট্যাখা (টাকা) দিয়া সাহায্য করছইন (করেছে)। এরপরেও ভোট তারা দুইজনের মাঝ তাকি (থেকে) এখজনরে দিমু। ’
 
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে মেয়র পদে চূড়ান্ত প্রার্থীরা হলেন- বদরউদ্দিন আহমদ কামরান (আওয়ামী লীগ), আরিফুল হক চৌধুরী (বিএনপি), অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (জামায়াত, ২০ দলীয় জোট বিদ্রোহী), প্রফেসর ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন (ইসলামী আন্দোলন), এহসানুল হক তাহের (স্বতন্ত্র), আবু জাফর (সিপিবি-বাসদ)। তবে ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বদরুজ্জামান সেলিম (বিএনপি বিদ্রোহী)।

কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৮৯ জন। এর মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৬২ জন।

সিসিকে মোট ভোটকেন্দ্র ১৩৪টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটকেন্দ্র ৪৯টি, মহিলা ভোটকেন্দ্র ৪৮টি এবং যৌথ ভোটকেন্দ্র ৩৭টি। মোট ৯২৬ ভোটকক্ষের মধ্যে অস্থায়ী ৩৪টি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
এমআইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।