ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ফেনী ১-৩’এ বিদ্রোহী-স্বতন্ত্র’র জন্য বেকায়দায় মহাজোট 

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮
ফেনী ১-৩’এ বিদ্রোহী-স্বতন্ত্র’র জন্য বেকায়দায় মহাজোট  ফেনী ১ ও ৩ আসনের প্রার্থীরা

ফেনী: ফেনী ০১ (ছাগলনাইয়া-ফুলগাজী-পরশুরাম) ও ফেনী ০৩ (দাগনভূঞাঁ-সোনাগাজী) আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে বেকায়দায় আছে মহাজোটের প্রার্থীরা। 

নির্বাচনী মাঠ ঘুরে দেখা যায়- মহাজোটের প্রার্থীদের চেয়ে প্রচারণায় এগিয়ে আছে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এদিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন মহাজোটের প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন না দলের মনোনয়ন বঞ্চিত বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন।

 

ফেনী ০১:
ফেনী ০১ (ছাগলনাইয়া-ফুলগাজী-পরশুরাম) আসনে মহাজোট নৌকা প্রতীকে জাসদের (ইনু) সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য শিরিন আখতার।  

অপরদিকে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক মহাসচিব ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ আবদুল্লাহ।  
নির্বাচনী মাঠ ঘুরে দেখা যায়- উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তার আপেল প্রতীকের প্রচারণায় কাজ করছেন।  

অপরদিকে মহাজোটের প্রার্থী শিরিন আখতারের নির্বাচনী গণ সংযোগে জাসদের নেতা-কর্মীদের দেখা গেলেও উল্লেখ করার মত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। অবশ্য শিরিন আখতার তার জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীক দিয়ে তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এই এলাকার মানুষ তাকে বিপুল ভোটে জয় যুক্ত করে আবার তাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।  

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। দলমত নির্বিশেষে এলাকার মানুষের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এগিয়ে এসেছি। প্রত্যাশা করি, এলাকার মানুষ নির্বাচনে তাদের নির্ভুল রায় দেবেন।  

তিনি আরও বলেন, তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত তিন লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বর্তমান সরকারের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কারণে স্বাধীনতা-উত্তর ফেনীর উত্তর-পূর্ব জনপদের ভাগ্যের তেমন উন্নয়ন ঘটেনি। বিএনপির শাসনামলে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকলেও এলাকার কোনো কাজে আসেনি।  

তিনি বলেন, এ জনপদের উন্নয়ন ধরে রাখার জন্য একজন যোগ্য প্রার্থী খুবই প্রয়োজন। আসন্ন নির্বাচনে যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হই, মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট থাকব।

এ ছাড়াও এ ভোটের মাঠে আছেন বিএনপির ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম (ধানের শীষ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট'র (বিএনএফ) শাহরিয়ার ইকবাল (টেলিভিশন), ইসলামী আন্দোলনের কাজী গোলাম কিবরিয়া (হাতপাখা), খেলাফত আন্দোলন আনোয়ার উল্লাহ ভূঁঞা (বটগাছ), জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী (উদীয়মান সূর্য), ইসলামী ফ্রন্টের কাজী মাওলানা নুরুল আলম (মোমবাতি), মুসলিম লীগের তারেকুল ইসলাম (হারিকেন)।

ফেনী ০৩:
ফেনী ০৩ (দাগনভূঞাঁ-সোনাগাজী) সংসদীয় আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে রয়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। জাপার প্রেসিডিয়ামের এই সদস্য নির্বাচন করছেন লাঙল প্রতীক নিয়ে।  

অপরদিকে এ আসনে দলের মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আবুল বাশার।  

এদিকে তার ছেলে ইসতিয়াক আহমেদও নোঙ্গর প্রতীক নিয়ে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনী মাঠ ঘুরে দেখা যায় এখানেও মহাজোটের প্রার্থীর চাইতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর তৎপরতাই বেশি।  

আবুল বাশার ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী ৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রায় ৯৩ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির প্রয়াত মোশাররফ হোসেন। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনেও বাশার প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে পরে মহাজোটের প্রার্থী জাপার আনোয়ারুল কবীরের পক্ষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। গতবার ওই আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দলের জেদ্দা শাখার সভাপতি রহিমুল্লাহ।  

বাশার বলেন, আগের নির্বাচনে দলের স্বার্থে সরে দাঁড়ালেও এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে তিনি থাকবেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের ইচ্ছার আলোকেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় অনুরোধে মহাজোটের পক্ষে জাপার প্রার্থীকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই প্রার্থী একপর্যায়ে মাঠ ছেড়ে দেন। এবার আর ছাড়বোনা নির্বাচন করবোই।

তার ছেলে ইশতিয়াত আহমেদ বলেন, আমার বাবা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনের সাধারণ জনগণ হতাশ। আমি ও আমার বাবা দুইজনই স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা নির্বাচনের মাঠে থাকবো।

অপরদিকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে রয়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন আর সে কারণেই মহাজোটের সব নেতা-কর্মীরা তার নির্বাচনের জন্য কাজ করবেন। এবং জনগণের বিপুল ভোটে তিনি নির্বাচিত হবেন। এ লক্ষে সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনি মত-বিনিময়ও করেছেন।  

তিনি বলছেন, শেখ হাসিনার নির্দেশ এ অঞ্চলের নেতা-কর্মীরা অমান্য করবে না, তার নির্বাচনের জন্যই কাজ করবে তারা।  

এ ছাড়াও নির্বাচনী মাঠে বিএনপির দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী বাসদের হারাধন চক্রবর্তী (মই), বিএনএফ শাহরিয়ার ইকবাল (টেলিভিশন), ইসলামী আন্দোলনের আবদুর রাজ্জাক (হাতপাখা), ইসলামী ফ্রন্ট মো. মাঈন উদ্দিন (চেয়ার) ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের গোলাম হোসন (বাঘ) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৪০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮
এসএইচডি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।