ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নির্বাচনী সহিংসতায় আ’লীগের ১০ নেতাকর্মীসহ নিহত ১৭

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৮
নির্বাচনী সহিংসতায় আ’লীগের ১০ নেতাকর্মীসহ নিহত ১৭ নরসিংদীতে গলাকেটে হত্যার শিকার নৌকার এজেন্ট মিলনের মরদেহ, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া হয়ে গেলো একাদশ সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে ভোটের ফলাফল। শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) দিনগত মধ্যরাত থেকে রোববার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ৯টা পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় দেশজুড়ে প্রাণ হারালেন কমপক্ষে ১৭ জন। 

এর মধ্যে দশজনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বলে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

রোববার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে।

এই আটঘণ্টায় বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে।  

এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায়ই তিনজন মারা গেছেন। একজন শিক্ষার্থী, আরেকজন যুবলীগের কর্মী এবং এক ভোটার নিহত হয়েছেন এ জেলায়।  

রাঙামাটিতে যুবলীগ নেতা, রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতা ও এক কর্মী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক যুবক, নরসিংদীতে নৌকার এজেন্ট, বগুড়ায় ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি, কক্সবাজারে ছাত্রলীগের কর্মী, নোয়াখালীতে আনসার সদস্য, দিনাজপুরে বৃদ্ধ ভোটার, কুমিল্লায় ঐক্যফ্রন্টের কর্মী ও এক সমর্থক, সিলেটে ছাত্রদল নেতা, লালমনিরহাটে বিএনপি নেতা, গাজীপুরে আওয়ামী লীগের নেতা এবং লক্ষ্মীপুরে এক যুবক নিহত হয়েছেন।

বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য জেলাভিত্তিক এসব ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

চট্টগ্রাম: জেলার পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নে এদিন সকাল ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আবু সাদেক (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হন। তিনি দক্ষিণ মালিয়ারা এলাকার আবুল কাশেম মেম্বারের ছেলে।

একই উপজেলায় শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপি কর্মীর হামলায় দিল মোহাম্মদ (৩৫) নামে যুবলীগের এক কর্মী নিহত হন।

এছাড়া জেলাটির বাঁশখালী উপজেলায় ভোট শুরুর আগ মুহূর্তে দু’পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারান আহমদ কবির (৪৫) নামে এক ব্যক্তি।

রাঙামাটি: এর কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে সকাল ৮টার দিকে বিএনপি কর্মীদের হামলায় বাছির উদ্দীন (৩০) নামে যুবলীগ নেতা নিহত হন। এছাড়া এখানে পৃথক সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১৩ জন।

রাজশাহী: মোহনপুরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্র দখল নিয়ে সংঘর্ষে বিএনপি-জামায়াতকর্মীরা পিটিয়ে মেরাজুল ইসলাম (৩০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করেন। বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েনউদ্দিন মেরাজকে তার কর্মী দাবি করেছেন।

তাছাড়া জেলাটির তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুপুরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মোদাচ্ছের আলী (৪০) নামে এক আওয়ামী নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইসরাইল মিয়া (১৯) নামে এক যুবক নিহত হন। তিনি রাজঘর গ্রামের ছাওয়াল মিয়ার ছেলে। পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন।

বগুড়া: কাহালু উপজেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ওয়ার্ড যুবলীগের সহ সভাপতি আজিজুর রহমান নিহত হন।

নরসিংদী: শিবপুর উপজেলায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভোটকেন্দ্রে মিলন মিয়া (৩০) নামে নৌকার এক এজেন্টকে গলাকেটে হত্যা করেন আওয়ামী লীগের বিরোধী প্রার্থীর (স্বতন্ত্র) সমর্থকরা।

নোয়াখালী: বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নের তুলাচারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুপুর ১টার দিকে নুর নবী নামে এক আনসার সদস্যকে গুলি করে হত্যা করেন বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা।

কক্সবাজার: পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষে আব্দুল্লাহ আল ফারুক (২৪) নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হন। এ দিন সকাল সাড়ে ১১টায় মাতব্বরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা।

দিনাজপুর: বিরল উপজেলায় সকাল সাড়ে ১১টায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কেমু মোহাম্মদ (৬৫) নামে এক ভোটারের মৃত্যু হয়। এছাড়া এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ উভয়পক্ষের পাঁচজন আহত হন।

কুমিল্লা: চান্দিনা উপজেলায় সকাল পৌনে ১১টার দিকে পুলিশের গুলিতে মুজিবুর রহমান (৩৫) নামে এক ভোটার নিহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সময় আরও একজন গুলিবিদ্ধ হন। এখানের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রেদোয়ান আহমেদ এ দুইজনকে ঐক্যফ্রন্টের কর্মী বলে দাবি করেছেন।

এছাড়া জেলাটির নাঙ্গলকোট উপজেলায় সকাল ১১টায় বাচ্চু মিয়া (৩৮) নামে ধানের শীষের এক সমর্থককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায়। তিনি উপজেলার দোলখার ইউনিয়নের সন্ধ্যাইল গ্রামের বাসিন্দা।

সিলেট: সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার আদিত্যপুরে বিকেল ৩টার দিকে পুলিশের গুলিতে সায়েম আহমদ সোহেল (২৬) নামে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হন। সায়েম উপজেলার তালতলা নলজুড় গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে ও বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক।

লালমনিরহাট: সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের পাগলারহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দুপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক তোজাম্মেল হক (৬৫) নিহত হন। তিনি ওই এলাকার খলাইঘাট গ্রামের বাসিন্দা।

গাজীপুর: সিটি করপোরেশনের হারিনাল এলাকায় দুপুর ২টার দিকে লিয়াকত হোসেন (৪২) নামে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। লিয়াকত গাজীপুর কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের সাবেক ভিপি ছিলেন।

লক্ষ্মীপুর: সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্র এলাকায় শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে অজ্ঞাতপরিচয় (৩৫) এক যুবক নিহত হন।

ভোটগ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নির্বাচনী সহিংসতায় আওয়ামী লীগের ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিলো।  

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।