সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই প্রক্রিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করে নেওয়া হবে। প্রথম প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একটি আলাদা সার্ভার বসাবে নির্বাচন কমিশন।
সেই আবেদনটি পরবর্তীতে আবেদনকারীর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হবে। তদন্তে ইতিবাচক প্রতিবেদন এলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে। এরপর দশ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশেই বসানো হবে ইসির নিবন্ধন কেন্দ্র। যেখান থেকেই বিতরণ করা হবে স্মার্টকার্ড বা এনআইডি। আবেদনকারী স্মার্টাকার্ড নেওয়ার সময় আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দেবেন।
দ্বিতীয় প্রক্রিয়ায় প্রবাসীদের ভোটার করে নেওয়া বলতে অফলাইনে আবেদনের বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে অনলাইনের আবেদন সংগ্রহের পর কোনো দেশে যখন নিবন্ধন কেন্দ্র স্থাপন করে নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে নির্বাচন কমিশন, তখন সংশ্লিষ্ট নাগরিককে ওই কেন্দ্রে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজ/দলিলাদী সরবরাহ করতে হবে।
এ প্রক্রিয়ায় গেলে একটু বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, অনলাইনে আবেদন সংগ্রহ করার পর নিবন্ধন কেন্দ্রস্থাপন করা হবে। এতেই কিছুটা সময় লেগে যাবে। এছাড়া অফলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার পর সেই আবেদন দেশে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো। তার দেওয়ার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এনআইডি ছাপানো হবে। এরপর আবার সংশ্লিষ্ট দেশে বিতরণ করা হবে। অর্থাৎ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত কমিশন বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহেই অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ উন্মোচন হওয়ার কথা রয়েছে।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) আবদুল বাতেন বলেন, সিঙ্গাপুর প্রবাসীদেরই আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিকরা চলতি মাসের শেষের দিকেই অনলাইনেই আবেদন করে ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন। আমরা এজন্য আলাদা সার্ভারও করবো। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অন্যান্য দেশে এ কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হবে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত ৩ থেকে ৯ মার্চ ইসির একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম সিঙ্গাপুর ঘুরে এসে কার্যক্রম হাতে নেওয়ার জন্য বেশকিছু সুপারিশ করেছে। আর সে ভিত্তিতেই কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
ইসির সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ওই টিম সিঙ্গাপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস, সিঙ্গাপুর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড চেকপয়েন্ট অথরিটি এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে আলোচনা করে প্রস্তাবনাটি প্রণয়ন করেছিলেন। এতে বলা হয়েছে- সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা জানা না গেলেও তা ১ লাখের বেশি নয়। আর এজন্য তাদের তথ্য নিয়ে দেশ থেকে তদন্তের পর এনআইডি ছাপিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে বিতরণের জন্য ছয় মাস সময় লাগবে।
কাজটি করার জন্য একটি বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিঙ্গাপুরের আইন। তারা একমাসের বেশি ভিসা দেয়না, বিধায় কয়েক ধাপে কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে কাজটি সম্পন্ন করার পক্ষে ইসি সচিব সচিবালয়।
এক্ষেত্রে ৫ থেকে ৬ জনের এক একটি টিম ২১ দিন করে সিঙ্গাপুর অবস্থান করে কার্যক্রম চালাবে। আর এজন্য সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে দেশটির অবস্থিত অগ্রণী ব্যাংকও। ব্যাংকটি এ কার্যক্রম চালানোর জন্য তাদের বুথে অবস্থিত জায়গায় ইসিকে বুথ স্থাপনের জন্য সম্মতি দিয়েছে। এছাড়া সিটি ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের স্পেসও ব্যবহার করা হতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন দূতাবাসেই বুথ বসিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইসি কর্মকর্তাদের থাকার বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাবনায় সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি কমিউনিটির ভাড়া বাড়িতে বা হোটের রাখার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া পুরো কার্যক্রমটির প্রচারণার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এবং বাংলাদেশি কমিউনিটিকে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে।
সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনাও করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে দেশটি জানিয়েছে, বুথে বা নিবন্ধন কার্যক্রমে যতোজন কর্মকর্তা বাংলাদেশের কাজ করবেন, একই পরিমাণ লোকবল সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের মধ্য থেকে নিতে হবে। এ প্রস্তাবটি মাথায় নিয়েই সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
জুলাইয়ে শেষ থেকে অনলাইনে আবেদন নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে কর্মকর্তাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। যারা কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে ২১ দিনের জন্য সিঙ্গাপুর গিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। পরবর্তীতে আরেকটি টিম যাবে।
মো. আবদুল বাতেন বলেন, সিঙ্গাপুরে ভোটারযোগ্য নাগরিক আছে ৫০ হাজারের মতো। তাদের ভোটার করা হয়ে গেলে, আমরা অন্য দেশে যাবো। এক্ষেত্রে যেসব দেশে বৈধ নাগরিক বেশি আছে, সেখানেই আগে কার্যক্রম চালানো হবে।
সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম সম্পন্ন করে যুক্তরাজ্যের দিকে যাচ্ছে ইসি। আগামী ২৮ জুলাই দেশটিতে সম্ভাবতা যাচাই করতে নির্বাচন কমিশন রফিকুল ইসলাম ও ইসির যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম যাচ্ছেন।
প্রবাসী বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের দাবি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার পর ২০১৮ সালে এ উদ্যোগটি হাতে নেয় নির্বাচন কমিশন। এরপর কয়েক দফায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠক করে সিঙ্গাপুরকেই প্রথম হিসেবে বেছে নেয় ইসি।
এ কার্যক্রমটি সম্পন্ন হলে দেশে এসে প্রবাসীদের ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন, সম্পত্তি ক্রয়সহ নানা প্রশাসনিক কাজক্রমে ভোগান্তি দূর হবে মনে করেন ইসির এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রবাসীরা আমাদের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এ এনআইডি না থাকার কারণে দেশে এসে তাদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সেটা যাতে না হয়, সেজন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।
** চলতি বছর স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন সিঙ্গাপুর প্রবাসীরা
**এনআইডি:যুক্তরাজ্যে সম্ভাবতা যাচাই ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৯
ইইউডি/এসএইচ