ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

সচিব সংবিধান মানছেন না, প্রশ্ন তুললেন চার নির্বাচন কমিশনার

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
সচিব সংবিধান মানছেন না, প্রশ্ন তুললেন চার নির্বাচন কমিশনার

ঢাকা: নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সম্পৃক্ত চান না সংস্থাটির সিনিয়র সচিব। আর এই মনোভাবের মধ্য দিয়ে সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন সরকারের এ আমলা।

সম্প্রতি ইসিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কমিশনকে পাশকাটানোর বিষয়টি সামনে এনে এমন প্রশ্নই তুলেছেন চার নির্বাচন কমিশনার। এক্ষেত্রে তারা সম্মিলিতভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাকে ইউও নোট (আন অফিসিয়াল নোট) এবং অভিযোগপত্র দিয়েছেন।

সঙ্গে তুলে ধরেছেন 'নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার' বিষয়ক আইনের ধারাগুলো।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ১২ থেকে ২০তম গ্রেডে বিভিন্ন পদে ৩৩৯জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওইসব পদের বিপরীতে আবেদন করেন ৮৫ হাজার ৮৯৩জন প্রার্থী। সমগ্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যয় হয় ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির দায়ে ভাইভায় ১৩৫ জনকে বহিষ্কারও করা হয়।

যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে ইসির জনবল শাখা এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। আর পুরো প্রক্রিয়াটিই সম্পন্ন করা হয় চার নির্বাচন কমিশনারকে অবগত না করেই। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন চারজন কমিশনার।

জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী যৌথভাবে সিইসিকে দেওয়া পত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এতে তারা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধও জানিয়েছেন।

ইউও নোটে চার কমিশনার উল্লেখ করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর সিইসির সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার এক পর্যায়ে ইসির সিনিয়র সচিব আলমগীর বলেন, নিয়োগের বিষয় এবং এ সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত। বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সমর্থন দেন। ওই সভায় সচিব আরও বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়াদি কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অন্যান্য বিষয়াদি সিইসির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

চার নির্বাচন কমিশনারের লিখিতপত্রে উল্লেখ করেন-(১) নির্বাচন কমিশনের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গঠিত। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণে অর্পিত সব দায়িত্ব পালন করবে। এবং সচিব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের নিকট দায়ী থাকবেন।

(২) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য অনুমোদিত বাজেট নির্ধারিত খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় অনুমোদনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবেন; বরাদ্দকৃত অর্থ যে সব খাতে ব্যয় হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি কমিশনের এখতিয়ারভূক্ত। এবং কমিশন কর্তৃক অনুমোদন আবশ্যক। মাঝে মধ্যে নির্বাচন প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কোন কোন বিষয় উপস্থাপন করা হলেও অন্য কোন আর্থিক বিষয়ে কমিশনকে অবগতও করা হয় না। যাহা নির্বাচন কমিশন আইন, ২০০৯ এর ১৬ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

(৩) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ এর ধারা ৪সহ অন্যান্য ধারা বর্ণিত কমিশনের উপর অর্পিত সব কার্যাদিতে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কমিশনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তদুপরি সচিবালয় এককভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তা গত ১৪ নভেম্বরের কমিশন সভায় সিনিয়র সচিব তুলেও ধরেছেন। যা সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ ও সংশ্লিষ্ট বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

(৪) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও নির্বাচন কমিশনের সব বিষয়ে সংবিধানসহ বিদ্যমান সকল আইন ও বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নিত হবে। একইসঙ্গে স্বচ্ছতাও জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

অভিযোগপত্রে চার নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০১০ এর ৫(১) ধারায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সার্বিক নিয়য়ন্ত্রণ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপর ন্যস্ত থাকবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে; এবং একই আইনে ১৪(১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যাবতীয় দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য সচিব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের নিকট দায়ী থাকবেন।

আইনের ১৪(২) উপধারা মোতাবেক ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী, নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণে সচিবের নিকট দায়ী থাকবেন।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০১ এর ১৬ ধারায় বর্ণিত আছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য অনুমোদিত বাজেট নির্ধারিত খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় অনুমোদন ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবেন।

এসব বিষয়ে ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৯০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নিয়েছে। ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছেন ইসি, পিএসসি (পাবলিক সার্ভিস কমিশন), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। তাদের সুপারিশে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। ২০০৯-২০১০ সাল থেকে নিয়োগ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম এভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
ইইউডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।