গুলশানে নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচন ও পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মহসিন হোসেন।
বাংলানিউজ: গতবারের মেয়র নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন সরে দাঁড়িয়েছিলেন, এবারের পরিকল্পনা কী?
তাবিথ আউয়াল: গতবারতো আমি একা সরে যাইনি। আপনারা সবাই দেখেছেন যেভাবে নির্বাচন হয়েছিল সেটাকে নির্বাচন বলা যায় না। আমরা এবার বারে বারে বলছি পুরো প্রক্রিয়ায় থাকবো। ইলেকশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরে যাওয়ার মতো কোনো ইচ্ছা বা মন মানসিকতা এবং অবস্থান আমাদের নেই। আমরা ভোটের অধিকার রক্ষা করার জন্য ইলেকশনে যাচ্ছি। এবার আমরা জেনেশুনেই যাচ্ছি যে ভোট চুরি হবে। আমরা জেনেশুনেই যাচ্ছি যে আমাদের ওপরে নানা রকমের হামলা হবে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমাদের মামলা হবে, বা আরও বেড়ে যাবে। সবকিছু জেনেশুনে আমরা মানসিকভাবে আমাদের কর্মীদের তৈরি করছি।
বাংলানিউজ: নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য সবচেয়ে কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
তাবিথ আউয়াল: জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা মাঠে নেমেছি। এখন নাগরিকদের কাছে আমার প্রত্যাশা তারা তাদের ভোট যথাযথভাবে প্রয়োগ করবেন। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে নানা রকম বাধা আসতে পারে কিন্তু তারপরও সেই বাধা উপেক্ষা করে যাতে সবাই ভোট কেন্দ্রে যায় এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে সেটা ফিরিয়ে আনার জন্য নাগরিকদেরই জেগে উঠতে হবে।
বাংলানিউজ: মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকা উত্তরের জনগণের জন্য কী করতে চান? এমন কোনো পরিকল্পনা করেছেন কী?
তাবিথ আউয়াল: অদম্য ঢাকা প্লাটফর্ম-এ আমরা ১২টি জায়গা চিহ্নিত করেছি। শুরু থেকে এই ১২টি ব্যাপারে একইসঙ্গে একই প্রায়োরিটি দিয়ে কাজ করবো। এই ১২টি জায়গায় প্রথম দিন থেকে কাজ করবো। সেটা কীভাবে করবো তা স্পেসিফিক আপনাদের পরবর্তীতে জানাবো। আসলে ঢাকার জনগণ এখন শুধুমাত্র বাঁচতে চায়। বায়ুদুষণ, শব্দদূষণে ঢাকা বিশ্বে প্রথম। পানিরতো দুষণ আছেই। এসব কিছু সরকারি কর্মকর্তারা অস্বীকার করছেন। আমি চাইবো যে সবাই মিলে স্বীকার করি ঢাকার বৃহত্তর সমস্যা আছে। ২ কোটি মানুষকে এখানে বাস করতে হবে আগামী অনেক বছরের জন্য। সেজন্য আমি প্রথম দিন থেকে সকল নাগরিকের সুযোগ সুবিধার জন্য কাজ করবো।
বাংলানিউজ: ভোটের দিন পোলিং এজেন্ট নিয়ে একটা বড় সমস্যা হয়। অনেকে বলছেন আপনারা এবারও পোলিং এজেন্ট দিতে পারবেন না, বা দিলেও তারা থাকতে পারবে না। এবার কি এজেন্ট রাখতে পারবেন?
তাবিথ আউয়াল: এজেন্টরা কেন থাকবে না, অবশই থাকবে। যেটা হয় এজেন্টদেরকে সকালে ঢুকতে দেওয়া হয় না। আর যারা কৌশল করে ঢুকতে পারে, তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়। আমি ২০১৫ সালে নির্বাচন করেছিলাম। তখন সকল কেন্দ্রে মোটামুটি নজর রাখতে পেরেছিলাম। বেশিরভাগ জায়গায় পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যারা ঢুকতে পেরেছিলেন তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্বাচনে পরিস্কারভাবে গণমাধ্যমেও ছবি আছে যে বিদেশি পর্যবেক্ষককে পুলিশ ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। এত প্রমাণ থাকার পরও যদি বারে বারে আমাকে ব্যাখ্যা দিতে হয়। আর এবারও যদি সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে এটা সত্যি নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা।
বাংলানিউজ: দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি কীভাবে মোকাবেলা করবেন?
তাবিথ আউয়াল: নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে বলেছে যে নির্বাচনের আগে আর নতুন মামলা দেওয়া হবে না। আর কোনোভাবে আটক করা হবে না। কমিশন এটা বলেছে আসলে সেটা বাস্তবায়ন হয় কি না। যে আশঙ্কাটা জাগে পুলিশ কর্মকর্তারা কি নির্বাচন কমিশনের অধীনে আছেন, নাকি এখনও দলীয় সরকারের অধীনে আছেন? এ প্রশ্ন তো রয়েই গেছে। আগামী দিনের কর্ম দেখে সেটা বুঝতে পারবো। যদিও ২/১টি ঘটনা আমাদের কানে এসেছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় বড় কোনো ঘটনা এখনও ঘটেনি। আশা করি আমরা আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারবো। সমাধানটা হলো একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। এটা আমার জন্য বা প্রতিপক্ষের জন্য সেটা কোনো ব্যাপার না। সাধারণ ভোটার তথা জনগণ যদি মনে করে ওনারা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন পেয়েছেন। সেটাকে বলবো সুষ্ঠু নির্বাচন। কোনো রাজনীতির পয়েন্ট অব ভিউ থেকে আমি চাপিয়ে দিতে চাচ্ছি না।
বাংলানিউজ: সম্প্রতি ঢাবির এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এটা নিয়ে সারাদেশে আন্দোলন চলছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
তাবিথ আউয়াল: ঢাকায় গণপরিবহনকে কেন্দ্র করে অনেক ক্রাইম বেড়ে যাচ্ছে। ধর্ষণ একটা বড় সমস্যা। আমি আইন ও শালিস কেন্দ্রের সর্বশেষ রিপোর্টাও অনেকবার ফোকাস করেছি। ২০১৯ সালে ধর্ষণ বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে আমার অনেকগুলি পদক্ষেপ ও প্রতিশ্রুতি থাকবে। বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে এই যে ধর্ষণের কালচার এটাতো নতুন কিছু না। আমাদের বর্তমান জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সবাই ব্যর্থ হয়েছে। ওনারা স্বীকার করতে রাজি না যে ঢাকায় সমস্যা আছে। সামাজিক সমস্যাতো আছেই, নিরাপত্তাহীনতাও আছে। আন্তর্জাতিক সকল তালিকায় বলা হয়েছে নিরাপত্তার দিক থেকে ঢাকাশহর হলো একদম নিন্মগামী। পৃথিবীর যুদ্ধক্ষেত্রের শহরগুলোর দিকে তাকান, ঢাকা দামেস্কের চেয়েও নিচে। এখানে কিভাবে আমরা বিশ্বাস করবো যে এটা একটা নারী বান্ধব শহর। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে। মেয়র অফিস থেকে এবং মেয়র অফিসের বাইরে যে সহযোগী সংস্থাগুলো আছে, পুলিশ কর্মকর্তা এবং আমাদের অন্যান্য আইনী কাঠামো সকলকে এখানে এগিয়ে আসতে হবে। গণপরিবহন থেকে এটা কি নতুন ধর্ষণ হয়েছে? বারে বারে কেন আমাদের মা বোনেরা হুমকির শিকার হবেন? এই যে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডের আশে পাশে যে ধর্ষণটা হয়েছে, আপনারা পুলিশের রেকর্ড চেক করেন। এই জায়গাতে অনেক দিন ধরেই কিন্তু ক্রাইম হচ্ছে। একটা স্পটে এত ক্রাইম, আর আমাদের পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওনারা মাদক নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছেন। জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছেন। আরও কত কী। তাহলে একটা স্পটে কেন ক্রাইম হচ্ছে?
বাংলানিউজ: আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম আপনাকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন। এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
তাবিথ আউয়াল: আমার প্রতিপক্ষ আতিকুল ইসলাম সাহেব উনি আপনাদের অনেক কিছু বলে থাকতে পারেন। কিন্তু আমার সাথে বিগত দিনগুলোতে কোনো কথাও হয়নি, কোনো যোগাযোগও হয়নি। তার ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।
বাংলানিউজ: এবার জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
তাবিথ আউয়াল: নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়। জনগণ যদি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তাহলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। গত ১১ বছরে এই সরকারের জুলুম দুর্নীতিতে জনগণ ক্ষুব্ধ। এসব বিষয় বিবেচনায় তরুণ প্রার্থী হিসেবে সব বয়সী ভোটারের সমর্থন পাবো বলে আশা করি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২০
এমএইচ/এজে