তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা মনে করছেন, দুই একজন `দুষ্ট' লোকের কারণে আচরণবিধি কিছুটা লঙ্ঘিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার মো. আবুল কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আচরণবিধি ভঙ্গের হিড়িক বিষয়টি সত্যি না।
তিনি আরো বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৯ দিনে মোট ৪৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৪১টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় এরইমধ্যে আমরা দু’জন প্রার্থীকে পাঁচ হাজার টাকা করে, একজন প্রার্থীকে তিন হাজার টাকা আর একজন প্রার্থীকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছি। ’
আবুল কাশেম বলেন, ‘একটি পত্রিকায় দেখেছি বিএনপি সমর্থিত একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর ছেলেকে মারধোর করা হয়েছে। আমরা তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে চিঠি দিয়েছি কেন তার প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না জানতে চেয়েছি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নোটিসের জবাব দিতে বলেছি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচনের দিন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ’
আবুল কাশেম বলেন, ‘ইভিএমে কারচুপি কোনো সুযোগ নেই। এটি অফলাইন শতভাগ। সুতরাং ইভিএমে কারচুপির প্রশ্নই আসে না। ’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রার্থীরা যেন কারো সঙ্গে যোগাযোগ না করে। কোনো অভিযোগ থাকলে আমাকে বলুন আমরা ব্যবস্থা নেব। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বড় কথা নয় যেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করবে, আমরা তার বিরুদ্ধেই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব। ’
৪৪টি অভিযোগের আটটি মেয়র প্রার্থীর, পাঁচটি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর এবং ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর রয়েছে। এক্ষেত্রে মেয়র প্রার্থীর আটটি অভিযোগ এসেছে বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়ালের পক্ষ থেকে। বাকি অভিযোগের অধিকাংশই বিএনপি সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের।
এদিকে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জেল-জরিমানা করার ক্ষমতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না। তবে ইসি বলছে, মাঠে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটরা নজরদারি করছেন। এছাড়া, যেসব অভিযোগ আসছে তদন্ত সাপেক্ষে সেগুলোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গত কয়েকদিন সরেজমিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, প্রচারে এক ওয়ার্ডে একাধিক মাইকের ব্যবহার, নির্ধারিত সময়ের আগে ও পরে উচ্চ স্বরে মাইকের ব্যবহার, দেয়ালে পোস্টার লাগানো, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহনের শো-ডাউন, মিছিল ও পথসভা করে যানজটের সৃষ্টি করাসহ নানাভাবে আরণবিধি লঙ্ঘন করছেন প্রার্থীরা।
অপরদিকে সিটি নির্বাচনে আচরণবিধি অমান্য করলে প্রার্থী বা তার সমর্থকের সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলসহ নিবন্ধিত দলকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার করারও বিধান করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জেল-জরিমানা করার ক্ষমতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না।
গত রোববারও (২৬ জানুয়ারি) প্রচারণার দেখা গেছে, মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণার সময় দলীয় নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। অনেক সময় এই সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। ফলে যখনই তারা যেখানেই যাচ্ছেন, তার আশপাশের এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী যানবাহন নিয়ে গণসংযোগ করছেন। বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই নিয়মের অতিরিক্ত ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
যদিও আচরণ বিধিতে বলা আছে, মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রতি থানায় একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করতে পারবেন না। আর কাউন্সিলর প্রার্থী ৩০ হাজার ভোটারের জন্য একটি ক্যাম্প এবং সর্বোচ্চ তিনটি ক্যাম্প বা অফিস ব্যবহার করতে পারবেন। বিধির তোয়াক্কা অনেকেই করছেন না।
তবে ভোটের মাঠে একাধিক প্রার্থীরা দাবি করছেন, তারা আচরণবিধি মেনেই প্রচারণা চালাচ্ছেন।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলরের ১৮টি পদে ৭৭ জন ও সাধারণ ৫৪টি ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৫১ জন অর্থাৎ ৩৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এবারের উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ এর সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪, সংরক্ষিত ১৮, মোট ভোট কেন্দ্র ১৩১৮, মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭৮৪৬ অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৫৪টি, মোট ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ জন ও মহিলা ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন রয়েছেন।
বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তি থাকলেও এবারের নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করবে ইসি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২০
এসএমএকে/এজে