প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫৫ কোটি টাকা। স্মার্ট কার্ড উৎপাদন, পারসোনালাইজেশন, উপজেলা পর্যায়ে দেয়ার জন্য কার্ড প্রতি প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬০ টাকা।
অন্যদিকে প্রকল্পের আওতায় ৪০টি দেশে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের জন্য প্রতি দেশে আড়াই কোটি টাকা হারে একশ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রবাসী ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা এবং অপরাধীদের শনাক্তকরণের জন্যই প্রবাসীদের নিবন্ধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
সম্প্রতি প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়র কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ। পিইসির আলোকে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, যাদের বয়স ১৭ বছর, এক বছর পরেই তারা ভোট দিতে পারবেন। যাদের বয়স ১৫ বছর তারা ৩ বছর পরেই ভোট দিতে পারবেন। আর যাদের বয়স ১০ বছর, তারা প্রাপ্তবয়স্ক হলেই ভোট দিতে পারবেন। এই জন্য প্রকল্পটি পিইসি সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ভোটার কার্ড দেয়া হবে। যার বয়স ১৭ সে এক বছর পরেই ভোট দিতে পারবে। যাদের ১০ বছর তাদের তথ্য ও ডাটা নিয়ে কার্ড দেয়া হবে প্রাপ্তবয়স্ক হলেই ভোটার হতে পারবে। আমরা পিইসি সভায় প্রকল্পটি সম্মতি দিয়েছি।
প্রকল্পের আওতায় চারটি পাজেরো জিপ, ১১টি কার, চারটি মাইক্রোবাস (৮ সিট), আটটি মাইক্রোবাস (১২সিট), ১৬ সিটের তিনটি মাইক্রোবাস এবং দুটি ডাবল কেবিন পিকআপসহ ৩২টি যানবাহন আইটসোর্সিংয়ে ভাড়া বাবদ ২৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। কম্পিউটার সফটওয়্যার ও বিবিধ সফটওয়্যার খাতে ৩২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ১ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ ব্যয় বাবদ ৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের অফিস সরঞ্জামাদি যেমন ফটোকপি মেশিন, ফ্যাক্স, ওয়াটার পিউরিফায়ার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, এসি, কালার প্রিন্টার, লেজার প্রিন্টার বাবদ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
আলমারি, চেয়ার, টেবিল, ফাইল কেবিনেট, সেলফ, কনফারেন্স রুম ডেকোরেশন ইত্যাদি খাতে ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
দেশের ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী অপ্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১২ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত জনগোষ্ঠী আগামী ৫ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হবে, যা মূলত প্রকল্পের টার্গেট গ্রুপে প্রতি বছর ৬০ লাখ হারে পাঁচ বছরে তিন কোটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
আর প্রকল্পের জন্য ২২ জন পরামর্শক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আউটসোর্সিং জনবলের জন্য ৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার বিশাল অর্থ ব্যয় করে প্রশিক্ষণ দিতে চাচ্ছে ইসি।
ইসির এনআইডি বিভাগের যুক্তি হলো- জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০ (সংশোধন-২০১৩) অনুযায়ী সব নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের আইন রয়েছে। ভুল সংশোধনসহ গত দুই বছরে ৯৫ লাখ নতুন ভোটার হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয় বিভাজনের তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ২২ জন পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। তিন কোটি ব্লাংক কার্ড ক্রয়, পারসোনালাইজেশন, স্ক্যানিং, প্যাকেজিং ও উপজেলা পর্যায়ে প্রেরণের জন্য ১৬৫ টাকা হিসাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৫ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি স্মার্টকার্ড বিতরণ ও নাগরিকের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহে ব্যয় হবে ১৫ টাকা দরে ৭৫ কোটি টাকা। প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের মোট ৩২টি যানবাহন আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া নেয়ায় ব্যয় হবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
প্রকল্পের আওতায় প্রতি উপজেলা, থানা ও জেলা নির্বাচন অফিসের জন্য ২টি, ১৯৩টি হালনাগাদ টিমের জন্য চারটি, ১০টি আঞ্চলিক অফিসের জন্য পাঁচটি এবং প্রধান কার্যালয়ের জন্য ছয়টি করে মোট দুই হাজার ল্যাপটপ কেনা হবে। একইভাবে দুই হাজার ফিংগার প্রিন্ট স্ক্যানার, দুই হাজার সিগনেচার প্যাড, দুই হাজার আইরিশ স্ক্যানার, দুই হাজার ডিএসএলআর ক্যামেরা, দুই হাজার কারকোড স্ক্যানার ও দুই হাজার স্মার্ট কার্ড রিডার কেনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
এমআইএস/এজে/