ইসির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক পরিপত্র জারি করে সম্প্রতি প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রার্থীর যোগ্যতা:
এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে অব্যশই ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশি হতে হবে।
প্রার্থীর অযোগ্যতা:
নির্বাচনে প্রার্থীর অযোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করলে বা হারালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। এছাড়া কোনো আদালত থেকে অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হলে, প্রজাতন্ত্র বা সিটি করপোরেশন বা কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের লাভজনক পদে সার্বক্ষণিক অধিষ্ঠিত থাকলেও প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হবেন।
এছাড়া আরো বেশ কিছু অযোগ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে ইসি।
ক) সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনে সরকারকে পণ্য সরবরাহ করার জন্য বা কোনো চুক্তি বাস্তবায়ন বা সেবা কার্যক্রমের জন্য বা হিন্দু যৌথ পরিবারের সদস্য হিসেবে কোনো অংশ বা স্বার্থ আছে এমন কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ থাকলে (এ বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে মূল আইন দেখে নিতে হবে)।
খ) প্রার্থীর পরিবারের কোনো সদস্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের কার্য সম্পাদনে বা মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত থাকলে বা এর জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব থাকলে বা সিটি করপোরেশনের কোনো বিষয়ে কোনো প্রকার আর্থিক স্বার্থ থাকলে।
গ) বসবাসের গৃহ-নির্মাণের জন্য কোনো ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ বা তার কোনো কিস্তি পরিশোধে খেলাপি হলে।
ঘ) কোনো কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার যার কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ বা কোনো কিস্তি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখের পূর্ববর্তী এক বছরের মধ্যে পরিশোধে খেলাপি হলে।
ঙ) মনোনয়নপত্র জমাদানের দিনে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত কোনো ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী থাকলে।
চ) সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে গৃহীত কোনো ঋণ বা দায় দেনা অপরিশোধিত থাকলে।
ছ) সিটি করপোরেশন বা সরকার নিয়োগ করা নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনকে নির্ধারিত দায়কৃত অর্থ অপরিশোধিত থাকলে।
জ) জাতীয় সংসদ বা কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্য হলে।
ঞ) সিটি করপোরেশনে তহবিল তসরুফের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আদালত/ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হলে এবং কোনো আদালত ফেরারি আসামি ঘোষণা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।
এছাড়াও সরকারি কর্মচারীর প্রতি ক্ষতির হুমকি দেওয়া (দণ্ডবিধি ধারা ১৮৯), মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি করা (দণ্ডবিধি ধারা ১৯২), কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য উপহার গ্রহণ করা (দণ্ডবিধি ধারা ২১৩), সরকারী কর্মচারীকে তার কর্তব্যে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাপূর্বক আঘাত করা (দণ্ডবিধি ধারা ৩৩২), সরকারি কর্মচারীকে তার কর্তব্য কর্মে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাপূর্বক গুরুতর আঘাত করা (দণ্ডবিধি ধারা ৩৩৩), সরকারি কর্মচারীকে তার কর্তব্য সম্পাদন বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আক্রমণ কিংবা অপরাধজনক বল প্রয়োগ (দণ্ডবিধি ধারা ৩৫৩) করা, এই অপরাধগুলোর যে কোনো একটির কারণে আদালত থেকে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত হলেও কোনো ব্যক্তি সিটি নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারবেন না।
এদিকে আদালত দেউলিয়া ঘোষণা করলে দায় থেকে অব্যাহতি পেলে, কোনো ফৌজদারি বা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং কেবল মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত হলে কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারবেন।
বিদেশি অনুদান বা তহবিল গ্রহণকারী বেসরকারি সংস্থার প্রধান কার্যনির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ বা পদচ্যুত হলে এবং এরপর তিন বছর অতিবাহিত হলেও প্রার্থী হওয়া যাবে। আবার সরকারি বা আধাসরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কোনো সমবায় সমিতি, ইত্যাদি থেকে নৈতিক স্খলন, দুর্নীতি, অসদাচরণ ইত্যাদি অপরাধের জন্য শাস্তিমূলকভাবে চাকরিচ্যুত হলে এবং এরপর পাঁচ বছর কাল অতিক্রান্ত হলেও প্রার্থী হওয়া যাবে।
মনোনয়ন ফরম সংক্রান্ত কিছু তথ্যাবলী:
সিটি করপোরেশনের অন্য কোনো পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে মনোনয়ন ফরম বাতিল হবে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ঘোষণায় অবশ্যই প্রার্থীর স্বাক্ষর থাকতে হবে, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামায় (সংযুক্ত নমুনা অনুযায়ী) স্বাক্ষর করতে হবে। এটি এফিডেভিটরূপে যথাযথভাবে পূরণ করে নোটারি পাবলিক অথবা ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর নিয়ে দাখিল করা আবশ্যক। মনোনয়নপত্র ও হলফনামার সঙ্গে প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের সম্ভাব্য উৎসের ও সম্ভাব্য ব্যয়ের বিবরণী সম্বলিত নির্ধারিত ফরম দাখিল করতে হবে।
যে সব কাগজপত্র বা দলিলালি সংযুক্ত করতে হবে:
যথাযথভাবে পূরণ করা মনোনয়ন ফরম (ফরম নম্বর-ক/ক-১/ক-২), অর্জিত সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি, বর্তমানে কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত আছেন কিনা তার বিবরণ, অতীতে আপনার বিরুদ্ধে দায়ের করা কোনো ফৌজদারি মামলার রেকর্ড আছে কিনা, থাকলে এর রায় কী ছিল তার বিবরণ, ব্যবসা বা পেশার বিবরণী (এটি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে)। এক্ষেত্রে আয়ের উৎস বা উৎসগুলোর বিবরণ, প্রার্থীর নিজের ও অন্য নির্ভরশীলদের সম্পদ ও দায়ের বিবরণী, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে একক বা যৌথভাবে বা প্রার্থীর উপর নির্ভরশীল সদস্য গৃহীত ঋণের পরিমাণ অথবা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হওয়ার সুবাদে ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণের পরিমাণ, জামানত বাবদ নির্ধারিত অর্থ জমাদানের চালান/ব্যাংক ড্রাফটের কপি, নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহ করার জন্য অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎস ও সম্ভাব্য ব্যয়ের বিবরণীও দিতে হবে। আবার নিজের ও নির্ভরশীলদের সম্পদের বিবরণী, ঋণ সংক্রান্ত তথ্যাদি, আয়কর রিটার্নের কপি ও আইটি-১০ই (সম্পদের বিবরণী), আয়কর পরিশোধের প্রমাণপত্র (আয়কর বিভাগ প্রদত্ত রসিদ) ও ১২ ডিজিটের টিআইএন সনদের কপিও বাধ্যতামূলকভাবেই জমা দিতে হবে।
এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার)। মনোনয়নপত্র বাছাই ১ মার্চ, আপিল ২ থেকে ৪ মার্চ, প্রার্থীতা প্রত্যাহার ৮ মার্চ, প্রতীক বরাদ্দ হবে ৯ মার্চ। আর ভোটগ্রহণ হবে অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মার্চ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০
ইইউডি/এএ