ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরেও নির্বাচন হয়নি

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২০
পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরেও নির্বাচন হয়নি আজমিরীগঞ্জ পৌরসভা, ছবি: বাংলানিউজ

হবিগঞ্জ: আইনি জটিলতায় প্রতিষ্ঠার পর একবারও নির্বাচন হয়নি হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ পৌরসভায়। ১৪ বছর ধরে প্রশাসকের পদে রয়েছেন একই ব্যক্তি।

যে কারণে গণতান্ত্রিক অধিকার বঞ্চিত ১৩ সহস্রাধিক মানুষ।

সঠিকভাবে হচ্ছে না উন্নয়ন কাজ। অগ্রগতি নেই নাগরিক জীবনের। ঐতিহ্য হারাচ্ছে এক সময়ের জমজমাট আজমিরীগঞ্জ বাজারও। শিগগিরই এখানে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ জানুয়ারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সদরকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তখন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। একই বছরের ডিসেম্বরে প্রশাসক পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতা গোলাম ফারুক। এরপর শুরু হয় ওয়ার্ড বিভক্তিকরণ কার্যক্রম। তবে উপজেলা সদরের নোয়াগাঁও, ফতেহপুর ও শুক্রবাড়ি গ্রাম পৌরসভাটি থেকে বাদ পড়ে।

ওই তিন গ্রাম পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করেন তৌহিদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওয়ার্ড বিভক্তিকরণ কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন আদালত। যে কারণে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন হয়নি।

এক সময় ভাটি অঞ্চলে বাণিজ্যের কেন্দ্র বিন্দু ছিল আজমিরীগঞ্জ বাজার। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ব্যবসা কর আসতেন লোকজন। ছিল ব্যাপক সম্ভবনা। সঠিক উন্নয়ন কার্যক্রমের অভাবে বাজারটি আজ নিরব। ধস নেমেছে বাণিজ্যে। পৌরসভার কার্যক্রম তরান্বিত হলে এ বাজারকে ঘিরে এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতে পারত বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারা।

ওয়ারিশ মিয়া নামে এক ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, হবিগঞ্জ জেলায় পৌরসভার সংখ্যা পাঁচটি। এর মধ্যে চারটি পুরোপুরিভাবেই শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কিন্তু আজমিরীগঞ্জ পৌরসভায় তেমন উন্নয়ন কাজ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। রাস্তাঘাটও ভাঙা। পৌর ভবনটিরও জরাজীর্ণ অবস্থা। কুশিয়ারা নদীকে ঘিরে রয়েছে সম্ভাবনাময় স্থলবন্দর। যার কোনো উন্নয়নই হয়নি। যে কারণে নৌ যোগাযোগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঐতিহ্যবাহী আজমিরীগঞ্জ বাজারও এখন সারা বছর নিরব থাকে। পৌরসভার কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলে বাজারটি ঐতিহ্য ফিরে পেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সবুজ মিয়া নামে একজন বলেন, এক সময় ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখোর থাকত আজমিরীগঞ্জ বাজার। সপ্তাহে দু’টি হাট বসত। সেখানে ভিড় করতেন লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু এখন বছরে একদিনও বাজার এমন জমজমাট হয় না। ভাটি অঞ্চলের বাণিজ্যিক এ বাজারটি আজ ধ্বংসের পথে। এ ব্যাপারে পৌরসভার কার্যক্রমকে তরান্বিত করা প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মানুযায়ী নির্বাচন হলে জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা থাকত। এমনটা হলে বাড়ত দায়িত্বশীলতাও। কিন্তু ১৪ বছর ধরে একজনই পৌরসভার প্রশাসক থাকায় তেমন উন্নয়ন হচ্ছে না। এজন্য শীঘ্রই নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ ভবনে দীর্ঘদীনের পুরনো একটি সাইনবোর্ড সাঁটানো আজমিরীগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ে। গাড়িগুলোও অব্যবহৃত থাকার কারণে অকেজো প্রায়। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভবনের ভেতরে পানি পড়ে বলে জানিয়েছেন আশপাশের বাসিন্দারা।  

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আজমিরীঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক গোলাম ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, উন্নয়ন কাজ সঠিকভাবেই পরিচালিত হচ্ছে। তবে নাগরিকরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  

নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন কি না জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. নূরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আদালতে মামলা জনিত কারণে নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের তেমন কিছু করার নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।