গাইবান্ধা: নবগঠিত পলাশবাড়ী পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে পৌরবাসীর আগ্রহের শেষ নেই। চায়ের স্টল থেকে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরসহ স্যোশাল মিডিয়ায় আলোচনা-বিচার-বিশ্নেষণ একটাই- কে হচ্ছেন পলাশবাড়ী পৌরপিতা, কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি।
কারণ জাতীয় পার্টি (জাপা) ও বিএনপির একজন প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছয়জন। আগামী ১০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে উন্মুখ হয়ে আছেন সীমানা জলিলতায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষগুলো। জাপা ও বিএনপির একক প্রার্থী হলেও কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি- এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর প্রশাসক আবু বক্কর প্রধান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উপধাক্ষ্য সামিকুল ইসলাম লিপন, সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাদশা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার বিপ্লব, জাহাঙ্গীর আলম বাবু ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগ সদস্য আব্দুল্লাহেল কাফি মণ্ডল। বিএনপির প্রার্থী গাইবান্ধার বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ও জাপার একক প্রার্থী মজিবুর রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সীমানা জটিলতার কারণে পলাশবাড়ী, বরিশাল, কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের দুই যুগের ও বেশি সময় ধরে নির্বাচন বন্ধ থাকে। ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু বক্কর প্রধানকে আহ্বায়ক ও গোলাম সরোয়ার প্রধান বিপ্লবকে প্রধান সমন্বয়কারী করে গঠন করা হয় ভোটাধিকার বাস্তবায়ন কমিটি।
জনগণের আন্দোলনের মুখে ও আইন জটিলতা কাটিয়ে ওই তিন ইউনিয়নের ২৪টি গ্রাম নিয়ে পলাশবাড়ী পৌরসভা বাস্তবায়িত হয়। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু বকর প্রধান।
গত ০৩ নভেম্বর পলাশবাড়ী পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৫ নভেম্বর ২০২০। মনোনয়ন যাচাই-বাচাইয়ের শেষ দিন ১৭ নভেম্বর, প্রার্থী প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৩ নভেম্বর, ভোটগ্রহণ ১০ ডিসেম্বর।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয়ভাবে পলাশবাড়ী পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের জন্য তিন জনের নাম চাওয়া হয়। স্থানীয় দলীয় সিদ্ধান্তে ছয় জনের নাম পাঠানো হয়। এর মধ্যে এক নম্বরে আছেন আবু বকর প্রধান। তার আছে দীর্ঘ ৫০ বছরের বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতির হাতেখড়ি আবু বকর প্রধানের। এরপর থেকে শত প্রতিকূলতায়ও কখনো দল ছেড়ে যাননি। ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগ, তারপর ১৯৮২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত তিনি। বর্তমানে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর পৌর প্রশাসক ও উপজেলার আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্বে আছেন তিনি। ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের হামলায় অঙ্গহানি হয় তার। মনোনয়ন প্রত্যাশার পাশাপাশি তিনি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তালিকার দ্বিতীয় নম্বরে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ শামিকুল ইসলাম লিপন। তারও আছে ক্লিন ইমেজের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের আদর্শ বুকে লালন করে তিনি দলীয় নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
তালিকার তৃতীয় নম্বরে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার প্রধান বিপ্লব। মূলত তার উদ্যোগেই শুরু হয় ভোটাধিকার ফেরানো ও পৌরসভা বাস্তবায়ন আন্দোলন। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সাকোয়াতজ্জামান বাবু পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণার পর গোলাম সরোয়ার প্রধান বিপ্লবের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়ে ভস্মিভূত করা হয়। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী অপর তিন প্রার্থীরও রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন।
সরেজমিন ঘুরে সর্বস্তরের মানুষ-ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগ্রহীদের মধ্যে নৌকার মাঝি যেই নির্বাচিত হোক, পলাশবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। ভোটারদের দাবি পলাশবাড়ী পৌর নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিলুপ্ত ৩ নম্বর পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দীর্ঘ মেয়াদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ইসলামের সঙ্গে। তিনি সারা জীবন জাপার রাজনৈতিক সঙ্গে জড়িত থাকলেও
গেল সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এছাড়া নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে বিএনপি প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ থাকবেন বলে দাবি তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২০
এসআরএস