ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

চরিত্রে ‘দাগ’ থাকলে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ নয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
চরিত্রে ‘দাগ’ থাকলে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ নয়

ঢাকা: কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রকার অভিযোগ থাকে, তাকে বিবেচনা করার দরকার নেই। চরিত্রে দাগ থাকলে তাকে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

দেশে লোকের অভাব নেই।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য যে আইনটি করতে যাচ্ছে, এটি নিয়ে সংসদে আরও  আলোচনার দরকার ছিল। এটা আরও স্বচ্ছ, সুন্দর করা উচিত।

আইনে যে সার্চ কমিটি আছে, এতে সাবেক সিইসিকে রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন শামসুল হুদা। কেননা, পাঁচ বছর কাজ করে সাবেক সিইসির একটি অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। এছাড়াও মহা হিসাব নিয়ন্ত্রকসহ আমলাদের রাখার কথাও বলেন তিনি।

শামসুল হুদা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের রাখা হলে তারা কিভাবে দল-মত ঊর্ধ্বে ওঠে কাজ করবে? ওখানে কোনো মহাপুরুষ খুঁজে পাবেন না।

তিনি বলেন, একটা আইন হচ্ছে এটা নিয়ে এত অবিশ্বাস থাকলে মুশকিল। আইন হচ্ছে, ভাল হবে―এই বিশ্বাস রাখতে হবে। দেশে কোনও আইন না থাকার পরও অতীতে ভাল কমিশন হয়েছে। আবু সাঈদ, আবু হেনা কমিশন ভাল করেছে। যদিও মাঝে একটু সমস্যা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কমিশন সবদিক থেকে সহায়তা না পেলে সম্ভব নয়। কাজেই কোনো আইন না থাকার পরও তারা ভাল করেছে।

শামসুল হুদা আরও বলেন, সার্চ কমিটির সুপারিশ করা নামগুলো প্রকাশ করা উচিত। এতে মানুষের মতামত পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে সেটি নেই। নাম প্রকাশ করলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে তাকে বিবেচনার দরকার নেই। দেশে লোকের অভাব নেই। অনেক ভাল লোক আছে। চরিত্রে কোনও ধরনের দাগ থাকলে কারও নাম আসতে পারবে না।

তার সময়ের নির্বাচন কমিশনার ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সার্চ কমিটি বা ইসি নিয়োগ রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে হওয়া উচিত। অন্যথায় যে কমিশন গঠন করা হবে তা হবে বিতর্কিত। ড. শামসুল হুদা কমিশনের পর যে কমিশন গঠন হয়েছে, সবগুলো বিতর্কিত হয়েছে। ভবিষ্যতেও বিতর্কিত হবে।

তিনি বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে বলেন, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তানের আইনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রাখা হয়েছে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোতেও রাখা হয়েছে। ভারতেও এমন আইন করার আলোচনা চলছে। সার্চ কমিটি যে নামগুলো সুপারিশ করবে তা প্রকাশ করে মতামত নেওয়ার পক্ষে মতামত দেন ড. সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে পাঁচ থেকে ছয় লাখ আমলা এবং পাঁচ থেকে ছয় লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যের প্রয়োজন পড়ে। কাজেই নির্বাচন কমিশনে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। কেননা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ছাড়া এত বড় আয়োজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ইসি গঠনের জন্য প্রস্তাবিত আইনটি সরকারের ইচ্ছাপূরণের আইন হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া যেভাবেই ইসি গঠন হোক না কেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। কেননা, গত ১৩-১৪ বছরে সব পর্যায়ে যে দলীয় কাঠামো গড়ে তুলেছে এতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইসি নিয়োগে রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপনকে আইনি মোড়কে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আলাদা কিছু নেই। এটা কোনোভাবেই অনুসন্ধান নয়। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যে যোগ্যতা-অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে, এমন লোক হাজার হাজার আছে।

এ সময় তিনি সার্চ কমিটিতে তিনটি দলের তিনজন প্রতিনিধি, নারী প্রতিনিধি, সুপারিশকৃতদের নাম প্রকাশ, মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, বিধিমালা প্রণয়ন ইত্যাদি সুপারিশ করেন।

‘প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন, জনআকাঙ্খা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি আয়োজন করে সুজন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহানের সঞ্চালনায় এতে অন্যদের মধ্যে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ড. আলিম প্রমুখ অংশ নিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
ইইউডি/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।