হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের বাহুবল ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ইভিএমে স্বল্প সময়ে স্বস্তিতে ভোট দিয়ে বেশিরভাগ ভোটার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও কিছু বয়স্ক ভোটার ‘বিপত্তির’ কথাও বলেছেন।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুই উপজেলার ৮৫টি কেন্দ্রে ৪৬৭টি বুথে এবারই প্রথম একযোগে ইভিএমে ভোট হচ্ছে।
সকালে বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল। এ ইউনিয়নের কামাইছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মনোনিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী কামরুজ্জামান ইভিএমে ভোট দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে পুটিজুরী ইউনিয়নের একটি বুথে ইভিএমে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ভোটে ধীরগতির খবরও পাওয়া গেছে।
সকালে আট নম্বর শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন কয়েকজন চেয়ারম্যান ও সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী। এ সময় তারা কোথাও কোথাও ভোট প্রয়োগে ধীর গতি দেখে গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, ‘ইভিএম জটিলতার কারণে এমনটি হচ্ছে’।
তবে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএম নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অনেকের বুঝতে অসুবিধা হলে তাদেরকে প্রশ্ন করছেন, সমাধানও হয়েছে। ভোট হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে।
পশ্চিম বড়চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কনিক চন্দ্র সমীর জানান, এ কেন্দ্রের দু’টি বুথে সকাল সোয়া ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১০০টি। তবে যত সময় যাচ্ছে ভোটের গতি বাড়ছে।
বুথে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলেন, ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে অনেক সময় নিয়ে নিচ্ছেন। আমরা বাইরে থেকে বলে দেওয়ার পরেও তারা বুঝতে পারছেন না। আবার অনেকে আছেন এক মিনিটের মধ্যে ভোট কাস্ট করে চলে যাচ্ছেন।
কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন সোহানা আক্তার। তিনি দুই দফায় চেষ্টা করেও ভোট দিতে পারেননি। কারণ তার আঙুলের ছাপ মিলছিল না। এই প্রক্রিয়ায় কেটে যায় ২০ মিনিট। পরে নির্বাচন কমিশনের অপারেটর এসে সোহানার ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
সকালে ভোট শুরুর পর এই কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে নিজের পছন্দের প্রতীক খুঁজে পাচ্ছিলেন না এক নারী। পরে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিজে কালো কাপড়ে ঘেরা ঘরে ঢুকে তাকে প্রতীক খুঁজে পেতে সহযোগিতা করেন। অবশ্য অধিকাংশ ভোটারকে দেখা গেছে সহজেই ইভিএমে ভোট দিয়ে বেড়িয়ে যেতে।
মড়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান সোহেল বলেন, আঙুলের ছাপ না মিললে শতকরা এক শতাংশ ভোটারের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থায় ভোট গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু আমার বুথে অধিকাংশই বয়স্ক ভোটার। অনেকরই আঙুলের ছাপ মিলছে না। এ কারণে ভোটগ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে।
এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বলেন, সকাল সোয়া ১২টা পর্যন্ত ভোট দেওয়া হয়েছে ৩১০টি। এ কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ১৪০টি। আমার কেন্দ্রে যেভাবে ভোট পড়ছে তাতে আমি সন্তুষ্ট।
কেউ যদি নিজের মতো প্রতীক পছন্দ করে ভোট দিতে না পারেন তাহলে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত অন্য কারো সহযোগিতা নেওয়ার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে তিনি হয়ত আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতা নিতে পারেন।
কেন্দ্রটিতে নিজের ভোট দিয়ে উচ্ছ্বসিত হাবিবা আক্তার বলেন, ইভিএমে আগে ভোট দিইনি, এবার দিলাম। ভোট দিয়ে খুবই ভালো লাগল। শান্ত পরিবেশে ভোট হচ্ছে।
জবেদা খাতুন নামে আরেকজন বলেন, তিনি প্রায় ২০ মিনিট চেষ্টার পরও আঙুলের রেখা না মেলায় ভোট দিতে পারেননি। এজন্য ফিরে গেছেন।
হবিগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ইভিএম ভোট দিতে যেন বিপত্তি না বাধে সেজন্য ভোটের একদিন আগে মক (প্রশিক্ষণ) ভোট নেওয়া হয়েছে। আশা করি মানুষদের মধ্যে ভোট গ্রহণে মেশিনের ব্যবহারের সংকোচ কমেছে। এছাড়া কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচন কমিশনের কারিগরি দল রয়েছে। সমস্যা হলে তারা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করে দিচ্ছেন।
নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাহুবল উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬০ জন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৬৮ প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪০, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য ১০২ ও সাধারণ ওয়ার্ড সদস্যের পদে ৩২৬ জন।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার আট নম্বর শায়েস্তাগঞ্জে ৯ হাজার ৮৮২ জন ভোটার। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৪৭ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য ৮ ও সাধারণ ওয়ার্ড সদস্যের পদে ৩৪ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
এসআইএস