ঢাকা: ভোট ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহারের অন্যতম নিদর্শন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। কিন্তু এ যন্ত্রে ভোট দেওয়ার সবচেয়ে বড় ও অন্যতম সমস্যা হচ্ছে আঙুলের ছাপ না মেলা।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনেও অন্যান্য নির্বাচনের মতো অনেক ভোটার এ সমস্যার কারণে ফিরে গেছেন কেন্দ্র থেকে। সেই অভিযোগ ফলাও করে প্রচার করেছে গণমাধ্যমে। ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে জানা গেছে, আঙুলের ছাপ যাদের মিলছে না তাদের বেশির ভাগই প্রবীণ। আর একজন ভোটারের ছাপ মেলাতে গিয়ে যে সময় ক্ষেপণ করতে হচ্ছে, তাতে ভোটকেন্দ্রের বাইরে দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হয়। ফলে অনেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে চলেও যান। এতে একদিকে যেমন ভোট পড়ার হার কমে যায়, অন্যদিকে ভোটের অধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হন অনেকে।
তবে এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যাও রয়েছে। কমিশন বলছে, কয়েকটি কারণে আঙুলের ছাপ না মিলতে পারে। যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি, শক্ত বা ভারী কাজ করেন যারা কিংবা যাদের আঙুলের ছাপ মুছে যাওয়া রোগ (অ্যাডার্মাটো লাইফিয়া) আছে- এ ধরনের ব্যক্তিদের আঙুলের ছাপ মেলে না। আর আঙুলের ছাপ মুছে যাওয়ার কারণেই কেবল ভোটগ্রহণের গতি কমে যায়, তা মানতে চান না কমিশন। সংস্থাটির মতে, মক ভোটিংয়ের সময় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের ভোট দেওয়া পদ্ধতি শেখানো হয়, সে সময় অনেক ভোটারই কেন্দ্রে আসেন না। ফলে তারা যখন ভোট দিতে যান, সেখানে সবকিছু বুঝতে সময় নেন বেশি।
ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে আঙুলের ছাপ না মেলার সমস্যা নিয়ে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, যাদের আঙুলের ছাপ আছে, তাদেরটা না মেলার কোনো কারণ নেই। যাদেরটা কোনো রোগে বা ভারী কাজ করার কারণে বা বয়সের কারণে আংশিক মুছে যায়, তাদের ছাপ নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় নিয়েই ভোট নেওয়া হয়। আর যাদের ছাপ একেবারেই মেলে না, তাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে যার আঙুলের ছাপ একেবারেই না মেলে বা মুছে যায়, তাদের ব্যালট পেপার ওপেন করার জন্য প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দেওয়া আছে। কাজেই যারা কেন্দ্রে আসবেন, তারা সবাই ভোট দিতে পারবেন।
ইভিএমে অনেক কেন্দ্রে ভোট দিতে বেশি সময় লেগে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নতুন প্রযুক্তি। অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে ভোটারদের। এজন্য তাদের মক ভোটিং করা হয় ভোটের আগে। সে সময় অনেক ভোটার মক ভোট দিতে আসেন না। এ ধরনের ভোটাররাই পরবর্তীতে নির্বাচনের দিন ভোট দিতে সময় বেশি ব্যয় করেন।
এ পর্যন্ত ইভিএমে যত নির্বাচনে হয়েছে, তার বেশির ভাগ নির্বাচনেই ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশের নিচে। সামগ্রিকভাবে হিসেব করলে ভোট পড়ার হারের দিক থেকে ইভিএমের চেয়ে কাগজে ব্যালট পেপার অনেক এগিয়ে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, কেবল আঙুলের ছাপ মুছে যাওয়াজনিত সমস্যা নয়, অনেক সময় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাও ঠিকমতো প্রশিক্ষণ না নেওয়ার কারণেও এ সমস্যা হয়। আবার অনেক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিজেই ভালো করে বোঝেন না। যে কারণে ওই ধরনের কর্মকর্তারা ভোটের দিন ভোট নিতে কিছুটা পিছিয়ে থাকেন।
২০১১ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ চালু করে। সে সময় তারা বুয়েটের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকায় মেশিন তৈরি করে নেয়। কিন্তু সেই মেশিনে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিকল হয়ে পড়ে। ফলে বুয়েটের কাজ থেকে নেওয়া সব মেশিন বাদ দিয়ে নতুন করে আরও উন্নতমানের ইভিএম প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেয় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন। আর সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই কেএম নূরুল হুদার বর্তমান কমিশন ২ লাখ টাকা দামের অধিক উন্নত মেশিন বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাজ থেকে তৈরি করে নিয়েছে।
বর্তমানে ইসির কাছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। বর্তমানে ইভিএমের দু’টি ইউনিট। একটি কন্ট্রোল ইউনিট। আরেকটি ব্যালট ইউনিট। কন্ট্রোল ইউনিটে আঙুলের ছাপ মিললেই ব্যালট ইউনিটে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ব্যালট পেপার ওপেন হয়। তারপর সেখানে পছন্দের প্রতীকে পাশে রাখা বোতামে চাপ দিয়ে ভোট দেওয়া সম্পন্ন করা হয়।
যাদের আঙুলের ছাপ মেলে না, এমন ভোটারদের জন্য (একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক) প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিজের ক্ষমতা বলে ব্যালট ইউনিট ওপেন করে দিতে পারেন। সেই ক্ষমতা সিইসি নিজে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে দেন। বর্তমান ইভিএম বাইরে থেকে কোনো প্রকার ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত করা যায় না। এর সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ করাও যায় না। তাই এ যন্ত্রটি হ্যাক করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।
বাংলাদেশে সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
ইইউডি/আরবি