ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে গিয়ে হেরে গেলাম: মাহবুব তালুকদার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে গিয়ে হেরে গেলাম: মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার

ঢাকা: গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে গিয়ে হেরে গিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে অংশ না নিয়ে পৃথকভাবে সাংবাদিকদের ডেকে এ মন্তব্য করেন তিনি।

মাহবুব তালুকদারও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় নাই এবং গণতন্ত্র সমুন্নত নয়। যারা যেভাবেই বলেন না কেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে মানবিকতা, ভোটের অধিকার, মানবাধিকারের সম্পর্ক। এজন্য আমি বলি—গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে আমাদের জনজীবনে, জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পাঁচজনের একজন, পাঁচ আঙুলের এক আঙুল। কিন্তু আমি নিশ্চিত না, পাঁচ আঙুলের কোন আঙুল। একজনের পক্ষে কিছুই করা যায় না। আমি গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে গিয়ে গণতান্ত্রিকভাবেই সংখ্যালঘু হিসেবে আমি হেরে গেলাম।

নির্বাচন কমিশনের বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে না যাওয়া প্রসঙ্গে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘...তারপরে এমন হয়েছে, বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কমিশন বৈঠকে কথা বলতে গিয়েছি, সেই বৈঠকে আমাকে বক্তব্যটা রাখতে দেওয়া হয়নি। আমাকে বলা হলো, এগুলো সংবিধানবিরোধী। আরে সংবিধানই আমাকে শক্তি দিয়েছে, ভাবপ্রকাশের এবং মতামত প্রকাশের। যেই সংবিধান রক্ষা করার আমি শপথ নিয়েছি, প্রতিনিয়ত চিন্তা করেছি সেই সংবিধান রক্ষা করার।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ কোনো কারণ নাই। কারণ এইটাই, আমি মুক্তভাবে কথা বলতে পারবো না। এই কথাগুলো ওইখানে মানানসই হতো না।

এর আগে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, এটাই আমার সবশেষ প্রেস ব্রিফিং। একজন সাংবাদিক মানবাধিকার সম্পর্কে অভিমত জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে কথা বলা অমূলক। মানবাধিকার নেই, মানবিক মর্যাদা নেই—গণতন্ত্র না থাকলে এসব থাকে না। বিশ্বে সম্মানজনক রাষ্ট্র হিসেবে আসীন হতে হলে গণতন্ত্রের শর্তসমূহ অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা থেকে এর উৎপত্তি। বর্তমান অবস্থায় উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আইন প্রণেতারা আইন প্রণয়নের চেয়ে উন্নয়নেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু উন্নয়ন কখনও গণতন্ত্রের বিকল্প ব্যবস্থা নয়।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, ওই নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের লাশ পড়ে আছে। এই লাশ সৎকারের দায়িত্ব কে নেবে? কথাটা রূপকার্থে বলা হলেও এটাই সত্য।

মাহবুব তালুকদার বলেন, রাজনীতি ধীরে ধীরে ব্যবসায়ীদের করতলগত হয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, আইন প্রণেতারা ভবিষ্যতে আইন-ব্যবসায়ী হয়ে যাবেন না তো? অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বাধাবিঘ্নগুলো দূর করতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য সংবিধান ও বিধিবিধানের পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। বসন্তের প্রথম দিনে ও ভালোবাসা দিবসে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।

আরও পড়ুন:
বিএনপির কী সুর আমি জানি না: মাহবুব তালুকদার

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।