ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন নিয়ে ভোগান্তি কমাতে এবার গণশুনানির উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ কার্যক্রম অঞ্চলভিত্তিক পরিচালনা করা হবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সারাদেশে কয়েক লাখ আবেদন ঝুলে আছে। সাধারণ সেবাগ্রহীতারা দিনের পর দিন মাঠ কার্যালয়গুলোতে ঘুরে কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না। এছাড়া বারবার তাগাদা দিলেও কাজ এগুচ্ছে না। ফলে ভোগান্তির যেন অন্ত নেই।
কেবল এনআইডি সংশোধন বা ভোটার এলাকা স্থানান্তর নয়, নতুন ভোটার হতে এসেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে নাগরিকদের। ১১ লাখেরও বেশি এমন আবেদন পড়ে রয়েছে বর্তমানে কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে। অবশ্য কেবল কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে এমন হচ্ছে, তা নয়। অনেক সময় সেবাগ্রহীতারাও তথ্য বা প্রমাণাদি যথাযথভাবে দাখিল না করায় বা সাড়া না দেওয়ার কারণেও এমনটি হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, গত প্রায় দেড় বছর ধরে টানা পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণেই মূলত এত বেশি জটের সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, নির্বাচনের সময় এনআইডি সংশোধন ও স্থানান্তর কার্যক্রম স্থগিত রাখার বিধান রয়েছে। আবার নির্বাচনের কাজের চাপে টেবিল ওয়ার্কগুলো করার সময় ছিল না।
এমন যৌক্তিক যুক্তি বেশির ভাগ মাঠ কর্মকর্তারা উপস্থাপন করলেও একটি পথ খুঁজে বের করেছেন সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফয়সাল কাদের। নির্বাচনী কাজের চাপে যখন হাজার হাজার আবেদন জমা পড়েছে, তখন তিনি ভেবেছেন যদি সবাইকে একদিন ডেকে এনে ওয়ানস্টপ সার্ভিস দেওয়া যায়, তবে ভালো হয়। সে অনুযায়ী, তিনি তার এলাকায় মাইকিং করে সেবাগ্রহীতাদের ডেকে এনে সপ্তাহের অন্তত একটি দিন এই সেবা দেওয়ার কথা ভাবেন। আর এই কার্যক্রমটিতে ব্যাপক সাড়াও পড়ে। নির্বাচন কমিশনও বিষয়টি লুফে নেয়। ফলে সারাদেশেই এখন এই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে।
ফয়সাল কাদের বলেন, গণশুনানির দিন যার যা প্রমাণাদি আছে, তাই নিয়েই আসতে বলা হয়। এতে যদি অর্ধেক কাগজপত্র ঠিক থাকে এবং আমাদের কাজে কেসটি প্রকৃত মনে হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আবেদন আমলে নিয়ে সংশোধন করে দিই। আর যদি সঠিক বলে বিবেচিত না হয় এবং তথ্য-প্রমাণে বিরাট ঘাটতি থাকে, তবে সেটিও নিষ্পত্তি করে দেই। এ ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে সেবাগ্রহীতার মোবাইলে মেসেজ চলে যায় যে, তার চাহিত তথ্য সংশোধন হলো কি হলো না।
অন্যদিকে নতুন ভোটার যারা অনলাইনে আবেদন করেছেন, তারা যদি প্রিন্ট কপির সঙ্গে অন্যান্য প্রমাণপত্র নিয়ে আসেন, সে ক্ষেত্রে তাকেও ভোটার করে নিয়ে এনআইডির অনলাইন কপি দিয়ে দেওয়া হয়।
এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর বিষয়টিকে উদ্ভাবনী কার্যক্রম হিসেবে আখ্যা দেন। গত কয়েক মাস ধরেই মাঠ কর্মকর্তাদের ঝুলে থাকা আবেদনগুলো নিষ্পত্তির জন্য বারবার তাগাদা দিয়েও যখন তিনি সাড়া পাচ্ছিলেন না, তখন গণশুনানির বিষয়টিকে মোক্ষম হাতিয়ার বলে মনে করছেন তিনি।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারকে অবহিত করা হলে তিনিও একমত পোষণ করেন। এমনকি মাঠ কর্মকর্তাদের গণশুনানিসহ এমন আরও উদ্ভাবনী কার্যক্রম নিতে নির্দেশনা দেন তিনি। বিষয়টির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে সব আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ