ঢাকা: কথায় আছে—ভাবিয়া করিও কাজ, করিও ভাবিও না। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প নেওয়ার আগে না ভাবায় এমনই লেজেগোবরে অবস্থায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
একটু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের পূর্বেই ২০১৮ সালে ৮০ হাজার ইভিএম বাকিতে কেনে ইসি। উদ্দেশ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা। এজন্য নেওয়া হয় প্রায় চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে মোট এক লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে কেনা হয়।
জানা গেছে, প্রথম দিকে এগুলো নির্বাচন ভবনের বেজমেন্টে রাখা হতো। কিন্তু সমস্যা হয় নির্বাচনের সময় প্রান্তিক পর্যায়ে মেশিন পাঠানো নিয়ে। কেননা, এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। এরপর সিদ্ধান্ত হয় মাঠ কার্যালয়গুলোতে ইভিএম রাখার। কিন্তু কোনো মাঠ কার্যালয়ে ইভিএম রাখার মতো পর্যাপ্ত কক্ষ নেই। এছাড়া ইভিএম রাখার জন্য যে অবকাঠামো প্রয়োজন, তাও নেই।
বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহার করা ৯৫ হাজার ইভিএম বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রগুলোতে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে স্কুলগুলোতে এখনো ইভিএম রয়েছে। মাঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বারবার তাগাদা দিচ্ছে মেশিনগুলো সরিয়ে নিতে। কিন্তু তাদের এসব মেশিন রাখার জায়গা নেই।
এ অবস্থায় প্রথমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল মাঠ কার্যালয়গুলো উলম্বভাবে বাড়ানোর। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে—আঞ্চলিক, জেলা বা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়গুলোর যে নকশা, তাতে এগুলো উপরের দিকে আর বাড়ানো যাবে না।
এরপর সিদ্ধান্ত হয় ভবন ভাড়া নেওয়ার। কিন্তু সে সিদ্ধান্তেও কোনো কূল-কিনারা মিলছে না। কেননা, ইভিএম রাখার জন্য প্রতি উপজেলায় পাঁচ হাজার বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু এই পরিমাণ জায়গা একই ভবনে মিলছে না। আর মিললেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাল নয় বা ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আর ভাড়া পাওয়া গেলেও দেখা যাচ্ছে তা বাজেটের চেয়ে বেশি।
ইসির প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. কামাল উদ্দীন বিশ্বাস জানান, ইভিএম সংরক্ষণের জন্য সব আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জায়গাসহ অবকাঠামো/ফ্ল্যাট/বাড়ি, ইভিএম ধারণ ক্ষমতা, ভাড়ার পরিমাণ ইত্যাদি সংক্রান্ত প্রস্তাব ইসি সচিবালয়ে প্রেরণ করেছেন। প্রস্তাবসমূহ গঠিত কমিটি কর্তৃক যাচাইয়ের পর ১৪টি জেলার ভাড়ার পরিমাণ গণপূর্তের নির্ধারিত হারের চেয়ে কম পাওয়া গেছে। এতে মাসিক ব্যয় হবে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ৫০টি জেলার প্রস্তাবিত ভাড়া গণপূর্তের নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি। বর্তমানে এ খাতে ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সব জেলায় ইভিএম সংরক্ষণের জন্য জায়গাসহ অবকাঠামো/ফ্ল্যাট/বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন।
এ অবস্থায় ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহের সার-সংক্ষেপ প্রস্তুত করে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বর্তমানে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। শিগগিরই কমিশনের কাছে এ সংক্রান্ত নথি উপস্থাপন করা হবে।
এক্ষেত্রে ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আপাতত দুই বছরের চুক্তি করা হতে পারে সংশ্লিষ্ট বাড়ি/ফ্ল্যাট মালিকদের সঙ্গে। আর এতে ব্যয় হবে কোটি টাকার মতো।
আরো পড়ুন:
৪ হাজার কোটি টাকার ইভিএম, জায়গা নেই সংরক্ষণের
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
ইইউডি/এনএসআর