ঢাকা: জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের ক্ষেত্রে এবার ১৯৯৬ সালের আগের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ যাচাই করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে এনআইডি সংশোধনে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রবণতা যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি কমবে দুর্নীতির প্রবণতাও।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে এনআইডি সংশোধনের ক্ষেত্রে ১৯৯৬ সাল থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ সংশ্লিষ্ট বোর্ড থেকে যাচাই করা হয়। তার আগে যারা পাস করেছেন তাদের সনদ যাচাইয়ে ইসির কাছে কোনো মাধ্যম নেই। তাই আগের সনদগুলো যাচাই না করেই কারো নামের বানান, জন্ম তারিখ বা অন্যান্য তথ্য সংশোধন করে দেয়। এতে অনেকেই ভুয়া সনদ এনেও জমা দিচ্ছে কিনা, তা বোঝার উপায় নেই। তাই সব শিক্ষাবোর্ডকেই এজন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলবে ইসি।
কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে যে কোনো ব্যক্তির এসএসসি বা সমমান পাসের সনদে উল্লেখিত রোল নম্বর দিয়ে সংশ্লিষ্ট বোর্ড বা কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট থেকে সনদ যাচাই করে নেয় ইসি। তবে ১৯৯৬ সালের আগে যারা পাস করেছেন, তাদের তথ্য অনলাইনে নেই। তাই সেই সব ব্যক্তির সনদ যাচাই করা যায় না। এক্ষেত্রে ১৯৯৬ সালের আগের সনদ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যাচাইয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে।
তবে অনলাইনের পরিবর্তে অফলাইনেও যাচাই করা যায়। সেটা সময়সাপেক্ষ বিধায় ওই পথ মাড়াতো চায় না ইসি। কেননা, এতে নাগরিক সেবা আরও বিলম্বিত হবে। এমনিতেই যে ধরনের সংশোধনের ক্ষেত্রে এক মাস থেকে শুরু করে কয়েক বছর লোগে যায়।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভাতেও বিষয়টি আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এতে আঞ্চলিক কর্মকর্তারা ১৯৯৬ সালের আগের সনদ যাচাইয়ের ব্যবস্থা নিতে শিক্ষাবোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনার সুপারিশ করেছেন। বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অন্যরাও। বৈঠকে সবার সম্মতিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য এনআইডি মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারকে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে- জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালের পূর্ববর্তী শিক্ষা সনদ যাচাইয়ে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোতে পত্র পাঠাতে হবে।
নির্বাচন কমিশন এনআইডি সংশোধনের ক্ষেত্রে অন্যান্য কাগজ-পত্রের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের প্রতি। এতোদিন ১৯৯৬ সালের পূর্ববর্তী সনদ যাচাইয়ের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এখন তা বাস্তবায়ন করা গেলে ভুয়া সনদ দিয়ে এনআইডি সংশোধনের কোনো সুযোগ থাকবে না বলে জানান এনআইডি মহাপরিচালক হুমায়ুন কবীর।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে একটি সার্ভারে নাগরিকদের তথ্য সংরক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন। সেই সার্ভারে রক্ষিত তথ্যের ভিত্তিতেই পরবর্তীতে নাগরিকদের এনআইডি সরবরাহ করা হচ্ছে।
দেশে বর্তমানে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন নারী ভোটার। এবং হিজড়া ভোটার আছেন ৪৫৪ জন। এদের মধ্যে প্রায় ১১ কোটি নাগরিককে লেমিনেটিং করা এনআইডি দিয়েছে ইসি। আর সাড়ে পাঁচ কোটির মতো নাগরিক হাতে পেয়েছেন স্মার্টকার্ড।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২২
ইইউডি/আরআইএস