সুনামগঞ্জ: টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আবার নদ-নদীর পানি বেড়ে সুনামগঞ্জের চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
সর্বশেষ বুধবার (১৫ জুন) বিকেল থেকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে।
এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারা বাজারসহ চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল।
বিগত ২০ দিনের ব্যবধানে আবার বন্যা দেখা দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সুনামগঞ্জের মানুষ।
সুনামগঞ্জ শহরের উত্তর আরপিন নগর, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, মধ্যবাজার, কাজির পয়েন্ট, জগন্নাথবাড়ি রোড, নতুনপাড়া, উকিল পাড়া, ষোলঘর, নবীনগর এলাকায় পানি উঠেছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, স্কুলের শিক্ষার্থীরা এবং ব্যবসায়ীরা।
পানি ওঠায় বাসা থেকে বের হতে পারছেন না অনেকে। জরুরি প্রয়োজনে বের হতে হলে কোন কোনো এলাকায় কোমড় আর কোনো কোনো এলাকায় হাঁটু পানি মাড়িয়ে বের হতে হচ্ছে৷
এজন্য বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। চাকরিজীবী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা দাবি জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে যেন সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়।
এভাবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে সুনামগঞ্জে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে জেলার বন্যা কবলিত উপজেলায় এখনও জরুরি ত্রাণ পৌঁছায়নি।
মধ্যবাজারের ব্যবসায়ী সুনীল বণিক বলেন, সকাল থেকে রাস্তায় পানি আর একটানা বৃষ্টিতে কোনো কাস্টমার নেই, বড় খারাপ অবস্থা এখানে।
উত্তর আরপিন নগর এলাকার বাসিন্দা জামিলা বেগম বলেন, ঘরে পানি এখনও পানি ওঠেনি। আর দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি বাড়লে আমার ঘরে পানি উঠে যাবে।
ব্যবসায়ী শামসুল আলম রাজু বলেন, টানা বৃষ্টিতে বাসা থেকে বের হতে পারিনি৷ শহরে সব দিকে পানি। কোনো দিকে যাওয়ার মত অবস্থা নেই। আমি পাইকারি পণ্য সাপ্লাই দিই। আমার কাজের লোকজনও আসতে পারেনি। একদিনে আমার অনেক টাকা ক্ষতি হলো। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে যে কী পরিমাণ লোকসান হবে, তা বলে বোঝাতে পারব না।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বাংলানিউকে বলেন, আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে আরও দু’দিন বৃষ্টিপাত থাকবে। এসময় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল এলাকায় সৃষ্ট বন্যা মোকাবিলার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। এরই মধ্যে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে জরুরি ত্রাণ পাঠাতে ও সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন করে খাদ্য সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সবাইকে জরুরি প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
তবে জরুরি খাদ্য সহায়তা এখনো বানভাসি মানুষের কাছে পৌঁছায়নি জানালে, এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০২২
এসআই