ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ইভিএম নিয়ে ৭ দলের ‘হ্যাঁ’, ৩ দলের ‘না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২২
ইভিএম নিয়ে ৭ দলের ‘হ্যাঁ’, ৩ দলের ‘না’

ঢাকা: নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে তৃতীয় দফার বৈঠকে উপস্থিত ১০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার জন্য দাবি তুলেছে সাতটি দল। আর ব্যবহারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তিনটি দল।

 

মঙ্গলবার (২৮ জুন) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এ বৈঠকে দলগুলো এমন অবস্থানের কথা জানায়। এদিন ১৪টি দলকে বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায় ইসি। এতে সাড়া দেয় ১০টি দল। অনুপস্থিত চারটি দল হলো- সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি, খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি।

বৈঠকে উপস্থিত যে দলগুলো ইভিএমের পক্ষে সেগুলো হলো- ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।  

যে দলগুলো ইভিএমের বিপক্ষে সেগুলো হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও গণফোরাম।  

গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুরাইয়া বেগম বলেন, তাদের দল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট চায় না। ইভিএমের মাধ্যমে খুব সহজেই জালিয়াতি করার অনেক ম্যাকানিজম রয়েছে।  

বাংলাদেশ আওয়ামী-ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বলেন, ইভিএমের পুরো পদ্ধতিটাই আস্থাহীনতা। ইভিএম সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে সয়ংক্রিয়ভাবে ভোট চুরির যন্ত্র।  

সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সভা প্রধান আবু লায়েন্স মুন্না বলেন, ইভিএম থেকে ইসির সরে আশা উচিত। দেশের ৮০ শতাংশ ভোটার গ্রামে বাস করেন। তাদের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে।  

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ইভিএম পরিচিত করানো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এই মূহুর্তে তড়িঘড়ি করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট করা ঠিক হবে না। স্থানীয় নির্বাচনসহ পেশাজীবীদের ভোটে আইনের বাহিরে গিয়ে ইভিএম পরিচিত করার মত দেন। আগামী নির্বাচনগুলোকে ইভিএমের মাধ্যমে করা যেতে পারে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

 গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ড. শাহাদাত হোসেন বলেন, ইভিএম যদি ঠিকঠাক থাকে মেশিন ভালো সার্ভিস দেবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার মত দেন তিনি। স্বল্পতা দূর করে আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে ভোট চায় তারা।  

বিকল্প ধারার মহাসচিব আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা অবশ্যই ইভিএম চাই। তবে প্রশ্ন হলো এই প্রযুক্তিতে ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না? সবগুলো বুথে ইভিএম ব্যবহারের সক্ষমতা আছে কি-না? 

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ১৪ দল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর চায়। এক্ষেত্রে ইভিএমের ব্যবহার চায় তারা।  

ওয়াকার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ইভিএম ব্যবহারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে ইভিএম ব্যবহারের আগে স্থানীয় নির্বাচনে ভোট করলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।  

তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাদপুরী বলেন, সবাই যেহেতু ইভিএম বিষয়ে একমত না এজন্য কমপক্ষে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে।  

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের দল চায় ইভিএমের মাধ্যমেই সংসদ নির্বাচন হোক। এক্ষেত্রে সব আসনেই তারা যন্ত্রে ভোট নেওয়ার পক্ষে।

ইভিএম নিয়ে আলোচনা করতে ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে তিন ভাগে ভাগ করে আমন্ত্রণ জানায় ইসি। এক্ষেত্রে প্রথম দফায় ১৩টি দলের বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ অংশ নেয়নি। এছাড়া দ্বিতীয় দফায় ১৩টি দলের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) অংশ নেয়নি।  

সব মিলিয়ে ৩৯টি দলের মধ্যে মোট ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। ২৮টি দল বৈঠকে অংশ নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। জাতীয় সংসদের সরকারি দল আওয়ামী লীগ যেমন বৈঠকে অংশ নিয়ে সব আসনে ইভিএমের ব্যবহার চেয়েছে, তেমনি সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য ইসির কাছে দাবি জানিয়েছে।  

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সবার সঙ্গে আলোচনা হলো। আমরা আলোচনা-পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২২
ইইউডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।