ঢাকা: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে আগামী ২২ জুলাইয়ের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে। কেননা, ইতোমধ্যে ভোটে বিজয়ীদের গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, আমরা ইতোমধ্যে ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে পাঠিয়েছি। এক্ষেত্রে প্রত্যেক প্রার্থীকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়ে, এর কপি ইসিতেও পাঠাতে হবে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন অনুযায়ী, ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যেই এই হিসাব দিতে হয়। গত ২৩ জুন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবীর সইয়ে একজন মেয়র, নয়জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদ ও ২৭ জন সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদে বিজয়ী মোট ৩৭ জনের নামে গেজেট প্রকাশ করেছে ইসি। তাই ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার শেষ সময় আগামী ২২ জুলাই। তবে ২২ ও ২৩ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ২৪ জুলাই ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়া যাবে।
কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন ও কাউন্সিলর পদে ১৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এদের প্রত্যেককেই তাদের ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হবে। কেউ নির্ধারিত সময়ে জমা না দিলে তা হবে দণ্ডনীয় অপরাধ।
মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা:
নির্বাচন বিধিমালায় বলা হয়েছে, মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ বাবদ, অনধিক পাঁচ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পঁচাত্তর হাজার টাকা, পাঁচ লাখ এক হতে ১০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা, ১০ লাখ এক হতে ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং ২০ লাখ এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাবদ অনধিক পাঁচ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা, পাঁচ লাখ এক হতে ১০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা, ১০ লাখ এক হতে ২০ লাখ ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং ২০ লাখ এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। অর্থাৎ মেয়র পদের প্রার্থীর ব্যক্তিগত খাতে ব্যয়সীমা ৭৫ হাজার টাকা এবং নির্বাচন খাতে ব্যয়সীমা ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ মেয়র প্রার্থীর ব্যয় হতে হবে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মধ্যে।
বিধিমালায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর ব্যয়:
কাউন্সিলর প্রার্থী ব্যক্তিগত খরচ বাবদ, অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা, ১৫ হাজার এক হতে ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা, ৩০ হাজার এক হতে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার এবং ৫০ হাজার এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাবদ, অনধিক ১৫ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা, ১৫ হাজার এক হতে ৩০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা, ৩০ হাজার এক হতে ৫০ হাজার ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা এবং ৫০ হাজার এক ও তদূর্ধ্ব ভোটার সম্বলিত ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে, ১৬ হাজার ৪৭৪ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে, ৩ হাজার ৮৯৪ জন।
অর্থাৎ কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওয়ার্ডভেদে ব্যক্তিগত খাতে ব্যয়সীমা সর্বনিম্ন ১৫ হাজার ও সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা এবং নির্বাচন খাতে ব্যয়সীমা সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা।
ভোটের প্রচারপত্র বা প্রকাশনার মাধ্যমে অথবা অন্য কোনোভাবে ভোটারদের কাছে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভিমত, লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য উপস্থাপনের জন্য ব্যয়িত অর্থসহ তাহার নির্বাচন পরিচালনার জন্য দান, ঋণ, অগ্রিম জমা বা অন্য কোনোভাবে পরিশোধিত অর্থ 'নির্বাচনী ব্যয়' বলে গণ্য হবে।
আত্মীয়-স্বজনের (স্বামী বা স্ত্রী, মা, বাবা, ছেলে, কন্যা, ভ্রাতা বা ভগ্নি) কাছ থেকে ধার, কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার স্বেচ্ছা প্রদত্ত দান গ্রহণ করাকে ব্যয়ের উৎস দেখানো যাবে। এক্ষেত্রে কোনো উৎস থেকে কোনো অর্থ প্রাপ্ত হলে অর্থ প্রাপ্তির পর তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে।
এদিকে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তার নির্বাচনী এজেন্ট ব্যতীত অন্য কারো মাধ্যমে নির্বাচন বাবদ কোনো অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পুরো ব্যয় পরিচালনা করতে হবে তফসিলি ব্যাংকের নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্ট থেকে।
গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আরফানুল হক রিফাত দুইবারের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটে পরাজিত করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
ইইউডি/আরআইএস