ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত কমিয়ে ১০ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাসহ ১৬ দফা প্রস্তাব করেছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে বসে দলটি লিখিত আকারে এসব প্রস্তাব দেয়।
সংলাপে এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালুর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
দলটির মহাসচিব মো. আব্দুল হাই বলেন, আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব’— এ নীতির আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠান আমাদের দাবি।
লিখিত প্রস্তাবে এনপিপির মহাসচিব বলেন—
১। বিনামূল্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থীদেরকে ভোটার তালিকা সরবরাহ করার প্রস্তাব করছি।
২। দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি দলীয় চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা ও দলীয় কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।
৩। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ করতে হবে। তাই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচন কমিশন থেকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব প্রদানের প্রস্তাব করছি।
৪। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ নির্বাচন করতে চাইলে কমপক্ষে ০৩ বছর যে কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে যোগ্যতা অর্জনের বিধান করার প্রস্তাব করছি।
৫। স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধে অপরাধী ব্যাক্তিরা দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক, ঋণ খেলাপী, অর্থ পাচারকারী, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারী, ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিতরা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।
৬। দেশের রেমিটেন্স যোদ্ধা-প্রবাসী ভোটারদের ভোটগ্রহণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তাব করছি।
৭। নির্বাচন কালীন সময়ে সকল বৈধ অস্ত্র জমা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করছি।
৮। নির্বাচনে সহিংসতা রোধকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তাব করছি।
৯। নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পর নতুন কোনো রাজনৈতিক মামলা না দেওয়া। কোন প্রার্থী ও তার কর্মীদেরঅযথা হয়রানি না করা।
১০। ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষ ব্যতীত প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ও বুথে অনিয়ম রোধে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং তা ভোট কেন্দ্রের বাইরে প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করছি।
১১। নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান/ উপাশনালয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা নিষিদ্ধ করনসহ। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করছি।
১২। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম এর মাধ্যমে কতগুলি আসনে ভোট হবে-তা এখনি পরিষ্কার করে ঐসকল এলাকায় জনসাধারণকে ইভিএম বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে ধারণা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
১৩। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বল্প সংখ্যক আসনেও যদি ইভিএম ব্যবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে আমরা ‘ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেইল’ (ভিভিপিএটি) সংযুক্ত করার প্রস্তাব করছি। তাছাড়া ইভিএম যেহেতু মেশিন, তাই কোনো অবস্থাতেই যাতে কেউ কোনরুপ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হ্যাকিং করতে না পারে সে ব্যপারে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করছি।
১৪। দেশের মানুষকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দানের পাশাপাশি নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, এক কথায় জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
১৫। নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী প্রার্থীদের জামানত ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করছি।
১৬। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিৎ করতে রাজনৈতিক দল ও সকল প্রার্থিদের জন্য বাস্তবিক অর্থেই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ