ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংলাপে অংশ নিয়ে দলগুলো তিন শতাধিক প্রস্তাব করেছে।
সংলাপে বারবার আলোচনায় এসেছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, ইভিএম, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, সংখ্যানুপাতিক আসন বণ্টনের ব্যবস্থা ও ইসির অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ন্যস্ত করার বিষয়।
গত ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩৯টি দলকেই সংলাপে আসার সময় দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে বিএনপিসহ নয়টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি। ইসির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছে ৩০টি দল। এর মধ্যে দু’টি দল আসতে না পারার কারণ দেখিয়ে পরবর্তীতে সংলাপের জন্য সময় চেয়েছে। অর্থাৎ ২৮টি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
আগস্টের পরে সংলাপের জন্য সময় দিতে পারবে বলে জানিয়েছে জাতীয় পার্টি-জেপি। আর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কারণে পরবর্তীতে সময় চেয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।
যে নয়টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি
বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।
সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলো তিন শতাধিক প্রস্তাব দিয়েছে ইসিকে, যার মধ্যে অনেক প্রস্তাবই নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বারবার বলেছেন, ওই ধরনের প্রস্তাবগুলো সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। সবচেয়ে বেশি প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ৪০টি।
প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ১৬টি দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। কোনো কোনো দল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সীমিত আকারে মেশিনটি ব্যবহারের জন্য বলেছে। দলগুলো হচ্ছে— বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। আর জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) পেপার ট্রেইল যুক্ত করা সাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহার করার জন্য বলেছে।
২৮ দলের কাছ থেকে এসেছে তিন শতাধিক প্রস্তাব
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ১৩টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ একগুচ্ছ, বাংলাদেশ কংগ্রেস ১৬টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৯টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) একগুচ্ছ, খেলাফত মজলিস ৪টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২০টি, ইসলামী ঐক্যজোট ১১টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ১৫টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) ৯টি, গণতন্ত্রী পার্টি ৫টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১৩টি, গণফ্রন্ট ২২টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ৪০টি প্রস্তাব দিয়েছে।
এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ১২টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৯টি, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ ১৯টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১২টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ১১টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ৭টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি ১৬টি, জাকের পার্টি ৪টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ একগুচ্ছ, গণফোরাম ১০টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ১১টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ১১টি, জাতীয় পার্টি ৪টি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৪টি প্রস্তাব দিয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়ে আউয়াল কমিশন বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে। গত ১৩ মার্চ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী, ২২ মার্চ নাগরিক সমাজ, ৬ এপ্রিল প্রিণ্ট মিডিয়ার সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ১৮ এপ্রিল ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী/প্রধান বার্তা সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ৯ জুন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি এবং ১২ জুন নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি।
এছাড়া প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম যাচাই করার জন্য গত ২৫ মে এবং রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে ১৯, ২১ ও ২৮ জুন তিন দফায় বৈঠক করে ইসি। সে সময়ও বিএনপিসহ ১১টি দল সাড়া দেয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ