ঢাকা: চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে সঠিকভাবে আঙুলের ছাপ নেওয়ার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলমান হালনাগাদ কার্যক্রম চলবে আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাঠ পর্যায়ে তাড়াহুড়ো করে অনেক সময় ভোটারদের আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। ফলে নানা ধরনের বিপত্তি সৃষ্টি হয়। কেননা, ভোটারের তথ্য দিয়েই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি হওয়ায় সেবা প্রাপ্তি বিঘ্নিত হয়। এছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনেও (ইভিএম) আঙুলের ছাপ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে ইভিএমের ব্যবহার আরও বাড়ানো হবে। তাই কারো আঙুলের ছাপ এখন ঠিকমতো না নেওয়া হলে পরবর্তীতে এনআইডির মাধ্যমে সেবা প্রাপ্তি বা ভোট দিতেও অসুবিধা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকেরই আঙুলের ছাপ মেলে না। অনেকগুলো কারণের মধ্যে সঠিকভাবে আঙুলের ছাপ না নেওয়াও একটা কারণ। ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা অনেক সময় কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ভোটারের আঙুলের ছাপ নিতে তাড়াহুড়ো করেন। এতে সঠিকভাবে ছাপ সংরক্ষিত হয় না। তাই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইসির মাসিক সমন্বয় সভাতে বিষয়টি আলোচনার পর ইসির সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এই নির্দেশনাটি দিয়েছেন। সকল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়া নির্দেশনায় তিনি বলেছেন— ভোটারের ১০ আঙুলের ছাপ তাড়াহুড়ো করে যেন ভুলভাবে নেওয়া না হয়। এতে পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা নির্দেশনাটি জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবেন।
এবারের হালানাগাদে ভোটার বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৬ জন ব্যক্তিকে হানাগাদের অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। এবারও গতবারের মতো তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এদের মধ্যে যাদের বয়স যখন ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তখন তারা স্বয়ংক্রিভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন। এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদের ব্যয ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালানাগাদে ৫৫ হাজার ২শ জন তথ্য সংগ্রহকারী, ১২ হাজার সুপারভাইজার পুরো কাজটি তুলে আনবেন। এক্ষেত্রে দুই হাজার ৫শ জন ভোটারের জন্য একজন তথ্য সংগ্রহকারী এবং ১২ হাজার ৫শ ভোটারের বিপরীতে একজন সুপারভাইজার রয়েছে।
এছাড়া এসব তথ্য সার্ভারে এন্ট্রি করার জন্য ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, পরিবহন, সার্ভার পরিচালনা, নিবন্ধন কেন্দ্র পরিচালনা, আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের তদারকি, সমন্বয়-যোগাযোগ ও জ্বালানিখাত, টেকিনিক্যাল সাপোর্ট ইত্যাদি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে ভোটার নিবন্ধন ও বিভিন্ন ভাতা খাতে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ৮১ হাজার ৯শ টাকা। এছাড়া তথ্য সংগ্রহ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর সমন্বয়, যোগাযোগ ও অন্যান্য খাতে ধরা হয়েছে অবশিষ্ট টাকা।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালানাগাদ করা হয়েছে পাঁচবার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল ও ২০১৯-২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি।
বর্তমানে ভোট আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষটির তথ্যভাণ্ডারে মোট ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটারের তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন। হিজড়া ভোটার আছে ৪৫৪ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ