ঢাকা: আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনের নির্বাচকমণ্ডলী ও ভোটার তালিকা প্রণয়নের জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৭ অক্টোবর দেশের ৬১টি জেলার স্থানীয় এ সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব খোরশেদ আলমের সই করা নির্দেশনাটি সম্প্রতি জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে জেলা পরিষদ (ওয়ার্ডের সীমা নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সীমা পুনঃনির্ধারণের কার্যক্রম সম্পন্ন করার সাপেক্ষে জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ এর ধারা ১৭ এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৯ অনুযায়ী নির্বাচক মণ্ডলী ও ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতঃ প্রাসঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে অবহিত করতে হবে।
গত ২৩ অক্টোবর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী-মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের সময় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর। আর ভোটগ্রহণ ১৭ অক্টোবর।
২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নতুন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে। এরপর জোট সরকারের আমলে এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জেলা পরিষদ পরিচালনা করে। এরপর প্রথমবারের মতো স্থানীয় এই সরকারে নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সে সময় ৬১টি জেলায় (তিন পার্বত্য জেলা বাদে) নির্বাচন হয়েছিল। এরমধ্যে ১৯টি জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জেলা পরিষদের মেয়াদ আরও আগেই শেষ হলেও আইন সংশোধনসহ অন্যান্য জটিলতার কারণে ভোটগ্রহণ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় এই সরকারের আইনটি সংশোধনের পর গত ১৭ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রশাসক বসানো কথা বলা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়- দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় নির্বাচিত পরিষদগুলো বিলুপ্ত করা হলো।
এ অবস্থায় জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের আগে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি যোগ করে জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী গত ৬ এপ্রিল সংসদে পাস হয়। এরপর সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ হয় ১৩ এপ্রিল।
জেলা পরিষদ নির্বাচন আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে যতগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর সদস্যরাই জেলা পরিষদ সদস্যদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতেন। অর্থাৎ সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং কাউন্সিলররা বা সদস্যরা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত করতেন। কিন্তু সংশোধীত আইনে জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলার সংখ্যার সমান। আর নারী সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা চেয়ারম্যানদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ একেক জেলা পরিষদের সদস্যের সংখ্যা হবে একেক রকম, সংশোধনের আগে যেটা ২১ জন নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল।
আগে জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তী নির্বাচন না হওয়ার পর্যন্ত পূর্বের পরিষদকেই দায়িত্ব পালন করার কথা বলা ছিল আইনে। কিন্তু সংশোধনী আইনে সেটির পরিবর্তে প্রশাসক বসানোর বিধান আনা হয়েছে। সেই ক্ষমতা বলেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রশাসক বসানোর আদেশ জারি করে, যার বলেই এখনো প্রশাসক রয়েছে দায়িত্বে।
প্রশাসক বসানোর পরের দিন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকীর ১৮ এপ্রিল এক চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বলে। এরপর সীমানা পুননির্ধারণ করা সাপেক্ষে ভোটের তফসিল দিল নির্বাচন কমিশন। জেলা পরিষদ (ওয়ার্ডের সীমা নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী জেলা ডেপুটি কমিশনার সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদের ‘সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা’ এবং তার মনোনীত উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার অথবা অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার সহকারী সীমা নির্ধারণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২২
ইইউডি/আরআইএস