ঢাকা: ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার কারণে কোনো রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচন বয়কট করবে না। নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে আসবে।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে। এগুলো নিয়ে অনেকেই প্রচার করছেন। হয়তো জীবনে কোনোদিন দেখেননি, তারা টিভিতে কথা বলছেন। যারা পক্ষে বলছেন তারাও ভুল বলছেন। তাই ম্যাসিভ প্রচারে যাবো।
এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ইভিএমে ওভাররাইট করার সুযোগ নেই। এখানে ওভাররাইটের বিষয়ও নেই। কারো আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তার আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেন। তার আগে সংশ্লিষ্ট ভোটারের পরিচিতি এনআইডি নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হয়। অথচ টক শোতে বলছেন ওভাররাইট করা যায়।
তিনি বলেন, অনেকে বলছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এটাকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারেন। কিন্তু আপনারা এসে দেখেন, যে ইভিএম চাইবেন আপনাদের সেটাই পরীক্ষা করতে দেবো, দেশে বিদেশের এক্সপার্ট নিয়ে আসেন, দেখেন।
আবার বলা হয়, মামলা হলে কিসের ভিত্তিতে হবে। ভিপি ট্রেইল তো নেই। আমাদের ইভিএমে এর চেয়ে ভালো ব্যবস্থা আছে। নির্বাচনের পর এক বছর পর্যন্ত সিলগালা অবস্থায় থাকবে। এখানে থেকে কোন মার্কায়, কখন ভোট পড়েছে, কত ভোট পড়েছে সব প্রিন্ট করা যাবে, যোগ করেন মো. আলমগীর।
সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, ইভিএমে বিশ্বাস কিন্তু ভোটাররা করে। কোথাও দেখেছেন এটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে, মিছিল করতে? যারা লিখছেন তারা তো ইভিএম দেখেনইনি, শুনেনওনি। তারপরও লিখে ফেলছেন।
তিনি বলেন, ইভিএমটা আসলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য ব্যবহার করছি। আমরা পারলে ৩০০ আসনেই করতাম। ওই তো বললাম টাকা নাই। আবার ট্রেনিং সম্পন্ন করতে পারবো না। আমরা যতি আরও দুই বছর আগে দায়িত্বে আসতাম তাহলে ৩০০ আসনে করতাম।
এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের টার্গেট সুষ্ঠু নির্বাচন করা। ইভিএমে ছিনতাই, জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই ওখানে যাবে না। যাবে ওইখানে, যেখানে ব্যালট পেপারে ভোট হবে। আমরা ওই জন্যই ব্যালটে যেখানে হবে, সেখানে ফোর্স বেশি মোতায়েন করবো। আমাদের ওই ফোর্স এখানে দিতে হতো, সেগুলো ইভিএমের আসনগুলোতে অত লাগবে না, তাই সেগুলো আমরা ব্যালটের ওখানে দেবো।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তো কথা বলতে পারি না। একটি বড় দল, তার সঙ্গে আরও চারটি দল সরাসরি ইভিএম চেয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে আরও সব মিলিয়ে ১৭টি দল চাচ্ছে। তবু বলা হচ্ছে ইভিএম নিয়ে মতামত পাল্টে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যারা লিখলেন তারা কি প্রমাণ করতে পেরেছেন?
মো. আলমগীর বলেন, ইভিএমে প্রাথমিক ব্যয় বেশি। একটা ব্যালট কিন্তু ছাপাতে হয়, ক্যারি করতে হয়, প্রচুর খরচ আছে। ইভিএমে একবার খরচ হয়। এরপর এটা কিন্তু আমরা নানা নির্বাচনে ব্যবহার করি। ওই মামলা করার জন্য যে সময় থাকে, ওই সময় পর্যন্ত আমরা ওই ইভিএমটা রেখে দিই। সেই সময় শেষ হলেই কেবল আরেকটা নির্বাচনে ওই ইভিএমটা ব্যবহার করি। ইভিএমে লাইফ টাইম ২০ বছর পর্যন্ত আছে। এটা তো আমাদের তো কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও ব্যবহার করছি। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করেছি। এই কমিশন আসার পর একটা নির্বাচনও ব্যালটে করিনি।
ইভিএম নিয়ে দলগুলোর আস্থাহীনতার বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, ১২ কোটি ভোটারের পরিপূর্ণ আস্থা আছে। হয়তো দলগুলোর রাজনৈতিক কৌশল আছে। তবে তাদেরও অন্তরে বিশ্বাস আছে, মুখে নেই। কারণ অনেক দলই বিপক্ষে কথা বলছে, কিন্তু আমাদের কাছে এসে পক্ষে বলেছেন। একটি দলের একজন সংসদ সদস্য আমাদের কাছে এসে লিখিত দরখাস্ত করেছেন তার এলাকায় ইভিএম দেওয়ার জন্য। কাজেই এটা অন্তরে আছে, ওরা ইভিএম বিশ্বাস করেন।
ইভিএমের ভোটে সবাই নির্বাচনে আসবে। ২০২৩ বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে, তাতে সকল দল অংশগ্রহণ করবে বলে আমরা আশাবাদী। ৩৯টি দলই যে আছে, তারা সকলেই আসবে বলে আশা করি। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি মনে করে অন্য দলের সঙ্গে নির্বাচন করবে অথবা অন্য একটি দলকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য অংশগ্রহণ করবেন না, এমনটাও তো হতে পারে। আমরা অবশ্যই ভোটের পরিবেশ তৈরি করবো। আমাদের ভেতরে ও বাহিরে এক। আলাদা নেই কিছু। রোডম্যাপে আমরা আমাদের চ্যালেঞ্জ ও তা মোকাবিলার কথা উল্লেখ করেছি। কোনো কমিশনই কি এর আগে তা করেছে? আমরা কনফিডেন্ট এইজন্য যে, এই রোডম্যাপ আমরা বাস্তবায়ন করবো। বাস্তবায়ন করলে সবাই আসবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহারের কারণে কোনো দল নির্বাচন বয়কট করবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করি, করবে না বলেই আমরা মনে করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
ইইউডি/এমজেএফ