পটুয়াখালী: প্রায় দেড় বছর আগে নিজের ও স্বামীর এবং তিন মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম নিবন্ধন করতে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে যান উত্তর মুরাদিয়া এলাকার শিল্পী বেগম।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নিয়ম অনুযায়ী আবেদন জমা দিয়ে এসে মাসের পর মাস ঘুরেও পাননি কাঙ্ক্ষিত সেবা।
কয়েকদিন পরে হদিস মেলেনি তার আবেদনেরও। আবার টাকা দিয়ে আবেদন জমা দিলে মেলে সনদ। তবে ছেলে ও মেয়ের নামে ব্যাপক ভুল ও গড়মিল দেখা দেয়, আবার টাকা দিয়ে আবেদন জমা দিলে আবার ভুল করে ইউপি সচিব। পরে বাধ্য হয়ে ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দেন শিল্পী। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি করে ইউপি সচিবকে শোকজ করেন ইউএনও। এরপর টাকা দিয়ে নতুন আবেদন দিয়ে সন্তান ও নিজেরটা হাতে পেলেও এখনও পাননি সন্তানের বাবার জন্ম নিবন্ধন সনদ।
দীর্ঘদিন ধরে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিয়ে পটুয়াখালীর অধিকাংশ ইউপি সচিব ও উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। সরকার নির্ধারিত ফি’র থেকে চার/পাঁচ গুণ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবেদন গ্রহণ করলেও ভুল ও সময়ক্ষেপণে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। কারণে অকারণে মাসের পর মাস হয়রানি করা হচ্ছে সেবা প্রত্যাশীদের।
মুরাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের সামনেই শত শত মানুষ ছুটে আসেন নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশে। সচিবের আচরণ ও হয়রানিতে অনেকেই সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়েও আবার নিয়ে গেছেন। এ ইউনিয়নে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এখন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে অপেক্ষায় আছেন সচিবের বদলির।
অভিযোগকারী শিল্পি বেগম বলেন, আমি দীর্ঘ ১৮ মাস ঘুরেও পরিবারের ছয়জনের নিবন্ধনের কাগজ হাতে পাইনি। একের পর এক ঠুনকো কারণে আমাকে হয়রানি করছে। ইউএনর কাছে অভিযোগ দেওয়ার কারণে আমাকে সচিব কনা ও মেম্বার জান্নাত গালাগাল ও অপমান করেছেন।
এছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল গাজি বলেন, সচিব প্রতিটা জন্ম নিবন্ধনে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেন। দুই নং ওয়ার্ডে সালমা সুলতানা বলেন, সচিব আপায় রোববার ছাড়া আসেন না, এছাড়া তাকে পাওয়াও যায় না।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জাহাঙ্গীর বলেন, আমার কাছে ৪০০ টাকা চাইছে, আমি কাগজপত্র নিয়ে গেছি, নতুন সচিব এলে তারপর করবো।
তবে অভিযোগের বিষয়ে মুরাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কনার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
মুরাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান শিকদার বলেন, মুরাদিয়া ইউনিয়নের জনগণ থেকে চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবাই বর্তমান ইউপি সচিব কনার অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানিতে অতিষ্ঠ। সচিবের কুকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নিজেই অভিযোগ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউ্এনও) কাছে। তারপরও বহাল তবিয়তে নিজের অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন ইউপি সচিব কনা।
ইউএনও মো. আল ইমরান বলেন, অনেক ভুক্তভোগী আমার কাছে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাকে বার বার সতর্ক করা হলেও সংশোধন হননি। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে জানিয়েছি।
এদিকে জেলার অনেক পৌরসভা ও ইউনিয়নে তথা কথিত সার্ভার জটিলতাসহ নানান অভিযোগে সাধারণ মানুষের থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় এবং মাসের পর মাস হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সব বিড়ম্বনা ও হয়রানি দূর করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সেবা পদ্ধতি আরও সহজ করে জনসাধারণের ভোগান্তি দূর করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০২২
এসআই