বরগুনা: তফসিল ঘোষণার পর থেকে পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরগুনা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তোড়জোড় শুরু করেছেন। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় সরগরম হয়ে উঠছে বরগুনা পৌরসভার নির্বাচনী এলাকা।
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকলেও একক প্রার্থী নিয়ে ভাবছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। সেই সঙ্গে রয়েছে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর সম্ভাবনাও।
তফসিল ঘোষণার পরপরই শহর জুড়ে ভোটারদের সমর্থন পেতে প্রচার প্রচারণায় নেমেছেন সম্ভব্য প্রার্থীরা। ব্যানার-পোস্টার, স্থানীয় পত্রপত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যমে প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে প্রচার ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। ছুটে যাচ্ছেন পাড়া মহল্লার বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর বরগুনার তিন পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে দেশের আরও ২৩৪টি পৌরসভায় একযোগে নির্বাচন হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
এবছর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতের জন্য দিনরাত সিনিয়র নেতাদের কাছে লবিংয়ে ব্যস্ত সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
আবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তে সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী আছেন সিদ্ধান্তহীনতায়ও। নির্বাচনকে সামনে রেখে চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বরগুনা পৌরসভা প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয় ১৯৯৯ সালে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এ পৌরসভায় ভোটার রয়েছেন ১৯ হাজার ৮৮৭ জন।
দীর্ঘদিন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের দখলে থাকা এ পৌরসভার মেয়র পদে ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই প্রভাব ধরে রেখেছেন বরগুনা পৌরসভায়।
আগামী নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে, দলীয় কোন্দল নির্বাচনে প্রভাব ফেললে এবং মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থিতার সিদ্ধান্ত নিলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা ম্লান হতে পারে বলেও ধারণা করছেন স্থানীয় রাজনীতি-সংশ্লিষ্টরা।
পৌর নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার প্রচারণায় ও দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ থেকে এগিয়ে আছেন বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন, সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান, জেলা যুবলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর রইসুলর আলম রিপন ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো. হুমায়ূন কবির।
অন্যদিকে, বিএনপি কেন্দ্র থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় প্রচার প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না তাদের। তবে, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদুজ্জামান টিপন নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে। নামমাত্র আলোচনায় আছেন সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এমএ জলিল।
পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়। নির্বাচনের পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পৌরবাসীকে প্রথম শ্রেণির সব সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, সর্বদক্ষিণের জেলা বরগুনা পৌরসভার উন্নয়নে ভোটাররা সন্তুষ্ট। বরগুনা পৌরসভা নাথপট্টি লেক, পৌরসভার রাস্তা প্রসস্তকরনসহ পৌরবাসীকে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার সব সুবিধা দিতে পেরেছি। আমার দ্বারা দল কিংবা কোনো ব্যক্তির ক্ষতি হয়নি, তাই আগামী নির্বাচনেও দলীয় সমর্থন পাওয়ার আশা করছি।
স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে বরগুনা পৌরসভায় পরপর দুইবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে পরাজিত হলেও জনপ্রিয়তার কমতি নেই তার।
অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ আমাকে ভালোবাসে তাই বিগত বছরগুলোতে পরপর দুইবার বরগুনা পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছি। আমার সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতির জন্য আসন্ন পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবো আশা করছি। তবে, না পেলে শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে তার।
অপরদিকে, তরুণ প্রজন্মের কাছে জেলা যুবলীগ সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. কামরুল আহসান মহারাজ ও রইসুল আলম রিপন রয়েছেন আলোচনায়। এর মধ্যে গত নির্বাচনে দলীয় সমর্থন চেয়ে পাননি কামরুল আহসান মহারাজ। ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন এই তরুন রাজনীতিবিদ। তারপর জেলার আওয়ামী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
বাংলানিউজকে কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। আসন্ন পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রার্থীর রাজনৈতিক জীবন মূল্যায়ন করা উচিত। প্রার্থীকে জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নির্বাচনে সঠিকভাবে দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করলে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী।
পিছিয়ে নেই বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র রইসুল আলম রিপন তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্র রাজনীতি, যুব রাজনীতি শেষে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি। বরগুনার পৌরসভায় কয়েকবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি এখন প্যানেল মেয়রের দায়িত্ব পালন করছি।
জনগনরে মধ্যে জনপ্রিয়তা না থাকলে তারা বারবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত করতো না। আওয়ামী লীগের জন্য জেল খেটেছি বহুবার। তাই দলের ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দিলে আমি মনোনয়ন পাবো সে আশা করছি।
শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে বরগুনার সাংবাদিক সোহেল হাফিজের। বাংলাদেশে কমিনিউটি টেলিভিশনের প্রথম উদ্যোক্তা তিনি। সৎ ও মেধাবী সাংবাদিক হিসেবে যথেষ্ট সম্মানও রয়েছে তার। ইতোমধ্যেই সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ভিন্নধর্মী নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বরগুনাবাসীর কাছ আস্থাভাজন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন তিনি।
বরগুনা জেলা গাইড, জোৎস্না উৎসব, কৃষ্ণকাননসহ বেশ কিছু অভিনব কাজের উদ্যোক্তা তিনি। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও রয়েছে তার সমান পদচারতণা। এনজিও ও সাংবাদিকতার চাকরির সুবাধে মানুষের দরজায় দরজায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তার।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কোনো সিদ্ধান্ত না থাকায় প্রচার প্রচারণায় না দেখা গেলেও একক প্রার্থীর কথা ভাবছেন তারা। জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে তরুণ ছাত্রনেতা মুরাদুজ্জামান টিপনের নাম। পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে মুরাদুজ্জামান টিপন বাংলানিউজকে জানান, স্বচ্ছ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী থাকায় নিজের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া লাগে তাই অংশ নিচ্ছেন জাতীয় পার্টি। সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট এমএ জলিল নির্বাচন করবেন বলে জাতীয় পর্টি সূত্রে জানা গেছে।
বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বাংলানিউজকে বলেন, দলে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মনোনয়ন দেওয়া হবে।
অন্যদিকে জেলা বিএনপি সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা বলেন, এখনও নির্বাচনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। সিদ্ধান্ত পেলে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৫
পিসি/
** ধুনটে মনোনয়নের অপেক্ষায় প্রার্থীরা