ঢাকা, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

নির্বাচন

‘মনোনয়ন চাই না, গয়েশ্বর-টিপুকে বের করে দে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৫
‘মনোনয়ন চাই না, গয়েশ্বর-টিপুকে বের করে দে’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে। মনোনয়ন না পেয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ তাদের সমর্থকরা হই-হুল্লোড়, চেচামেচি করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

এমনকি এক মনোনয়ন প্রত্যাশীর ছোট ভাই লাথি মেরেছেন খোদ খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের দরজায়।

বুধবার (০২ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দলীয় নেতাকর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমর্থকরা।

এর মধ্যে রাত পৌনে দশটায় হই-হুল্লোড়, চেচামেচি ও হট্টগোল করেছেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী বাদশা এবং তার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এবার বাদশাকে দল মনোনয়ন না দেওয়ায় তার ছোট ভাই মিলন চৌধুরী কার্যালয়ের গেটে লাথি মেরে তার ক্ষোভ ঝেড়েছেন।    
 
গোলমাল ও হট্টগোলে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে কার্যালয়টির সামনের ফুটপথ ও লেকপাড়ের ক্ষুদ্র দোকানিদের তাদের পসরা গুছিয়ে চলে যান। আতঙ্কিত পথচারীরা দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন।

বুধবার রাতে শেষ হয় বিএনপির বিভিন্ন পৌরসভায় মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের দলের প্রত্যয়নপত্র বিতরণের কাজ।   ঢাকার বাইরে থেকে আসা মেয়র প্রার্থী বা সমর্থকরা প্রত্যয়নপত্র নিয়ে যার যার গন্তব্যে রওনা হয়ে গেলে দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড়ও কমে যায়। সংবাদকর্মীরাও ফিরে যান কর্মস্থলে।

ঠিক এ সময়টায় মনোনয়নবঞ্চিত জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী বাদশা এবং তার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা গুলশান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান।
 
এ সময় বাদশার ছোট ভাই মিলন চৌধুরী ঊচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকেন, ‘মনোনয়ন চাই না, গয়েশ্বর আর টিপুকে চাই। ওই দুইটারে বের করে দে। ওরা বিএনপিকে শেষ করে দেবে। ওরা টাকা খেয়ে আওয়ামী লীগের দালালদের কাছে বিএনপির মনোনয়ন বিক্রি করেছে’।
 
উত্তেজিত মিলনকে কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি নিবৃত করার চেষ্টা চালালেও কিছুতেই তিনি শান্ত হচ্ছিলেন না তিনি। চিৎকার করে বলেই চলেন, ‘আক্কেলপুর বিএনপিকে বাঁচিয়ে রেখেছে আমার ভাই (আলমগীর চৌধুরী বাদশা)। আমার ভাই সিটিং মেয়র। আন্দোলন-সংগ্রামে সে জান-প্রাণ দিয়ে বিএনপির জন্য কাজ করে। আজ আমার ভাইকে মনোনয়ন না দিয়ে রেজাউল করিমকে মনোনয়ন দিয়েছে। গয়েশ্বর আর টিপু টাকা খেয়ে এ কাজ করেছে। তোরা সাংবাদিক ডেকে আন। আমি সব কথা বলে দেবো’।
 
খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী সিএসএফ’র দু’জন সদস্য এ সময় এগিয়ে এসে বাদশার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা নিজেরা গোলমাল করবেন, করেন। কিন্তু ম্যাডামের অফিসের গেটে লাথি মারলেন কেন? এসব বন্ধ করেন। নইলে ঝামেলায় পড়বেন’।
 
সিএসএফ’র এমন বক্তব্যের পর বাদশা তার ছোট ভাই মিলন চৌধুরীকে জোর করে একটি মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে চালককে বলে দেন, বাসায় পৌঁছে দিতে।
 
যাওয়ার সময়ও মিলন চৌধুরী চিৎকার করে বলতে থাকেন ‘ও (টিপু) সহ দফতর সম্পাদক হয়েই মনোনয়ন বাণিজ্য শুরু করেছে। আমি ওরে দেখে নেবো। ও আমার এলাকার লোক হয়ে আমার ভাইয়ের সাথে বেঈমানি করে’।
 
আলমগীর চৌধুরী বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে আমি মেয়র হয়েছিলাম। আমার প্রত্যাশা ছিল, দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নের ভিত্তিতে প্রথম পৌর নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন আমিই পাবো। কিন্তু কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল, তা বুঝতে পারছি না’।
 
ছোট ভাই মিলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওর একটু মাথা গরম। ও যা করেছে, তা ক্ষোভের বশে করেছে। আমার অনুরোধ থাকবে, তৃণমূলের রাজনীতি যেন তৃণমূলের হাতেই থাকে। কেন্দ্রে বসে যেন কেউ সিদ্ধান্ত না নেন। নইলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে’।

পৌর নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বাংলানিউজকে বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্যের প্রশ্নই ওঠে না। জেলা বিএনপির সভাপতি-সেক্রেটারি ও সাবেক এমপিদের পাঠানো প্রস্তাব বিএনপির হাইকমান্ডের সরাসরি তত্ত্বাবধানে যাচাই-বাছাই শেষে মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বুধবার রাতের ঘটনাকে অনভিপ্রেত আখ্যা দিয়ে প্রিন্স বলেন, তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ থাকতেই পারে। তাই বলে ম্যাডামের কার্যালয়ের ফটকে ফ্লাইংকিক মেরে ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটাতে হবে বলে মনে করি না। আমার দৃষ্টিতে বাদশা সাহেবের লোকজন কাজটি ঠিক করেননি।

বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরাও জানতাম মো. আলমগীর চৌধুরী বাদশা আক্কেলপুর পৌরসভায় বিএনপির সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী। কিন্তু স্থানীয় সাবেক এমপি প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা রেজাউল করীমকে রিকমান্ড করায় বাদশাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আর এ বিষয়টি বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে হয়েছে। আমাদের করার কিছু নেই’।
 
শুধু জয়পুরহাটের আক্কেলপুরই নয়, ময়মনসিংহের গৌরীপুর, নাটোরের গোপালপুর, রাজবাড়ী সদর, মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভাসহ বেশ কয়েকটি পৌরসভায় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেন-দেনের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

বুধবার বিকালে গুলশান কার্যালয়ের সামনে নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভার মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী মাহমুদুল হক বিপক্ষ গ্রুপের হাতে অপদস্ত হন। পরে অবশ্য কয়েকজন নেতার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

এর আগে দুপুরে রাজবাড়ী পৌরসভার মনোনয়ন নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ খৈয়ামের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীরা স্লোগান দেন। খৈয়ামের ছেলে ওই পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। নাটোরের গোপালপুর পৌরসভার নেতাকর্মীরাও গুলশান কার্যালয়ের ভেতরে হট্টগোল করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৫
এজেড/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।