ঢাকা: ‘তাড়াহুড়ো’ করে পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা করতে গিয়ে ভুল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এ ভুল সংশোধন না করলে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দিতে পারবে না নির্বাচন আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ইসির গোচরেও এসেছে ভুলগুলো। তাই আবারও তা সংশোধনের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
এবারই প্রথমবারের মতো মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। এক্ষেত্রে চার ধরনের প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে হবে। এগুলো হলো-দলীয় মেয়র, স্বতন্ত্র মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর।
প্রতীক বরাদ্দের বিধানটি ২০১০ সালের ০৬ অক্টোবর (বুধবার) গেজেটে প্রকাশিত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার ১৯ এর (১) উপ-বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছিলো।
সেখানে বিধি ১৯ এর উপবিধি (১) এর (ক) দফায় ‘তফিসিল-২’ অনুযায়ী মেয়র পদের প্রতীক, বিধি ১৯ এর উপবিধি (১) এর (খ) দফায় ‘তফসিল-৩’ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের প্রতীক এবং বিধি ১৯ এর উপবিধি (১) এর (গ) দফায় ‘তফসিল-৪’ অনুযায়ী সাধারণ কাউন্সিলর পদের প্রতীক বরাদ্দের বিধান রাখা হয়।
এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃতাধীন বর্তমান কমিশন ২০১৫ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সেই বিধি সংশোধন করে। এক্ষেত্রে মেয়র পদের জন্য ‘তফসিল-২’ প্রতিস্থাপন করে ১২টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়। একইসঙ্গে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য ‘তফসিল-৩’ প্রতিস্থাপন করে ১০টি প্রতীক এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ‘তফসিল-৪’ প্রতিস্থাপন করে ১২টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়।
এর আটমাস পরেই পৌরসভার নির্বাচন আইন সংশোধন করে সরকার। এতে মেয়র পদে দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণের বিধান আনা হয়। সে মোতাবেক নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধনও করে। যা গত ২৩ নভেম্বর (সোমবার) গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।
ভুলটি হয়েছে সর্বশেষ এই সংশোধনীতেই। এখানে মেয়র পদের জন্য ৪০টি দলের ৪০টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে ‘তফসিল-২’ প্রতিস্থাপন করে, যেখানে ‘বিধি ১৯ এর উপবিধি (১) দ্রষ্টব্য’ বলা হয়েছে। কিন্তু এটি হবে বিধি ১৯ এর উপবিধি (১) এর (ক) দফা। কারণ, ২০১০ সালের মূল বিধিমালায় ‘তফসিল-২’ এই দফাতেই উল্লেখ করা হয়েছে।
আবার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১২টি প্রতীক সংরক্ষণ করে ‘তফসিল-৩’ প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছে। যেখানে ‘বিধি ১৯ এর উপবিধি ২ এর দফা (ক) দ্রষ্টব্য’ বলা হয়েছে। অথচ বিধিমালায় উপবিধি (২) এ প্রতীক নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায় বলে দেওয়া রয়েছে। আর উপবিধি (২) এর (ক) দফা বলতে কোনো দফাই নেই।
একই ভুল করা হয়েছে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের প্রতীক সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও। এ পদের জন্য ১০টি প্রতীক সংরক্ষণ করে ‘তফসিল-৪’ প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দ্রষ্টব্য বলা হয়েছে বিধি ১৯ এর উপবিধি ২ এর দফা (খ)। যে দফার কোনো অস্তিত্ব নেই।
অন্যদিকে, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২টি প্রতীক সংরক্ষণ করে ‘তফসিল-৫’ প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছে। অথচ এটা হওয়া উচিত ছিলো সংযোজন। এছাড়া ‘তফসিল-৫’ এর দ্রষ্টব্য বলা হয়েছে বিধি ১৯ এর উপবিধি (২) এর দফা (গ)। এ দফারও কোনো অস্তিত্ব নেই মূল বিধিমালায়।
অর্থাৎ এই ভুলের জন্য প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দিতে পারবে না নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে খুব সহসাই আবারও তা সংশোধন করতে হবে।
এই ভুল ছাড়াও আরও ছোটখাটো বেশকিছু ভুল রয়েছে। সেগুলোও সংশোধন করতে হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, যদিও এটা করণিক ভুল কিন্তু এটি সংশোধন না করে প্রতীক দেওয়া যাবে না। সংশোধন করতেই হবে।
আগামী ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১৪ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। এক্ষেত্রে ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের বিধি সংশোধন সংশোধন না করলে নির্বাচন স্থগিত করতে হবে। অথবা পুনঃতফসিল কিংবা বন্ধ করে দিতে হবে।
গত ২৪ নভেম্বর তফসিলে ঘোষণার পরপরই মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণার সুযোগ চেয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় এবং প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়ার বিধান আনতে বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়েছিলো। কিন্তু সিইসি তখন বলেছিলেন-তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের এই পর্যায়ে বিধিমালা সংশোধন করা সমীচিত হবে না। কিন্তু সংশোধন করতেই হচ্ছে।
আগামী ৩০ অক্টোবর দেশের ২৩৫টি পৌরসভায় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫
ইইউডি/এসএস