ফেনী, পরশুরাম ও দাগনভূঁইয়া থেকে: বিএনপির দুর্গ হিসেবে খ্যাত ফেনীতে দলটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়ে গেছে। দীর্ঘ সাত বছর পর দলীয় প্রতীক নিয়ে পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়ার পরেও এ জেলার তিনটি পৌরসভায় সঠিকভাবে প্রার্থীই দিতে পারেনি দলটি।
ইতোমধ্যে ফেনী ও পরশুরাম পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেছে। আর দাগনভূঁইয়া পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থী কাজী সাইফুর রহমান স্বপনের দেখা মিলছে না। কানাঘুষা চলছে, এই প্রার্থী বাড়িতে তালা দিয়ে পরিবার নিয়ে বাইরে চলে গেছেন।
দেশের অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলের এমন করুণ দশার সুযোগে জেলার তিন পৌরসভায় মাঠের দখলে রয়েছে আওয়ামী লীগ। ভোটাররা মনে করছেন, বিএনপির সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণেই আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চলেছে।
বিএনপির অনেক নেতাকর্মীই অভিযোগ করে জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেই তারা এ জেলায় থাকার চেষ্টা করছেন, এমন চেষ্টা তাদের অল্প দিনের নয়। অনেক দিনেরই। ফলে দলটি সময়ের সঙ্গে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাচ্ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, প্রতিপক্ষ দলের ষড়যন্ত্র, বিভিন্ন মামলা ও হুমকির কারণেই তারা মাঠে দাঁড়াতে পারছেন না। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কেউ কথা বলতেও রাজি নন।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর-বুধবার দেশের ২৩৫টি পৌরসভায় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে বাংলানিউজের আগাম সরেজমিনে ফেনী, পরশুরাম ও দাগনভূঁইয়া পৌরসভা ঘুরে ওঠে এসেছে এসব তথ্য।
শনিবার (১২ ডিসেম্বর) পরশুরাম উপজেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই এ অবস্থার তৈরি হয়েছে। তারা এতোই সংকটে পড়ে আছে যে, প্রার্থী দেওয়ার মতো অবস্থাও নেই।
জেলার দুই পৌরসভায় মেয়র ও অধিকাংশ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় চলতি পৌর নির্বাচন একেবারেই নিরুত্তাপ। আর কয়েকদিন পরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে উৎসবের কোনো ছোঁয়াই নেই।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, ফেনী ও পরশুরাম পৌরসভায় মেয়র ও অধিকাংশ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। রোববার (১৩ ডিসেম্বর) প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এ দিনই দুই পৌরসভায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাজী আলাউদ্দিন (ফেনী) ও নিজাম উদ্দিন সাজেলকে (পরশুরাম) মেয়র হিসেবে এবং ২৫ জন কাউন্সিলরকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে।
এলাকাবাসী জানান, সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফেনী-১ আসন থেকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। আর বাকি দুই আসনও বিএনপির দখলেই ছিল।
তবে ওই নির্বাচনে আওয়ামী সরকার গঠন করার পর থেকেই বিএনপির সংকটের শুরু। দলকে গুছিয়ে রাখতে পারেনি তারা। এতে বর্তমানে একেবারেই বেহাল অবস্থা।
অনেক দিন পর প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ পেলেও এই দুই পৌরসভায় ধানের শীষ প্রতীকটির দেখা পাওয়া যাবে না। আর বাকি এক পৌরসভায় দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। এ নিয়ে তৃণমূল বিএনপিতে অনেক ক্ষোভও দেখা গেলো।
পরশুরাম পৌরসভার ভোটার জয়নাল আবেদীন বাংলানিউজকে জানান, বিএনপির কোনো প্রার্থীর দেখাই পাওয়া যায়নি। তারা মাঠে আসার পর যদি কেউ বাধা দিতো তাহলে বোঝা যেতো গণ্ডগোল হচ্ছে, কিন্তু তাদের দেখাই তো পাওয়া যায় না।
দাগনভূঁইয়া পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীর বাড়িতে তালা:
শনিবার বিকেল ৩টার দিকে দাগনভূঁইয়া পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে খোঁজ নিতেই শোনা গেলো- মাঠে বিএনপির প্রার্থী কাজী সাইফুর রহমান স্বপনের অনুপস্থিতির কথা। একাধিক ভোটার জানালেন, বাড়িতে তালা দিয়ে গত কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন তিনি।
এ কী অবস্থা, সামনে নির্বাচন আর তিনি নিখোঁজ! তার বাড়ির আশপাশের মানুষ এ বিষয়ে কোনো কথাও বলতে চান না। ওই পৌরসভার একাধিক ভোটার বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েকদিন ধরে বিএনপির প্রার্থী সাইফুর রহমান স্বপনের দেখা মিলছে না। কোথায় গেছেন কেউ জানেন না।
এ পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ২০ হাজার ৫৬৭ জন। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে লড়ছেন ওমর ফারুক।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
একে/আইএ
** ভোটের আগেই ভোট শেষ, এক লাখ ভোটার বঞ্চিত!
** আ’লীগ ‘দুই’ বিএনপি ‘দুই’, জাপা শূন্য
** মার্কা আইলেই মাঠ গরম
** রসুলপুরে দু’ঘণ্টা আটকে থেকে ছাড়লো কর্ণফুলী এক্সপ্রেস
** জনগণে জনগণে একটা আলোচনা আছে না!