কিশোরগঞ্জ: প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই ‘প্রতীক’। বাদ যাচ্ছে না প্রার্থীদের ‘সঞ্চিত’ ভোটও।
স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, এই ঐতিহ্যবাহী পৌরসভায় আগেও দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। তবে তা দলীয় প্রতীকে নয়। নিজেদের কাজ ও যোগ্যতাতেই। এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক আর ওই প্রার্থীদের কিছু ‘সঞ্চিত’ ভোট তো জয়ের জন্য ফ্যাক্টর হবেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাজিতপুর শুধু কিশোরগঞ্জেরই নয়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি প্রাচীন পৌরসভা। ১৮৬৯ সালের ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে এ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
এরপর ২০১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়।
২০১০ সালের পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন গুরুত্ব পায়নি। তাই ভোটাররাও নিরপেক্ষ ও নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীদের ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচন করেছেন।
তবে এবার বিষয়টি আলাদা। রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি মনোনয়নে প্রার্থী দেওয়ায় বাজিতপুরে ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে ‘প্রতীক’ আর প্রার্থীর ‘সঞ্চিত’ ভোট।
জানা যায়, বাজিতপুর পৌরসভাকে বিগত প্রায় ৫০ বছর ‘শাসন’ করেছেন দু’টি পরিবারের সদস্যরা। তাদের কথিত ‘সঞ্চিত’ ভোট ওই নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দেয় প্রতিবার।
কিন্তু এবারের নির্বাচনে ভোটের হিসাব কী হবে? ‘রিজার্ভ ভোট’ না অন্য কিছু? এ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে পৌরশহর জুড়ে।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নতুন মুখ দুই পরিবারের ‘স্থায়ী’ আসন দখলে নিতে কী সক্ষম হবেন? এমন সমালোচনা এবারের নির্বাচনী মাঠে ভোটারের মুখে মুখে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত নির্বাচনে পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি মো. এহেসান কুফিয়া ছিলেন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী।
ওই সময় ৬ হাজার ৬৮৪ ভোট পেয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। সে সময় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মজিবুর রহমান মঞ্জু সমর্থিত প্রার্থী লায়ন আমিরুল হোসেন সুজন পান এক হাজার ৩৫৪ ভোট। ওই নির্বাচনে মেয়র এহেসান কুফিয়ার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ছারওয়ার আলম। কিন্তু তিনি পেয়েছিলেন পাঁচ হাজার ৯৫৩ ভোট।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম গোলাপ পান এক হাজার ৪৪৩ ভোট।
এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আফজাল হোসেনের ছোটভাই আনোয়ার হোসেন আশরাফ। উপজেলা যুবলীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
আর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন বর্তমান মেয়র এহেসান কুফিয়া। তার বাবা আব্দুল্লাহ বোরহান কুফিয়াও পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন চারবার।
অন্যদিকে তিনবারের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মিজবাহউদ্দিন আহাম্মদের ছেলে শওকত আকবরও এবার মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও এলাকায় তার একটা ভোট ‘ব্যাংক’ আছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, তবে নির্বাচনে মূল লড়াইটা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে, নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে। হতে পারে সেটা মূল ফ্যাক্টরও।
বাজিতপুর পৌর বিএনপির সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী মো. এহেসান কুফিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বাজিতপুরে বরাবরই বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল এবং আছে। গত পৌর নির্বাচনেও আমি বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। এবারও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন ও প্রশাসন ঠিক থাকলে জনগণ আমাকেই মেয়র নির্বাচিত করবে।
জয়ে আশাবাদী স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত আকবরও। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
উপজেলা রিটার্নিং অফিসার শারজিল হাসান জানান, বাজিতপুর পৌরসভায় ১২টি কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ২১ হাজার ৩০জন।
‘এখন পর্যন্ত এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। এরপরও আমরা নির্বাচন কমিশনে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব চাইবো,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
এমএ