শিবগঞ্জ (বগুড়া) থেকে ফিরে: বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ত্রি-মুখী লড়াইয়ে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই বিদ্রোহীসহ তিন মেয়র প্রার্থী।
তবে মেয়র পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
এদিক থেকে বিএনপির দলীয় প্রার্থী কিছুটা বিপাকে থাকলেও কমে ছাড়ছেন না। ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইতে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করে শহর-গ্রামাঞ্চল চষে বেড়াতে হচ্ছে তাকে।
কেননা শিবগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপির গঠিত আহ্বায়ক কমিটি তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে। আর দাবিটা অবশ্য বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর। তবে বিএনপির দলীয় প্রার্থী বিদ্রোহী প্রার্থীর এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। বরং ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠী ছাড়া উপজেলা, পৌর ও তৃণমূলের সব নেতাকর্মীরা ধানের শীষের হয়ে মাঠে কাজ করছেন বলে বিএনপির দলীয় প্রার্থীর দাবি।
সবমিলে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ফুরফুরা মেজাজে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই এবার ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মানিকের আরাম আর বিএনপির মতিনের ঘুম হারাম বলে এলাকার ভোটররা মনে করেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনী হালচাল সম্পর্কে জানতে মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে কথা হলে এমনই তথ্য ওঠে আসে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বর্তমান মেয়র পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি জেলা কমিটির সদস্য মতিয়ার রহমান মতিন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব এসএম তাজুল ইসলাম নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে এবং আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তৌহিদুর রহমান মানিক নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মানিক বাংলানিউজকে জানান, শিবগঞ্জ পৌরসভার অর্জনপুর রাঙামাটি একটি গ্রাম। গ্রামটির ওপর দিয়ে করতোয়া নদী প্রবাহিত। দীর্ঘ ৪৩বছর পার হলেও গ্রামটির মানুষের যাতায়াতের জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। এরমধ্যে বর্তমান মেয়র ১৩বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। তিনি তার এই মেয়াদকাল পর্যন্ত ব্রিজ নির্মাণে কেবল প্রতিশ্রুতিই দিয়ে আসছেন।
এছাড়া রাস্তা-ঘাট, বিদ্যু, ড্রেনেজসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। বর্তমান মেয়র উন্নয়ন নামে আসা বরাদ্দের টাকা জনগণের কাজে না লাগিয়ে শুধু নিজের পকেটে ভরেছেন। তাই তিনি জনগণকে লুটপাট ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদি এই মেয়র প্রার্থী বাংলানিউজকে আরো জানান, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। আর এই পৌরসভাকে সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সামিল করতে পৌরবাসী তাকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে তিনি মনে করেন।
তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির প্রার্থী মতিয়ার রহমান মতিন বাংলানিউজকে জানান, তার এই পাঁচ বছরের মেয়াদেই কেবল শিবগঞ্জ পৌরসভায় প্রায় ১২কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। নির্বাচনের কারণে ৩কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ অন্যতম। সামনে মেয়াদে জনগণ সুযোগ দিলে পানি সাপ্লাইয়ের কাজ শুরু করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিএনপি মানেই বেগম খালেদা জিয়া। আর তিনিই তাকে দলীয়ভাবে নির্বাচন করার জন্য মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাই যত ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন ধানের শীষের জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। কারণ জনগণ দীর্ঘদিন ধরে ভোট দিতে পারেন না। সেই জনগণ ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য উম্মুখ হয়ে আছেন। তবে জোটের ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি আরও জানান, সম্ভবত প্রার্থী জটিলতার কারণে আগামি ২০ডিসেম্বর জেলা কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেই সভায় তাকে ডাকা হয়েছে। উক্ত সভায় কেন্দ্রিয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সভার সিদ্ধান্তও তার পক্ষে যাবে বলে মেয়র প্রার্থী মতিয়ার রহমান মতিন জানান।
স্বতন্ত্র ব্যানারে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, অবহেলিত ও গরীব-দুখী মানুষের প্রকৃত প্রতিনিধি মতিয়ার রহমান মতিন নন। তাই পৌরবাসী তাকে চান। আর এসব অবহেলিত মানুষের দাবির কারণে তিনি মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বলে দাবি করেন। এছাড়া দলের উপজেলা, পৌর ও তৃণমূল পর্যায়ের কোন নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নেই। সবাই তার পক্ষে। এরপর শিবগঞ্জ বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের কোনো কারণ নেই। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাদের দু’জনের মধ্যেই হবে।
জেলা কমিটির ডাকা সভা সম্পর্কে তিনি জানান, তিনি সভার আহ্বানের কথা শুনেছেন। তবে তাকে বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ডাকা হয়নি।
প্রচার-প্রচারণায় নামা প্রসঙ্গে মেয়র প্রার্থী এসএম তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নামবেন। আর সেদিন থেকে পুরো নির্বাচনী তার পোষ্টার দিয়ে ছেয়ে ফেলা হবে। তবে নেতাকর্মীরা তার পক্ষে মাঠে রয়েছেন। কিন্তু দেরি করে প্রচার-প্রচারণায় নামার কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
এমবিএইচ/আরএইচএস