রাজবাড়ী থেকে: রাত ১০টা। রাজবাড়ী শহরে তখন পিনপতন নীরবতা।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে শহরের বড়পুলে নেমে রিকশা চলছে মূল শহরের দিকে। রাজবাড়ী পৌরসভার সামনে দিয়ে যেতেই রিকশা চালক প্যাডেল চাপতে চাপতে বললেন, ‘চলবে এবার জোয়ান আর বুড়ার লড়াই’।
কথার অর্থ বোঝার জন্য জানতে চাইলে বললেন-‘নৌকা থেইকা মহম্মদ আলী চৌধুরী, ধানের শীষ নিয়া দাঁড়াইছে অর্নব নেওয়াজ মাহমুদ হৃষিত। হৃষিতের বয়স আর কত হইবো ৩০ থেকে ৩১ বছর, আর মহম্মদ আলীর বয়স তার ডাবল বা তার বেশি। ’
‘কে জিতবে মনে হয়?’ এমন প্রশ্ন রাখতেই সোজাসুজি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘দেখেন না কি হয়। ’ রাতে যে কয়েকজন রাজবাড়ী পৌরবাসীর সঙ্গে কথা বলা গেছে, তারা মিশ্র মন্তব্য করেছেন। কেউ বলছেন, নৌকা। আবার কেউ বলছেন ধানের শীষের জোয়ার বেশি। আবার কেউ কেউ রিকশা চালকের মতো কৌশলী উত্তর দিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিনের কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে দল থেকেই মেয়র হন না কেন শান্তিপ্রিয় রাজবাড়ী পৌরবাসী চান উন্নয়ন। রাতে পৌরসভার সামনেই পৌরবাসিন্দা ইস্রাফিল আলমের সঙ্গে কথা হয়। ক্ষোভের সঙ্গে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দল করি না। যে তুলনামূলক ভালো মনে হবে তারেই ভোট দিবো। গতবার পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির তফাজ্জল হোসেন মিয়াকে ভোট দিয়েছি। উনি এখন পর্যন্ত মেয়র। কি করছেন উন্নয়ন, উনি ভালো বলতে পারবেন। আমি কোনো উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও দেখি না। ’
‘বিএনপি করার কারণে কোণঠাসায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আতাত করে নিজের আখের গুছিয়েছেন’-এমন মন্তব্য ইস্রাফিলের।
রাত তখন ১১টা। রাস্তার পাশে ইস্রাফিলের সঙ্গে কথা বলার সময় সানাউল হক নামে আরেকজন পৌরবাসী এ কথোপকথনে যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘রিপোর্ট করে কি হবে ভাই। নির্বাচনে কে জিতবে তার নীল নকশা আগে হয়ে গেছে। ’
‘কে নীল নকশা করলো’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা কি বলা লাগবে? বিএনপিতো আর নীল নকশা করার সুযোগ নাই। ’
সানাউলের এমন বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পাওয়া যায় পৌর এলাকার এক মুদি দোকানির মুখে। নাম না প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রাজবাড়ী নির্বাচনী প্রচারণাকালীন এখন পর্যন্ত তেমন অপ্রীতিকর কিছু হয়নি, যার জন্য নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি-না এমন প্রশ্ন আসে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক। বিএনপির মেয়র প্রার্থী, কাউন্সিলররা প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে সমানতালেই চলছে প্রচারণা। ’
রাতের রাজবাড়ী পৌরসভায় নির্বাচন নিয়ে এমনই মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। এখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজবাড়ী পৌরসভা আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও নিকট অতীতে মাত্র একবারই মেয়রপদটি দখলে রাখতে পেরেছিল আওয়ামী লীগ। ২০০৪ সালের ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মহম্মদ আলী চৌধুরী বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুরুল আলম দুলালকে পরাজিত করেছিলেন। ওই নির্বাচনে দলীয় শক্তি অটুট রেখে এককভাবে প্রার্থী দিতে পেরেছিল বলেই আওয়ামী লীগের জয়টা হয়েছিল খুবই সহজ।
বর্তমানে রাজবাড়ী আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী কেরামত আলীর ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী ইরাদত আলী শেষ পর্যন্ত দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় দলের বড় একটি অংশ নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় নেই। এর জন্য বেগ পেতে হবে বলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কারো কারো মত।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, কেন্দ্র থেকে ইরাদত আলীকে মহম্মদ আলী চৌধুরীর পক্ষে কাজ করতে বললেও তিনি ‘নাখোশ’ থাকায় তার বিশাল কর্মী বাহিনীও নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের এমন অবস্থায় ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তরুণ অর্নব নেওয়াজ মাহমুদ হৃষিতের প্রচারণা চলছে তুঙ্গে। এলাকাবাসীদের কারো কারো মত, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের এমন দ্বন্ধের সুযোগ পাবেন বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া এ ‘নওজোয়ান’।
রাজবাড়ী পৌরসভায় মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহম্মদ আলী চৌধুরী ও ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী অর্নব নেওয়াজ মাহমুদ হৃষিত ছাড়াও লাঙল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শুকুর চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন।
জানা গেছে, শুকুর এর আগে একাধিকবার প্রার্থী হলেও বিশাল ব্যবধানে পরাজয়ই বরণ করতে হয়েছে।
এবার পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ৩৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১১ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের প্রচারণা এখন পুরোদমে চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
এডিএ/ওএইচ/জেডএস