রাজবাড়ী থেকে: ‘মেঝভাই নাখোশ হলে, নৌকা জেতা কঠিন হবে’ বলছিলেন রাজবাড়ীর আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক ওয়ার্ড নেতা।
নিজেকে ‘মেঝভাই এর একজন শীষ্য’ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘মেঝভাই উপরে আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রার্থীকে সমর্থন দিলেও ভেতরে তার ক্ষোভ আছে।
প্রায় একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে, মেঝভাইয়ের কয়েকজন সমর্থকের মুখে। তবে প্রকাশ্যে তারা এ বিষয়ে মুখ বলতে চান না। রাজবাড়ী শহরে পা রাখার পরই ‘মেঝভাই’ শব্দটি শোনা যাচ্ছে। প্রায় সবার মুখে মেঝভাই। বলা হচ্ছে, ‘রাজবাড়ীতে মেঝভাই’ই সব। তার কথায় সব চলে। ’
‘কে এই মেঝভাই’- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেলো, তার প্রকৃত নাম কাজী ইরাদত আলী। রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে আছেন। এ জেলার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর ভাই। ভাইদের মধ্যে ‘মেঝ’ হওয়ায় আস্তে আস্তে ছেলে বুড়ো সবার কাছে ‘মেঝভাই’ হিসেবে পরিচিত।
রাজবাড়ীর কেউ কেউ কাজী ইরাদত আলী নামটি না জানলেও মেঝভাই নামটি প্রায় সবাই জানেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ নামটি এখন ঘুরেফিরে রাজবাড়ীর সবার মুখে মুখে।
রাজবাড়ীর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরো জেলায় একচ্ছত্র ‘নিয়ন্ত্রণ’ ইরাদতের। রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনী। কারো কারো মতে, ‘তার ভাই এমপি হলেও তিনিই ক্ষমতাবান। ’
জানা যায়, মেঝভাই হিসেবে পরিচিত ইরাদত আলী এবার রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র হিসেবে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। টানা কয়েকমাস প্রচারণাও চালিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদের টিকিট পান সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন্নাহার চৌধুরীর স্বামী মহম্মদ আলী চৌধুরী। এতেই ভেস্তে যায় ‘মেঝভাই’ এর স্বপ্ন। কেন্দ্র থেকে ইরাদতকে মহম্মদ আলী চৌধুরীর পক্ষে কাজ করতে বলা হয়েছে।
বর্তমান মেয়র প্রার্থী মহম্মদ আলী চৌধুরীর একজন সমর্থক বাংলানিউজকে বলেন, ‘নৌকার প্রচারণায় তাকে দু’একদিন দেখা গেলেও এ দেখাটা দায়সারা। কেন্দ্র থেকে তাকে বলেছে কাজ করতে, তাই লোক দেখানোর জন্য হলেও আছেন এই আরকি…মন থেকে থাকলে তার কর্মীরা কাজ করছে না কেন?’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মেঝভাই হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কাজী ইরাদত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হলেও বিপুল ভোটে জয়লাভ করতাম। এটা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি। তবে আমি দলের সঙ্গে বেইমানি করিনি। দলের আদেশ মেনেছি। দলের নির্দেশক্রমে নৌকার পক্ষে কাজ করছি। ’
তিনি বলেন, ‘মেয়র পদে প্রার্থী হতে পারিনি আফসোস নেই। পৌরসভার দেয়ালই আমরা সব নয়। আমি অনেক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সেবা করতে চাইলে কাজের অভাব হয় না। ’
‘মেঝভাই’ এর কয়েকজন নেতা কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার অনেক নেতা কর্মীই নির্বাচনের প্রচারণায় নেই। তার সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগ, ইরাদতকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তার ভাইয়ের (এমপি) ভুমিকা ছিলো। এমনিতেই ইরাদত জেলায় ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে তারমধ্যে পৌরসভার মেয়র হলে তার প্রভাব আরও ব্যাপক হতে পারে এসব কিছু ভেবে এমপি কাজী কেরামত আলী তার ভাই ইরাদতের মনোনয়নের পক্ষে ছিলেন না।
এদিকে আওয়ামী লীগের এমন অবস্থায় নৌকা প্রতীক ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তরুণ অর্নব নেওয়াজ মাহমুদ হৃষিতের প্রচারণা চলছে তুঙ্গে। হৃষিতের পরিচয় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও টানা তিনবারের পৌর মেয়র আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের পুত্র।
এদিকে নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনের প্রচারণাও চলছে ব্যাপকভাবে। পুরো শহরজুড়েই নৌকা আর ধানের শীষের পোস্টার। মাঝে মাঝে লাঙ্গলের দেখাও মিলছে।
পুরো শহর জুড়ে এখন আলোচনার বিষয়বস্তু নির্বাচন। পৌর এলাকার একটি চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে আলোচনার বিষয়ই নির্বাচন।
ভোটার শ্রী কমল চন্দ্র দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘লড়াই হলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মহম্মদ আলী চৌধুরীই জয়ী হবেন। ’ এ ভোটারের মতে, পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে।
তবে এ ভোটারের এমন কথা উড়িয়ে দিলেন রিশাদুল হাসান নামে আরেকজন ভোটার। তিনি বলেন, ‘এ প্রথম একজন তরুণ বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। মানুষ পরিবর্তনের জন্য তরুণ নেতৃত্বকে বেচে নিবে। ’
রাজবাড়ী পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন বিএনপি, আবার কারো মতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হবে।
রাজবাড়ী পৌরসভা আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও নিকট অতীতে মাত্র একবারই মেয়রপদটি দখলে রাখতে পেরেছিল। ২০০৪ সালের ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মহম্মদ আলী চৌধুরী বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুরুল আলম দুলালকে পরাজিত করেছিলেন। ওই নির্বাচনে দলীয় শক্তি অটুট রেখে এককভাবে প্রার্থী দিতে পেরেছিল বলেই আওয়ামী লীগের জয়টা হয়েছিল খুবই সহজ।
জানা গেছে, বর্তমানে এ পৌরসভার মেয়র বিএনপি সমর্থিত তফাজ্জল হোসেন মিয়া।
রাজবাড়ী পৌরসভায় মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহম্মদ আলী চৌধুরী ও ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী অর্নব নেওয়াজ মাহমুদ হৃষিত ছাড়াও লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শুকুর চৌধুরী প্রার্থী হয়েছেন।
জানা গেছে, শুকুর এর আগে একাধিকবার প্রার্থী হলেও বিশাল ব্যবধানে পরাজয়ই বরণ করতে হয়েছে।
এবার পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ৩৫ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১১ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভোট যুদ্ধের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের প্রচারণাও চলছে পুরোদমে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
এডিএ/এসএইচ
** ‘এবার জোয়ান বুড়ার লড়াই’