হবিগঞ্জ পৌরসভা থেকে: হবিগঞ্জ সদর যে সংসদীয় আসনে পড়েছে তাতে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নিকট অতীতে জেতার রেকর্ড নেই। কিন্তু হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে এ হিসাব প্রায় উল্টো।
শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন হাসপাতাল রোডে আলাপ হচ্ছিলো একদল তরুণ-তরুণীর সঙ্গে। কথা বলছিলেন জারিন তাসলিম পপি, তুষ্টি চক্রবর্তী, শুভজিৎ দেব শাওন, মিজানুর রহমান, সৈয়দ জাদিল উদ্দিন আহমেদ, অজয় কর তপু, রনি ঘোষ, সজীব চন্দ্র গোপ, মো. মেজবাউর রহমান জুয়েল, অন্তু দেব, মঞ্জুরুল আহসান ও কৃষ্ণ চন্দ্র শীল। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে জড়িত এ তরুণ-তরুণীরা।
আসন্ন পৌর নির্বাচন নিয়ে তারা জানান, পৌরসভায় যেহেতু শিক্ষিত শ্রেণির মানুষ বেশি, সেহেতু তারা জাতীয় ও স্থানীয় অনেক বিষয়-আশয় বিবেচনা করে ভোট দেন। আগের স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে জাতীয় বা রাজনৈতিক ইস্যু ব্যালট বক্সের ভার বাড়াতে ভূমিকা না রাখলেও এবার তা রাখতেও পারে।
৪৪ হাজার ১২৩ ভোটারের হবিগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচজন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের আতাউর রহমান সেলিম (নৌকা), বিএনপির জি কে গউছ (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র মো. মিজানুর রহমান (পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ছেড়েছেন, নারিকেল গাছ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল কাইয়ুম (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. আ. কাদির (আম)। এছাড়া, এখানে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ৫১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১০ জন।
এই তরুণ-তরুণীরা বলছেন, মেয়র পদে লড়াইটা মূলত তিনজনের মধ্যে হবে। নৌকা-ধানের শীষ আর নারিকেল গাছ প্রতীকধারীদের মধ্যে। সেলিম জেলা যুবলীগের সভাপতি। সংসদীয় আসন বরাবর নৌকার পক্ষে কথা বলায় এবার তার আশাবাদী হওয়ার সুযোগ বেশি।
অন্যদিকে, গউছের অতীতের কাজ বিবেচনায় ভোটাররা তাকেও ফেলতে পারছেন না। আবার তিনি একটি হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হয়ে কারান্তরীণ থাকায় তার ব্যালটে সিল মারাটা ‘জলে যায়’ কিনা সে চিন্তাও করতে হচ্ছে। এ দু’জনের বাইরে সাধারণের মাঝে পরিচিতি আছে মিজানুরেরও। সেক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রে তার মুখটিও যে ভোটারের চোখে ভেসে উঠবে না তা-ও বলা যাচ্ছে না।
আড্ডায় প্রথমে কথা বলেন পপি, ‘প্রতীক বরাদ্দ হওয়ায় হবিগঞ্জবাসীকে এবার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চিন্তা করতে হবে। তবে, ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীর শিক্ষাগতসহ সার্বিক যোগ্যতার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। ইসিরও উচিত নির্বাচনে লড়াইয়ের যোগ্যতা হিসেবে অন্তত এইচএসসি পাস বেঁধে দেওয়া। নতুবা, অনেক শিক্ষিত মানুষকেও তার পৌরসভার জন্য ভোট দিতে হয় মেট্রিকও পার না হতে পারা ব্যক্তিকে। ’
পপির সঙ্গে প্রায় একমত হন তুষ্টি। তার মতে, ‘এবার অনেক ভাবনা-চিন্তা করে ভোট দিতে হবে হবিগঞ্জ পৌরবাসীকে। একটি দলের প্রতীকের পক্ষের লোক বেশি থাকলেও আরেক দলের লোক মানুষ হিসেবে ভালো। এই বিভ্রান্তি কাটবে ৩০ ডিসেম্বর। ’
শুভজিৎ বলেন, ‘হবিগঞ্জে সংখ্যালঘু ভোটাররা ফলাফলের নির্ধারক। এই ভোটাররা প্রতীক হিসেবে একটি দলকে পছন্দ করলেও তাদের সুযোগ-সুবিধা-কাজ করে দেওয়ায় পছন্দ করেন অন্য দলের প্রার্থীকে। এখন হবিগঞ্জে পছন্দের প্রতীকেও প্রার্থী দাঁড়িয়েছে, আবার পছন্দের লোকটাও দাঁড়িয়েছে। সে বিবেচনায় কে কী করবে তা নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেছে। ’
শুভজিতের সঙ্গে প্রায় এক হয়ে কথা বলেন মিজানুর রহমানও। তিনি বলেন, ‘হবিগঞ্জ পৌরসভায় বরাবরই সংখ্যালঘু ভোটাররা ফলের নির্ধারক। এবার প্রতীক ও প্রার্থী নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাদের ভাবতে হবে। কেবল সংখ্যালঘুই নয়। পুরো হবিগঞ্জবাসীরও একই দশা হবে এবার। ’
একই সুরে কথা বলেন সৈয়দ জালাল, ‘আগে স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাররা স্বচ্ছ ইমেজের লোকদের ভোট দিতেন। এখন দলীয় প্রতীকের ভোট তাদের ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। ’
জালাল যখন কথা বলছিলেন, তখন সড়ক থেকে ভেসে আসছিল কারান্তরীণ একজন প্রার্থীর মুক্তি ও তার পক্ষে দোয়া চেয়ে মাইকিং।
সেদিকে ইঙ্গিত করে অজয় কর তপু বলেন, ‘গউছ মিয়া হবিগঞ্জের চেহারা বদলে দিয়েছেন। কিন্তু হবিগঞ্জবাসীর পছন্দের প্রতীক নৌকা, সেটা সব সংসদীয় নির্বাচনেই প্রমাণ হয়। এখন কী হবে তা বলা যাবে ভোটের পরেই। ’
কৃষ্ণ চন্দ্র বলেন, ‘আমি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রতীকটিকে পছন্দ করলেও প্রথম পৌর ভোট পড়েছিলো বিএনপিমনা প্রার্থীর ব্যালটেই, তার কাজ বিবেচনায়। এখন পছন্দের প্রতীক আর কাজের লোকটা মুখোমুখি। পছন্দের প্রতীককেও এড়াতে পারবো না, কাজের মানুষকেও ভোট না দিতে পারলে খারাপ লাগবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। দেখা যাক ৩০ ডিসেম্বর কী হয়। ’
রনি, সজীব, জুয়েল, অন্তু ও মঞ্জুরুলরা বলেন, ‘প্রার্থীরা কেউ আমাদের আত্মীয় হন না। সাধারণ ভোটাররাও কোনো রাজনীতি করেন না। স্থানীয় নির্বাচনে আমরা সাধারণরা আগে ভোট দিতাম স্থানীয় উন্নয়ন যিনি করতে পারবেন তাকে দেখেই। এখন প্রতীক বরাদ্দের কারণে নিজেদের পছন্দের প্রতীকটাকেও ভোটকেন্দ্রে এড়িয়ে যেতে পারবো না। ’
আড্ডায় আড্ডায় এ তরুণরা জানান, কেবল তারাই নন, হবিগঞ্জ পৌরসভার প্রায় সব ভোটার দ্বিধায় আছেন এবার। এই দোটানার অবসান হবে ৩০ ডিসেম্বর।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
এইচএ/এএ
** ‘দেখে-শুনে ভোট দিন, ৩০ তারিখ শুভ দিন’
** মুখ চিন্না মুরগার ডাইল
** ভেতর-বাইরের ‘খেলায়’ কোণঠাসা আ’লীগ
** ভোটের আগেই ‘খুশি’ বিলাবেন প্রার্থীরা!
** আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ
** শোর উঠেছে ধানের শীষের, ভোট পড়বে নৌকায়
** আ’লীগের ভরসা ইমেজ, বিএনপির ভরসা প্রতীক
** নৌকায় ভাঙছে বিভেদের দেয়াল
** ‘রাজা’ ‘বখত’ নয়, এবার লড়াই দলীয়
** নৌকা-ধানের শীষ নয়, লড়াই কালাম-শামছুর
** ছাতকে ‘ফ্রি চা-পানি’, মিলছে ‘টেকা-টুকা’ও
** জকিগঞ্জবাসীর দুঃখগাঁথা
** ওপারে শীতের চাদর, এপারে নির্বাচনী উত্তাপ
** বছর ধইরা মাঠ ঠিক করছি, এখন সরতাম কিতার লাগি
** লাখ লাখ টেকার ভুট এক হাজারে বেচিয়া কতদিন খাইবা?
** এখানে কুনো ভুটো কারচুপি অইছে না
** ডিজিটাল রেল, সময়ানুবর্তী রেল