মদন (নেত্রকানো) থেকে: নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের মদন পৌরসভাকে বিভক্ত করেছে মগড়া নদী। খরস্রোতা মগড়া বিধৌত এ পৌরসভাটি ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৬ বছর পার হলেও উন্নয়ন তথা পৌরসভার তেমন কোনো সুবিধা পাননি এ পৌরসভার বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা বলছেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের প্রার্থী ও স্থানীয় নেতারা মেয়র নির্বাচিত হলেও পৌর এলাকায় এখনও শহুরে জীবনের তেমন কোনো ছোঁয়া নেই। যারা যখন নির্বাচিত হয়েছেন, সবাই নিজেদের আখের ঘুচিয়েছেন। মানুষ কিংবা এলাকা নিয়ে তেমন কেউ ভাবেননি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌর এলাকার চারদিকে গ্রামীণ আবহ। মগড়ার পশ্চিম তীরে জাহাঙ্গীরপুর ও পূর্ব তীরে মদন। পশ্চিম তীরে ছয়টি ওয়ার্ড (১, ২, ৬, ৭, ৮ ও ৯) আর পূর্বে ৩, ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড। উপজেলা কার্যালয় পশ্চিম তীরে হলেও থানা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি অফিস-আদালত পূর্ব তীরে অবস্থিত।
জনগণের দাবি, সুষম উন্নয়ন হলেও এপার-ওপার দ্বন্দ্বে সুষ্ঠু উন্নয়ন হয়নি।
দুই তীরের উত্তর-দক্ষিণে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি। বর্ষাকালে এসব জমিতে শুধু পানি আর পানিতে থই থই থাকে। কিন্তু পৌরসভা এলাকায় এসব জমিতে ধান রোপনের প্রস্তুতি চলছে, কোথাও অনেকে সরিষা আবাদ করেছেন। আছে পুকুর-ডোবাও। এসব পুকুর-ডোবায় খেলা করছে হাঁসের ঝাক। প্যাক প্যাক ডাকে পুকুরে ডোবায় ভেসে জানান দিয়ে যাচ্ছে তাদের অবস্থান। অনেকের বাড়ির আঙিনায় দেখা গেছে গরু ও খড়ের গাদা।
নেই কোনো পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ডাস্টবিন কিংবা রাস্তাঘাট। দীর্ঘদিন সড়কবাতি না থাকলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি কিছু সড়কবাতি লাগানো হয়েছে।
মদন পৌরসভা কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, ১০ দশমিক ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌর এলাকার গত আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ১৭ হাজার ৩৮৮ জন।
জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ৪৭৬ জন। এখানকার বেশিরভাগ মানুষের পেশা কৃষি। এলাকার বেশিরভাগ ভূমি কৃষিনির্ভর, নেই কোনো উৎপাদনশীল কারখানা কিংবা প্রতিষ্ঠান।
‘গ’ শ্রেণির এ পৌরসভার নাগরিকেরা এখনও তেমন কোনো সেবা পান না।
স্থানীয় এনজিও কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম নামে বাংলানিউজকে জানান, এখানে আর্সেনিকের ঝুঁকি বেশি। এরপরও নলকূপই সুপেয় পানির একমাত্র ভরসা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো ব্যবস্থা নেই। পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাও খুবই নাজুক।
জাহাঙ্গীরপুর বাজারের সেন্টার পয়েন্টের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কোনো সেবাই পাই না। উল্টো কয়েকদিন পর পর ট্যাক্স বাড়িয়ে দেয় পৌরসভা। একটা ডাস্টবিন পর্যন্ত নেই।
‘নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান মেয়র এলাকার মূল রাস্তায় সড়কবাতি লাগিয়েছেন। আর গ্যাস তো নেই-ই। রাস্তাঘাটের অবস্থাও খুব একটা ভালো না’- বলেন তিনি।
পৌরসভা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখানে কাঁচা ড্রেন আছে ৪ কিলোমিটার, প্রাইমারি খাল ৫ কিলোমিটার, আরসিসি ড্রেন মাত্র এক কিলোমিটার আর ব্রিক ড্রেন আছে পাঁচ কিলোমিটার।
পৌরসভার সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানান, শহরে মোট ৪৯ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। ১০ কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা। তবে এগুলো সংস্কারে কাজ চলছে।
পৌরসভার ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, মদন পৌর এলাকায় ১২৯টি পাকা বাড়ি আছে। আর কাঁচা বাড়ি ১ হাজার ৩০০টি, আধাপাকা বাড়ি রয়েছে ১ হাজার ৭৬৬টি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘শহরে’ কোনো নির্দিষ্ট ডাস্টবিন নেই। রাস্তার ধারে বিভিন্ন খোলা জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলেন স্থানীয় লোকজন।
পৌরসভার মদন বাজারে কয়েকটি ড্রেন চোখে পড়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল।
অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মো. আবদুল জব্বার বলেন, ‘ট্যাক্স দেই, সময় সময় তা বাড়েও। কিন্তু সেবার মান বাড়ে না’।
এদিকে ভোটারদের এসব চাওয়া-পাওয়াকে পুঁজি করে আসন্ন পৌর নির্বাচনের প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি আর উন্নয়নের ফিরস্তি তুলে ধরছেন।
তবে ভোটাররা বলছেন, এবার তারা দেখে-শুনে এবং যোগ্য প্রার্থীকেই নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যারা তাদের পৌরসভাকে সত্যিকারের ‘পৌরসভার’ স্বাদ এনে দেবেন।
পৌরসভায় সত্যিকার পৌরসেবা না দেওয়ার বিষয়ে বর্তমান মেয়র ও আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন শফিক বলেন, পৌর এলাকার উন্নয়নে যেটুকু অনুদান পাওয়া যায়, তা দিয়েই কাজ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে নির্বাচিত হলে পৌরবাসীর উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
প্রায় ১২ হাজারের বেশি ভোটারের মদন পৌরসভা নির্বাচনে এবার পাঁচজন প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচন করছেন।
তারা হলেন- আওয়ামী লীগের একেএম সাইফুল ইসলাম শামীম, বিএনপির মাশরিকুর রহমান বাচ্চু, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হান্নান তালুকদার শামীম, বর্তমান মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন শফিক এবং জাতীয় পার্টির মো. ফিরোজ খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এমএ/এএসআর
** ‘নির্বাচনে চা বেচা তো বাড়ছে না’
** ভেদাভেদ ভুলে সমান তালে নৌকা-ধানের শীষ
** ত্রিমুখী লড়াইয়ে সরগরম ভোটের মাঠ
** আ’লীগ-বিএনপি নয়, লড়াই ‘ইছা-পচার’
** ‘হারা বছর হবর নাই, এবার বুইজ্জা হুইন্না ভুট দিয়াম’
** ডিজিটাল নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা