কাহালু থেকে ফিরে: সেলিনা, ইয়াসমিন, আঞ্জুয়ারাসহ একদল নারী নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী পথসভা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। অপরদিকে ধানের শীষের নির্বাচনী পথসভা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন আসমা, নূরজাহান, ফরিদাসহ আরেকদল নারী।
নৌকার পক্ষের নারীরা ফিরছিলেন স্থানীয় মহিলা কলেজ প্রাঙ্গন থেকে আর স্থানীয় চারমাথা ষ্ট্যান্ড থেকে ফিরছিলেন ধানের শীষের পক্ষের নারীরা।
এই দু’পক্ষের পাশ দিয়ে আরেকদল নারী পায়ে হেঁটে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। হেলেনা, মারুফা, সাবিনা তাদেরই কয়েকজন। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। কিন্তু ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কেউই মুখ খোলেন নি।
তবে তারা আক্ষেপের সুরে বলেন, নারীদের ভোট ছাড়া কেউ ক্ষমতায় যেতে পারেন না। অথচ ক্ষমতায় গেলে তারা নারীদের মূল্যায়ন করেন না। কোনো কাজ নিয়ে গেলে খালি নাক সিটকান। এখন তখন বলে পাশ কাটিয়ে চলেন। তাই আগে মেয়র প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাঁপ দেখি। এরপর ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত। তারা অপেক্ষাকৃত যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবেন বলে জানান।
এদিকে স্থানীয় রেলস্টেশন বাজার এলাকায় একাধিক দল বেঁধে ভোটের আড্ডায় মেতেছিলেন অসংখ্য পুরুষ ভোটার। মেয়র প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নিয়ে নানান জন নানান হিসাব নিকাশে ছিলেন ব্যস্ত। কিন্তু এবার মেয়র নির্বাচনে নারী ভোটাররাই ফ্যাক্টর বলে মন্তব্য করেন অনেক পুরুষ ভোটার।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) বগুড়ার কাহালু পৌরসভার নির্বাচনী হালচাল সম্পর্কে জানতে সরেজমিনে গিয়ে নানা শ্রেণি পেশার ভোটারদের সঙ্গে কথা হলে এমনই তথ্য ওঠে আসে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী হারেজ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান মেয়র আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হেলাল উদ্দিন কবিরাজ এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। সে হিসেবে এবারো তিনি জয়লাভ করার কথা। তবে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কেননা তার প্রতীক ধানের শীষ। যে প্রতীকের প্রতি বগুড়ার মানুষের আলাদা দুর্বলতা রয়েছে। তবে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী থাকায় নৌকা প্রতীকের জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে নি মনে করেন।
চা-দোকানি ফেরদৌস বাংলানিউজকে জানান, ভোটের সময় তাদের মত গরীবদের দামই আলাদা। প্রার্থীদের সেবাযত্নে অনেক সময় তারা অতিষ্ট হয়ে ওঠেন। প্রার্থী ও তার কর্মীরা গণহারে চা পান করেন। কাপ থেকে চা শেষ হওয়ার আগেই যেন দাম পরিশোধ করে দেন। কিন্তু ভোট শেষে ক্ষমতায় গেলে দ্রুতই তাদের কথা ভুলে যান তারা। এরপরও তো ভোট দিতে হবে। শেষদিকে গিয়ে যিনি এগিয়ে থাকবেন তাকে ভোট দেবেন এই চা-দোকানি।
মুদি দোকানী আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াতের লোক। সে হিসেবে পৌরসভায় দলটির বেশ ভোট রয়েছে। মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে তাদের একজন প্রার্থীও হয়েছেন। তবে জেলে থাকায় প্রচার-প্রচারণায় খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। কিন্তু জামায়াতের এই প্রার্থী বিএনপির প্রার্থীর জন্য জয়ের ক্ষেত্রে একটা বড় বাঁধা। এসব হিসেবে করলে এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের পাল্লা বেশি ভারী। এরপরও ভোটের ক্ষেত্রে শেষ বলে তো কোন কথা নেই।
এসব ব্যক্তিরা বাংলানিউজকে জানান, এই পৌরসভায় পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে নারীদের একটি বিশাল অংশ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। আর তাদের ভোট প্রার্থনার ধরণও আলাদা। তারা সাধারণ ভোটারদের অত্যন্ত সহজ সাবলীলভাবে বুঝিয়ে স্ব স্ব প্রার্থীর পক্ষে ভোট কামনা করেন। যা পুরুষরা পারেন না।
তারা জানান, পুরুষরা প্রথমে গিয়ে প্রার্থীর পক্ষে ভালোভাবে ভোট চান। এরপর ভোটারের আবভাব বুঝে প্রার্থীর কর্মীরা সেই ভোটারের সঙ্গে উল্টাপাল্টা কাজ শুরু করে দেন। প্রয়োজনে হুমকি ধামকি দিতেও পিছপা হন না। কিন্তু নারী কর্মীরা ভোট প্রার্থনার কাজটি করেন অত্যন্ত সুন্দরভাবে। তাই এই নির্বাচনে এবার মেয়র প্রার্থী জয়ের ক্ষেত্রে নারীরাই মুখ্য ভুমিকা রাখবেন বলে এসব ব্যক্তিরা মনে করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এমবিএইচ/বিএস