ঢাকা: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সমন্বয় বৈঠকে কর্মকর্তাদের পোলাও এর সঙ্গে সাত পদ পরিবেশন করা হয়েছে। আর কর্মচারীদের বেলায় মাত্র এক পদ।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগেও অনেকবার এমনটি হয়েছে। সে সময় অনেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কছে এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। এতে অনেককে আবার মাশুলও গুণতে হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের চাকরি সেবামূলক। এখানে কর্মচারীরা রাত-দিন পরিশ্রম করেন। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষ্যেও কয়েকদিন শেষরাত অব্দি অনেকে কাজ করেছেন। যে কোনো নির্বাচন এলেই এটা নিয়মেই পরিণত হয়। এছাড়া নির্বাচনের কয়েকমাস আগে থেকেই তারা দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে থাকেন। তাদের সঙ্গে বাদ যান না গাড়ির ড্রাইভাররাও। আবার কর্মকর্তা বা নির্বাচন কমিশনাররা ঢাকা বাইরে ট্যুরে গেলে পরিশ্রমেরও শেষ থাকে না বললেই চলে।
এতো কাজ করার পরও কমিশনের চাকরিটা অনেকটা থ্যাংকসলেস। এখানে অতিরিক্ত কাজ করাটাই প্রয়োজন। তাই বড় কোনো বৈঠক হলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সঙ্গে কর্মচারীরাও একটা উৎসবের আমেজ অনুভব করেন। কিন্তু এই আনন্দের মাঝে যদি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়, তখন তাদের কষ্টের যেন সীমা থাকে না।
কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেই এসব জানা গেল। তাদের ভাষ্যমতে, কর্মকর্তা আর কর্মচারী এক নয়, সেটা তারাও ঠিকই বোঝেন। কিন্তু সেই পার্থক্যটা যদি খুব বেশি হয়ে যায়, অবজ্ঞাসূচক হয়, তবে মনটা ছোট হয়ে যায়। কাজ করার কোনো উৎসাহ থাকে না। একটা নির্বাচনে শত কোটি টাকার ওপরে বাজেট থাকে। সেখান থেকে চার-পাঁচশ লোকের খাবারের জন্য আর কতই বা ব্যয় হয়।
তাদের অবজ্ঞা করার বিষয়টা যে মিছে নয়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল বৈঠকের আপ্যায়ন পরিকল্পনা পত্র থেকে।
বৈঠকে বিভিন্ন বাহিনী ও ইসির ৪১৭ কর্মকর্তা এবং তাদের গাড়ির ড্রাইভার, সহকারী, বডিগার্ড মিলিয়ে ৪২৪ জন লোকের খাবারের আয়োজন করা হয়।
কর্মকর্তাদের জন্য রাখা হয় পোলাওয়ের সঙ্গে চিকেন রোস্ট, মাটন রেজালা, মাটন কাবাব, সব্জি, বোরহানী ও ড্রিংকস এই সাত রকমের দুপুরের খাবার। এক্ষেত্রে জনপ্রতি ৫৭৯ টাকার হারে মোট ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৩ টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া তাদের জন্য নাটি বিস্কুক আর কফির ব্যবস্থাও ছিলো। আর কর্মচারীদের জন্য রাখা হয় কেবল মোরগ পোলাও।
হল ভাড়া, ভিআইপি ক্যান্টিন চার্জসহ সব মিলিয়ে বৈঠকের পেছনে ইসির ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৯৪৩ টাকা।
ইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ ক’জন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের একেকটা বৈঠকে অনেক বড় আয়োজন থাকে। অনেক টাকাও ব্যয় হয়। অথচ কর্মচারীদের মানসিকভাবে হেয় করা হয় বারবার।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪ পৌরসভা একযোগে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার করণীয় নির্ধারণেই শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) ওই বৈঠকটি আয়োজন করে ইসি। যা রাজধানী ইস্কাটনের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০১১২, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
ইইউডি/আরআই