নোয়াখালী: অনিয়ম, ককটেল বিস্ফোরণ, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, পাল্টাপাল্টি হামলা, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে নোয়াখালীর চারটি পৌরসভার (চৌমুহনী, হাতিয়া, বসুরহাট ও চাটখিল) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসব ঘটনায় এক মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছে।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা চার পৌরসভার ৫২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষিপ্ত ঘটনায় আহতরা হলেন, চৌমুহনী পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী আসমা আক্তার, হাতিয়ার দুলাল (২৫), ফয়সাল (১৫), আজাদ (১৫), রাহিম উল্লা (৪০), মিজান (৩৫), আলা উদ্দিন (৫০), খোকন (৩০), দিদার (৩৮) ও জসিমসহ (৩৯) ৩৫ জন।
সরজমিনে দেখা যায়, চৌমুহনী পৌরসভায় সকালে শীত উপক্ষো করে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন সাধারণ ভোটাররা। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটরদের উপস্থিতি বাড়লেও কয়েকটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কে কেন্দ্র ত্যাগ করে ভোটাররা।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চৌমুহনী পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর ভোটকেন্দ্র উত্তর নাজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুই নম্বর ভোটকেন্দ্র উত্তর নাজিরপুর নুরানী মাদ্রাসার আশপাশে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার রিয়াজ রায়হান, নোয়াখালী টিভি সাংবাদিক ফোরাম সভাপতি ও এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি তাজুল ইসলাম মানিক ভূঁইয়াসহ ৫ সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে বহিরাগত যুবলীগ নামধারী নেতাকর্মীরা।
এদিকে, বিভিন্ন কেন্দ্রে মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা প্রভাব খাটিয়ে জাল ভোট প্রদান, ককটেল বিস্ফোরণ, কেন্দ্র দখলের চেষ্টার অভিযোগে ১০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়ে।
সকাল ১০টার দিকে চৌমুহনী উত্তর নাজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর নাজিরপুর নুরানী মাদ্রাসা, ১১টার দিকে উত্তর হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২টার দিকে বেগমগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ১২টার দিকে গণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুপুর ১টার দিকে মধ্যম করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ), দক্ষিণ নাজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, দুপুর ২টার দিকে চৌমুহনী সরকারি এসএ কলেজ কেন্দ্র পুরাতন ভবন, বিকেল ৩টায় ৭নম্বর মধ্য করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (মহিলা), চৌমুহনী সরকারি এসএ কলেজ নতুন ভবন কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
সকালে চৌমুহনীর উত্তর হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিল প্রার্থীর কর্মীরা কেন্দ্রে দখল করে ভোট দিতে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী আসমা আক্তারসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়।
অপরদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বসুরহাট পৌরসভার মাকসুদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী নূর হোসেন খোকন ও আবুল খায়েরের সমর্থকদের ধাওয়ার পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় তারা কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর, ককটেলের বিস্ফোরণ ও মেয়র প্রার্থী আব্দুল কাদের মির্জার নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগ করে।
দুপুর ২টার দিকে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে বসুরহাট পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জহির উদ্দিন বাবর (বিএনপি), আলমগীর হোসেন (আ’লীগ) ও আব্দুল মন্নান (জামায়াত) ভোট বর্জন করেন।
অন্যদিকে, দুপুর ২টার দিকে হাতিয়ার পৌরসভার চৌমুহনী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এসময় ৫ গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও চৌমুহনী পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন ভোট প্রদানে অনিয়মের কারণে চৌমুহনী পৌরসভার ১০টি ভোট কেন্দ্রের ভোট স্থগিতের বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
এসএইচ