সিলেট: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহীদের ঠেকাতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংগঠনের কঠোর হুঁশিয়ারি, এমনকি বহিষ্কার হলেও ভোটের মাঠ ছাড়ছেন না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা।
দ্বিতীয় দফায় ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহীদের কারণেই নৌকার ভরাডুবি হয় সিলেট বিভাগে। ওই নির্বাচনে বিভাগের ৪৩টি ইউনিয়ন পরিষদের ২৩টি হাতছাড়া হয় আওয়ামী লীগের। আসন্ন তৃতীয় দফার নির্বাচনে বিদ্রোহীর সংখ্যা বেড়েছে।
এ ধাপের ৭৭টি ইউনিয়নের এক তৃতীয়াংশতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিদ্রোহীরা। এদের মধ্যে নারী এবং প্রবাসী নেতারাও প্রার্থী হয়েছেন। বিভাগের উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী নবীগঞ্জে ১৭ জন। এরপর সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে ১৬ জন ও মৌলভীবাজরের বড়লেখায় ১৫ জন। সবচেয়ে কম সংখ্যক তিনজন করে বিদ্রোহী রয়েছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও সিলেটের জৈন্তাপুরে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পাঁচটি ইউপির সবক’টিতে একজন করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে সিলাম ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত শাহ ওলিদুর রহমানকে চ্যালেঞ্জ করে ঘোড়া মার্কায় চড়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন বিদ্রোহী মো. মুজিবুর রহমান। জালালপুরে নৌকার প্রার্থী ওয়েস আহমদের সঙ্গে বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন মোহাম্মদ নেছারুল হক (ঘোড়া)। লালাবাজারে নৌকা প্রতীকের তোয়াজিদুল ইসলামের বিদ্রোহী হয়েছে আব্দুল মুহিত (আনারস)। মোগলাবাজার ইউপিতে নৌকায় সদরুল ইসলামের প্রতিপক্ষ হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম শায়েস্তা (ঘোড়া)। দাউদপুরে নৌকার আতিকুল হককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম (আনারস)।
বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে কম বিদ্রোহী প্রার্থী জৈন্তাপুরে। এ উপজেলার পাঁচটি ইউপির তিনটিতেই একক প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে, দু’টিতে নির্বাচন করছেন দলের তিন বিদ্রোহী। এরমধ্যে জৈন্তাপুর সদর ইউনিয়নে আব্দুর রাজ্জাক রাজার (নৌকা), তার বিদ্রোহী আব্দুল কাইয়ূম (টেলিফোন) ও চিকনাগুলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে ভোটে লড়ছেন দলের বিদ্রোহী বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আমিনুর রশীদ (দু’টিপাতা), ফয়জুল হাসান (ঘোড়া)।
গোয়াইনঘাটের ছয়টির সব কটিতেই ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন একজন করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এরমধ্যে রুস্তুমপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাসুক আহমদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন দলের বিদ্রোহী আব্দুল মতিন। ফতেহপুরে দলীয় প্রার্থী নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন বিদ্রোহী আমিনুর রহমান চৌধুরী। লেঙ্গুরা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন গোলাম কিবরিয়া রাসেল। নন্দিরগাঁওয়ে দলীয় প্রার্থী কামরুল হাসান আমিরুলের সঙ্গে বিদ্রোহী সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও হীরক দে। ডৌবাড়িতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুভাস দাশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম নিজাম উদ্দিন। তোয়াকুলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী লোকমান আহমদের বিদ্রোহী হয়েছেন শামসুদ্দিন আহমদ।
এছাড়া বিভাগের মধ্যে সুনামগঞ্জের সাত ইউনিয়নে নারীসহ ১১ বিদ্রোহী রয়েছেন। জেলার সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে রঙ্গারচর ও লক্ষণশ্রী ছাড়া অন্য সাতটি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ১১জন। তাদের সঙ্গেই নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়তে হচ্ছে দল মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের। বিদ্রোহমুক্ত একটি ইউনিয়নও নেই শান্তিগঞ্জে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কোনোটিতেই একক প্রার্থী দিতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই আটটি ইউপিতে দলীয় প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ করে ভোটে আছেন আওয়ামী লীগের ১৬ জন বিদ্রোহী।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে সুজানগর ছাড়া অন্য ৯টিতে বিদ্রোহী রয়েছেন ১৫ জন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টিতেই এককপ্রার্থী দিতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। আর একজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন দুটি ইউনিয়নে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের সাত বিদ্রোহী। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে দীঘলবাক ছাড়া অন্য ১২টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন দলের ১৭ বিদ্রোহী।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলা থেকে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। বিদ্রোহীরা বিজয়ী হলেও তাদের আর দলে ফেরার সুযোগ নেই। তাদের স্থায়ীভাবে দল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্র নেবে।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন, বিদ্রোহীদের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য আমরা কেন্দ্রের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। কেন্দ্রের নির্দেশ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের সম্পর্কে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট বলেন, অনেক ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর নামের তালিকা পাঠাতে বা সুপারিশ করতে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। এ কারণে কোনো কোনো স্থানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২১
এনইউ/আরএ