অভিনেতা ওমর সানী অভিনেত্রী মৌসুমীকে বিয়ে করার পর খেই হারিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ মৌসুমীকে বিয়ের পরেই ওমর সানী ক্যারিয়ার সামাল দিতে না পেরে মানসিকভাবে দ্বিধায় পড়ে যায়।
শুধু তাই নয়, ওমর সানী নায়ক নাকি মৌসুমীর জামাই, এমন প্রশ্নের উদ্রেকও ঘটেছে নূতনের ফেসবুক পোস্টে।
সম্প্রতি প্রিয়তমা শব্দটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অভিনেত্রী অঞ্জনার সঙ্গে সামাজিকমাধ্যমে কথা চালাচালি হয়। এরই প্রতিক্রিয়ায় ওমর সানীকে বুদ্ধিজীবী খেতাব দেওয়ার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দেন।
সেখানে নূতন বলেন, ওমর সানিকে বুদ্ধিজীবী খেতাব দেওয়ার দাবি জানানো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ওমর সানী আমার ছোট ভাই, খুব আদরের, আমি ওরে বাংলাদেশ ফিল্মে জন্মাইতে দেখেছি। এটা একটু অহংকার নিয়েই বললাম। ‘ইমরান’ ছিল ওর নাম। এফডিসিতে আসা, কাজ করা, সব চোখের সামনেই। যাই হোক, সে তার একটা অবস্থান করেছে, অভিনেতা হয়েছে। বাম হাতে সালাম দিত, তাই বেয়াদব ভাবতাম, পরে দেখলাম না ভালো ছেলে, তবে বেঁকাতেড়ারা বাম পাশ দিয়েই চলে।
ওমর সানী রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য উল্লেখ করে অভিনেত্রী বলেন, এমন কিছু অভ্যাস আমারও আছে। ভাবি বলে সম্মান করে আমায়, আমি ভাই বলে জানি। সম্মানে তার কমতি নেই, তাই দোয়া তার জন্য চিরকাল। তাকে আমি ভালোবাসি তার প্রমাণ, সানী কোনো দিন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অভিনেতা হিসেবে পেয়েছে কি না আমি জানি না। শেষ ২০১৪ পর্যন্ত আমি জানি সে পায়নি। তা নিয়ে আমার অনেক জায়গায় আক্ষেপ ছিল। কেন তাকে দেওয়া হয়নি? সে কি যোগ্য না, সেটা যারা দেয় তারা জানেন ভালো করে। তবে সে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য। সে সম্মাননা না পেয়ে থাকলে পাবে ইনশাআল্লাহ।
মৌসুমীকে বিয়ের খেসারত দিতে হচ্ছে ওমর সানীকে- এমনটাই উল্লেখ করে নূতন বলেন, সানীর জীবনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ও প্রভাব আসে যখন সে মৌসুমীকে বিয়ে করে। মৌসুমীকে বিয়ের পরদিন উজ্জ্বল চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার, আর সানীর খানিকটা পড়ে যাওয়া ক্যারিয়ার সামাল দিতে না পেরে মানসিকভাবে দ্বিধায় পড়ে যায়। যার খেসারত সে মানসিকভাবেই প্রতিনিয়ত দিচ্ছে। তাকে অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে।
অভিনেত্রী ওমর সানীর পরিচয় খুঁজতে গিয়ে বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সে মানসিকতার খেসারত বা ভালোবাসা দেখানোর জন্য নিজের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা স্বঘোষিত মেধাবী দাবি করে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, ওমর সানী কি ফিল্ম হিরো না মৌসুমীর জামাই? সে কি অভিনেতা না বুদ্ধিজীবী? সে কি আইনজীবী না বিচারক? নিজের কাছে সে কী বা নিজেকে সে কী ভাবে তা হয়তো সময় বলে দেবে বা প্রকাশ পাবে।
সাম্প্রতিক ইস্যুতে ওমর সানীর বিষয়ে নূতন লেখেন, মানুষের অনেক গুণ থাকতে পারে। বিচারক বা বুদ্ধিজীবী হওয়ার মতো জ্ঞান হয়তো তার বিকশিত হবে বা হচ্ছে, আস্তে আস্তে। তবে আমার কাছে সে আমার ভাই, সে একজন সিনেমার হিরো। এবার আসি মূল পর্বে। সানী নব্য একটা সেক্টর বা বুদ্ধিবৃত্তিক নামকরণ করার ঝুঁকি নিয়েছেন তার জন্য সাধুবাদ।
প্রিয়তমা প্রসঙ্গ অবতারণা করে বলেন, কীভাবে এই নামকরণ আসছে তার বিস্তারিত আমার জানা নেই। তবে সানীর থেকে এই চিন্তা এলে তাকে বুদ্ধিজীবী খেতাব দেওয়ার দাবি জানানো যেতে পারে। কারণ আমি সানীর লেখা দেখেই এই নামকরণের সঙ্গে পরিচিত হলাম। যে ফিল্মে প্রিয়তমা। প্রিয়তমা কী? এর সংজ্ঞা কী? বা কী-কীভাবে তা হয়? বা আদৌ এই নামের কোনো ব্যাখ্যা আছে কি না? তা আমার জানা নেই তবে ‘সানীর’ নামকরণের ফর্দ দেখে মনে হলো, ওই একই [যাহা ফাইভ তাহাই পাঁচ]।
ওমর সানীর দ্বিধাগ্রস্ততা প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রী আরো বলেন, যাই হোক, এ স্ববিচারিক প্রক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আমার বন্ধু সুপারস্টার অঞ্জনা। অঞ্জনা যে বিষয় নিয়ে রাগ করেছে বা অভিমান প্রকাশ করেছে তা নিয়ে আমি মোটেও বিচলিত নই। কারণ এই নামকরণের ভিত্তি কতটা তা আমার জানা নেই। আর ৫০ বছরের চলচ্চিত্র জীবনে আমি এই নামের অস্তিত্ব পাইনি। বা সানী হয়তো- ওই যে বললাম মানসিকতার খেসারত দেওয়ার মধ্যে আছে তাই। এমন একটা চিন্তার উদ্ভব ঘটিয়েছেন।
নতুন প্রজন্মকে সঠিক তথ্য জানানোর জন্য এই পোস্ট উল্লেখ করে নূতন বলেন, সেটা যে যার মতো অভিব্যক্তি, মতামত প্রকাশ করতেই পারেন। কে কাকে উচ্চতর আসনে বসাবেন কাকে বসাবেন না সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে আমার এই লেখায় ঘোষিতভাবে দ্বিমত প্রকাশ করার একটাই কারণ। অনেক নতুন প্রজন্ম আছে, তারা সঠিক কিছু জানতে চায়, তারা ফিল্মের মানুষদের ভালোবাসে, বিশ্বাস করে, তাই তাদের সঠিক কিছু জানিয়ে দেওয়া জরুরি।
ফিল্মের চেইন জানা জরুরি- সানীকে এমন পরামর্শ দিয়ে নূতন বলেন, কে -কাকে ভালোবাসল, কী ভাবল তা পরের কথা, তবে সঠিক বিষয়টা জানানো জরুরি। বা অভিনেত্রীর বাইরে একজন মানুষ বা দর্শক হয়ে আমরাও জানতে চাই- আমাদের অবস্থান আসলে কী? এবার একটু ফুটানি নিয়ে বলি। সানী বাবারে আগে জানো ফিল্মের চেইন কী? শাবানা, ববিতার নাম নিয়ে পাবলিক সিম্প্যাথি নেওয়া শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ, এসব ফেসবুকেই মানায়, বাস্তবে মানসিক দুর্বলতা প্রকাশ পায়।
তিনি বলেন, আমি এখন মান্না বা সালমানকে ভালো বলে তোমায় গালি দিলে মানুষ বাহবা দেবে আমার সঙ্গে তাল মেলাবে, তবে তাতে আমি সাময়িক খুশি হলেও আমার বুদ্ধিমানদের কাছে আমার ব্যক্তিত্ব ও দুর্বল মানসিকতা প্রকাশ পাবে। (শাবানা, শবনম, ববিতা, কবরী, রোজিনা, অঞ্জনা, সুচরিতা, অলিভিয়া, সুচন্দা, চম্পা, রোজি সিদ্দিকী, মায়া হাজারিকা, সুমিতা- আমার কথা বাদ, আমি খুব সামান্য, এদের অনেক অনেক পরের অবস্থান আমার ছোট প্রিয় আদরের বোন মৌসুমী, তারপরে বাকিদের অবস্থান।
ওমর সানীর উদ্দেশে নূতন আরো বলেন, তুমি যখন ‘সুচিত্রা সেন’কে নিয়ে আসছ, মানে কলকাতা। তাহলে তো তোমার এই চেইনে আরো মিনিমাম ১০টা নাম যুক্ত হবে, যাদের সঙ্গে সিনেমার সব বিশেষণ যুক্ত হবে। তাদের চেনো না হয়তো ভালো করে বা জানা নেই। তারপর অনেক অনেক পরে আসবে তোমার বিচারিক নাম, যদিও তোমার বিচার বা লেখা তুমি লিখতেই পারো, আমি যেমন লিখলাম। তবে তোমার এই স্বঘোষিত বিচারিক প্রক্রিয়া আমাকে আবার জানান দিল যে তুমি মানসিকভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে আছ। মৌসুমী নিঃসন্দেহে গুণী অভিনেত্রী এবং সুন্দরী, আমি তার ভক্ত, শাবনূরকে আমি কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনুসরণ করি, শাবনূর কোটিতে একজন। পূর্ণিমা গুণী। কাকে কার সঙ্গে মেলাতে হয় তা বুঝতে হবে।
মৌসুমীর নামকে তিতা বানিয়ে ফেলেছেন ওমর সানী। এমনটাই জানিয়ে নূতন বলেন, মৌসুমীর এই গুণ আর ব্যক্তিত্বকে সস্তা বিচারিক প্রক্রিয়ায় বলার জন্য বলে বা লেখার জন্য লেখে বারবার জানান দিয়ে তিতা করার এই তিতা মানসিকতা প্রকাশ না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে তুমি মৌসুমীর নামটাকে তিতা বানিয়ে ফেলছ। আমি এই কথা রাগ বা অভিমান নিয়ে বলিনি, আমি খুবই সাধারণ, সামান্য, আমি কিছুই না।
ভেবে-চিন্তে বলতে হয়- ওমর সানীকে এমন পরামর্শ দিয়ে নূতন বলেন, তবে আরো অনেক আছে, যাদের নাম ভেবে-চিন্তে নিতে হয়। সেই ভাবনা-চিন্তার জ্ঞানের পরিধি তোমার সীমিত। যেহেতু তোমার কিছু ফেসবুক অনুসারী আছে, তারা না বুঝে সায় দেয়, তাই তাদের সঠিক কিছু জানাও যেন তারা ভুল না জানে। আর নিজে জেনে নাও। তা না হলে কর্মের ফলে কিছুদিন পর, বছরও না, তোমার নাম ভুলে যাবে এবং মৌসুমীর অসম্মান হবে। তোমার নাম ভুলে যাক তা আমি চাই না, মৌসুমীর ওপর কারো বিরূপ ধারণা জন্মাক তা-ও চাই না। আমি তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসি। আই লাভ ইউ আমার ভাই চলচ্চিত্র অভিনেতা ওমার সানি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৩
এনএটি