ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

মঞ্চ থেকে হাসিনার ফাঁসি দাবি জুলাইয়ে আহতদের

পৌষের রাতকে উষ্ণতার চাদরে ঢেকে দিলেন রাহাত ফতেহ আলী খান 

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
পৌষের রাতকে উষ্ণতার চাদরে ঢেকে দিলেন রাহাত ফতেহ আলী খান 

উপমহাদেশে সুফি সংগীতে ফতেহ আলী খান পরিবার কয়েক দশক ধরে সুরপিয়াসিদের হৃদয় নিয়ন্ত্রণ করছেন নিজেদের সুরের জাদুতে। আর সেই পরিবারের সদস্য রাহাত ফতেহ আলী খান এদেশে আসবেন আর গাইবেন সেটা অবশ্যই বাংলাদেশি সংগীত সমঝদারদের জন্য নিঃসন্দেহে আরাধ্য।

সুর যখন হৃদয় ছুঁয়ে যায়, ধ্যানমগ্ন করে,  হৃদয়ের গহীনে ভালোবাসার অনুরণন তৈরি করে তখন সেই সুরের কারিগর অগণিত ভক্ত ও শ্রোতাদের কাছে আরাধ্যের বিষয়ই হয়ে থাকে।

সুজলা সুফলা বাংলাদেশেও পূর্ব পুরুষদের ধারাবাহিকতায় নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হলেন রাহাত ফতেহ আলী খান। এদেশীয় শ্রোতাদের বুকের জমিনে নিজের মজবুত ভিত্তি তৈরি করে শ্রোতাদের হৃদয়পটকে রীতিমতো শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করছেন রাহাত ফতেহ আলী খান।

এ কারণে গেল কয়েকদিন এদেশের সুরের কাঙ্গালরা রাহাত ফতেহ আলী খান জ্বরে ভুগছিলেন। আর আজ শনিবার রাতে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে সুরের সমুদ্রে স্নাত হয়ে সেই জ্বর নেমে গেলো।

উপমহাদেশের সংগীত কিংবদন্তি সুফি গানের দিকপাল নুসরাত ফতেহ আলী খানের ভাতিজা রাহাত ফতেহ আলী খানের সুরের মূর্ছনায় নিজেদের বিলিয়ে একাকার করে দিয়ে সংগীত ও শিল্পীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন বাংলাদেশের সুরের তৃষ্ণার্তরা।

প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রাহাত ফতেহ আলী খান এলেন, গাইলেন, সুরের বৃষ্টিতে অগণিত শ্রোতাদের ভিজিয়ে দর্শক শ্রোতাদের মানসপটে তাল, লয় ও মেলোডির ঢেউ তুলে দিয়ে পৌষের কনকনে শীতের রাতকেও উষ্ণতার চাদরে ঢেকে দিলেন।  

জুলাই অভ্যুত্থানে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশের জন্য এক সমুদ্র সুরের ঢেউ তুলে দিয়ে ফের নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন রাহাত ফতেহ আলী খান।  

ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটাতে গিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে গঠিত জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তহবিল গঠনে "ইকোস অব রেভল্যুশন" শিরোনামের এই কনসার্টের আয়োজন করে স্পিরিটস অব জুলাই প্ল্যাটফর্ম।  

শনিবার ঢাকার এই কনসার্টে গান দিয়েই সুরের ঝাঁপি খোলেন সুরের জাদুকর রাহাত ফতেহ আলী খান। এরপর পর্যায়ক্রমে পরিবেশন করেন ভক্ত ও শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরা নিজের জনপ্রিয় সব গান। আর জনপ্রিয় সেসব গানের মধ্যে 'মেরে রিশকে কামার, আফরিন আফরিন, ওরে পিয়ারে, তুম জো আয়ে, দিল লাগি, আস পাস খুদা, তেরে মাস্ত মাস্ত দোনে, সানু ইক পাল চ্যায় না, দিল দিয়া গাল্লাসহ নিজের সব জনপ্রিয় গানের সুষমায় ধ্রুপদী করে তোলেন পৌষের রাতকে।

যাদুকরি কণ্ঠের অনন্য গায়কীতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ রাতের আর্মি স্টেডিয়ামে মায়ার জাল ছড়িয়ে দেন ২০০৩ সালে "পাপ" সিনেমার "মন কি লাগান" গানের  মাধ্যমে বলিউডে প্লেব্যাকে নিজের অভিষেক ঘটানো এই গানওয়ালা। দর্শক শ্রোতাদের "ওয়ান মোর ওয়ান মোর" ধ্বনিতে গানের আবেদন আর অনুরোধে কণ্ঠ থেকে সুর ছড়াতে কার্পণ্য করেননি পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জন্ম নেওয়া এই সুফি শিল্পী। কাওয়ালি ও বলিউড সিনেমার গানের সংমিশ্রণে ভিন্ন এক আবহ তৈরি করেন আর্মি স্টেডিয়ামে।

শিল্পী যেমন হৃদয় উজাড় করে কণ্ঠ থেকে সুরের সুধা ছড়িয়েছেন ঠিক তেমনই দর্শক শ্রোতারাও মুহুর্মুহু করতালিতে স্টেডিয়াম প্রকম্পিত করে শিল্পীকে অভিনন্দনে সিক্ত করেছেন।  

নন্দিত রাহাত ফতেহ আলী খানের আগে সিলসিলা ব্যান্ডের কাওয়ালি দিয়ে শুরু হয় কনসার্ট। তারপর একে একে গান পরিবেশন করেন র‍্যাপার হান্নান, র‍্যাপার সেজান, আফটারম্যাথ, চিরকুট, আর্টসেল ইত্যাদি ব্যান্ড দল।  

এর আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তৃতা করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, জুলাই অভ্যুত্থানে হাত হারানো গাজী আতিক, শহীদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধ ও শহীদ আহনাফ ফাইয়াজের মা।  

সারজিস আলম বলেন, খুনি হাসিনার  গুলিতে আমাদের ভাইয়েরা নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়ে আমাদেরকে ফ্যাসিবাদের কবল থেকে রক্ষা করেছেন। যার কারণে তাদের কাছে আমাদের অনেক ঋণ।  

মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন,  জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার লক্ষ্যেই এই ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশন কখনো নগদ টাকা গ্রহণ করে না। বিকাশ, রকেট, নগদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের তহবিল গঠন করা হয়ে থাকে। আমরা গণ অভ্যুত্থানকে যেভাবে সফল করেছি সংস্কার প্রক্রিয়াকেও সেভাবে সফল করব।

হাত হারানো গাজী আতিকুল ইসলাম বলেন, লুটপাট গুম, হত্যা, চাঁদাবাজি কি করেননি ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা।  ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বৈরাচার হাসিনা সবকিছু করেছেন। পীলখানায় আমাদের ৫৭ জন গণহত্যা, শাপলা চত্বরে হাজার হাজার আলেমদেরকে হত্যা করে শেখ হাসিনা গোটা দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছেন। যেকোনো মূল্যে এদেশে খুনি হাসিনার বিচার করা হবে।  

খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, আরেক দেশে বসে থেকে খুনি হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে মানুষ হত্যার বিচার করতে হবে।  

শহীদ আহনাফ ফাইয়াজের মা বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাদের আশেপাশে স্বৈরাচারের যেসব দোসররা ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। খুনি হাসিনাকে ফাঁসি না দিলে আমার আহনাফ ফাইয়াজের মত কোনো শহীদের আত্মা শান্তি পাবে না। আমরা খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই।  

আবু সাঈদ, মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ ও ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই এমন স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা আর্মি স্টেডিয়াম।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।