বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মেলন ২০২৫’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
‘সংস্কারে চলচ্চিত্র, পরিবর্তনে দেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এই সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফিল্ম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। এতে অংশগ্রহণ নেন প্রায় ৫ শতাধিক চলচ্চিত্র শিক্ষার্থী, শিক্ষক, নির্মাতা, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র কর্মী, অভিনয় শিল্পীসহ চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত সকল অংশীজন।
এদিন বাংলাদেশ ফিল্ম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাদমান শিহির আগামী ৩ মাসের মধ্যে চলচ্চিত্রের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় করার দাবি জানায়। তার সঙ্গে সকল অংশীজন একমত হয়ে ১ দফা ১ দাবি অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারকে স্বতন্ত্র ‘চলচ্চিত্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ অতিসত্বর গঠন করার দাবি জানান।
কেবল তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলচ্চিত্রের কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে দাপ্তরিক জটিলতা বাড়ছে বলে জানায় বক্তারা।
চলচ্চিত্র মন্ত্রণালয় গঠনের পাশাপাশি ‘চলচ্চিত্র সংস্কার কমিশন’ গঠনের মাধ্যমে অংশীজন প্রস্তাবিত সংস্কার, ভবিষ্যৎ কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
এছাড়াও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন এর সংস্কার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের গঠন পরিবর্তন, সিনেমা ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন/ ই-টিকেটিং সার্ভার ও বক্স-অফিস, জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র, টিকিট শেয়ার মানি, চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রসার, গাজীপুর ফিল্ম সিটি, চলচ্চিত্র আমদানি-রফতানি উন্মুক্তকরণ , এন্টি-পাইরেসি সেল গঠন, চলচ্চিত্রে সরকারি বিনিয়োগসহ ১৮টির বেশি সংস্কার, কর্ম প্রস্তাবনা এবং দাবি উপস্থাপিত হয়। এছাড়া চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি ও মতামত প্রকাশ করেন।
‘জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মেলন ২০২৫’-এ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। প্রধান অতিথি হিসিবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম ও বিশেষ অতিথি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাদের রাষ্ট্রীয় কাজের ব্যস্ততার জন্য আয়োজনে উপস্থিত হতে পারেননি। তবে উপদেষ্টার কাছে সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা।
অনুষ্ঠানে অফিসিয়াল প্রোমো ভিডিও প্রদর্শনের পর তথ্য মন্ত্রণালয়ের সার্চ কমিটির আহব্বায়ক ও বাংলাদেশ ফিল্ম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আল আমিন রাকিব তনয়ের সঞ্চালনায় সকল অংশীজনের প্রস্তাবিত দাবি ও বাস্তবায়ন রুপ রেখা উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জারিন তাসনিম রোজা। এরপর জুলাই বিপ্লবের শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, আমি ঘটনাচক্রে উপদেষ্টা হলেও আমি আসলে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় চলচ্চিত্র সংস্কারে এবং তাকে প্রাধান্য দিতে এখনও ব্যর্থ। যখন আমি শুধু একজন নির্মাতা ছিলাম, তখন আমিও সরকারকে দোষারোপ করতাম; তবে সরকারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে অনুভব করেছি যে প্রতিনিয়ত নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
তিনি আরও বলেন, আমিও বিশ্বাস করি- চলচ্চিত্রের আলাদা মন্ত্রণালয় হওয়া উচিৎ। স্টেকহোল্ডারদের একটি নীলনকশা তৈরি করা উচিৎ, যার তত্ত্বাবধানে একটি কর্মশালার ব্যবস্থা করা হবে; যা আমাদের চলচ্চিত্র সংস্কারে প্রথম ধাপ হবে। বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাসোসিয়শনের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা আমাদের বাধ্য করেন যাতে আমরা তৎপর হই চলচ্চিত্র সংস্কারে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৫
এনএটি