‘ও যেন আর কষ্ট না পায়, উপরওয়ালা তাকে মুক্তি দিক-’ গুরুতর অসুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী ও পরিবার এমনটাই প্রার্থনা করছেন এখন। শুক্রবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের (পুরনো বাংলাদেশ মেডিক্যাল) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের বাইরে বসে বাংলানিউজকে এমনটাই জানিয়েছেন খোকনের সহধর্মিনী জয় ইসলাম।
মুখগহ্বরে মটর নিউরো ডিজিসে (এএলএস) আক্রান্ত হয়েছিলেন শহীদুল ইসলাম খোকন। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় হাসপাতালে নেওয়া হয় জনপ্রিয় এই নির্মাতাকে। দীর্ঘদিন ধরে বাসায় শয্যাশায়ী খোকনের অবস্থা ওইদিন শোচনীয় হয়ে পড়ে। এ কারণে তড়িঘড়ি হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করানো হচ্ছে।
খোকনের চিকিৎসক রাশিমুল হক রিমনের সূত্র দিয়ে জয় জানান, অক্সিজেনের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। হার্ট অ্যাটাক ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে খোকনের অবস্থা এখন আরও গুরুতর। রক্তচাপ কমে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। সব মিলিয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন তিনি। জয় আরও জানান, এই অবস্থায় বেঁচে থাকা বেশ যন্ত্রণার। এর থেকে মুক্তি পাওয়াই বরং উত্তম।
হাসপাতালে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন জয়। তার কথায়, ‘আমি জানি এখন তার কী পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে। দেশ-বিদেশ ঘুরেও কোনো ফল পেলাম না। এখনও যে বেঁচে আছেন এটাই শুকরিয়া। তার ব্যাপারে আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। উপরওয়ালা যেন এমন রোগ কাউকে না দেন। কারণ এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রচন্ড কষ্ট সহ্য করতে হয়। ’
জয় জানান, খোকনের শরীর এখন অনেকটা কঙ্কালসার। তাকে দেখে চেনার উপায় নেই। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মুখ দিয়ে পানিও খেতে পারছেন না। মস্তিষ্ক কাজ করলেও তার পক্ষে নড়াচড়া করা সম্ভব হচ্ছে না। সবার দোয়া আর ভালোবাসা এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে তাকে।
এদিকে দু’ একদিনের মধ্যে খোকনকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। জয় জানান, আইসিউয়ের বাড়তি সুবিধা পেতে ও খরচের কথা চিন্তা করে তারা এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করছেন খোকনের কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষী।
অন্যদিকে খোকনকে দেখতে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ছুটে যান চলচ্চিত্রের কয়েকজন তারকা ও পরিচালক। এর মধ্যে অন্যতম ওমর সানি, মৌসুমী, মুশফিকুর রহমান গুলজার, সোহনুর রহমান সোহান প্রমুখ। এ ছাড়া মোবাইলে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন চ্যানেল আইয়ের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। জয় জানান, অর্থের অভাবে খোকনের চিকিৎসা বন্ধ হবে না, তাদেরকে এমন আশ্বাস দিয়ে রেখেছেন সাগর। এমন আন্তরিকতায় কৃতজ্ঞ খোকনের পরিবার।
এর আগে খোকনের অসুস্থতায় এগিয়ে আসে সরকারও। ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় নেওয়া হয়। সেখানকার বেলভিউ হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই বলে তাকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন।
অক্টোবরের শেষ দিকে দেশে ফেরার পর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ডা. আরেফিনের তত্ত্বাবধানে শহীদুল ইসলাম খোকনের পাকস্থলীতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিউব স্থাপন করা হয়। এ টিউব দিয়েই তিন ঘণ্টা পর পর তাকে খাওয়ানো হচ্ছিলো।
ব্যক্তিগত জীবনে খোকন তিন সন্তানের জনক। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন কিছুদিন আগে। অন্য ছেলে ও মেয়ে পড়াশোনা করছে। উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে থাকেন তারা।
‘ঘাতক’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘লাল সবুজ’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘ভণ্ড’সহ দুর্দান্ত সব চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন খোকন। তার প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘রক্তের বন্দি’। এরপর তিনি রুবেলকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘লড়াকু’, ‘বীরপুরুষ’, ‘বজ্রমুষ্ঠি’, ‘বিপ্লব’, ‘অকর্মা’, ‘সতর্ক শয়তান’, ‘বিষদাঁত’, ‘টপ রংবাজ’, উত্থান পতন’ প্রভৃতি ব্যবসাসফল সিনেমা।
* লাইফ সাপোর্টে শহীদুল ইসলাম খোকন
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৬
এসও/জেএইচ