স্পট ‘ঢাকা অ্যাটাক’। ১৩ জানুয়ারি।
সেটের বাইরে মনিটর। সামনে দশ-বারোটা চেয়ারে যারা চুপচাপ বসে আছেন, তাদের মনোযোগি দৃষ্টি মনিটরে। ভেতরে এলাহী কান্ড। পুলিশ কন্ট্রোলরুমের সেট। লম্বা ডেস্ক। প্রত্যেকের ডেস্কে কম্পিউটার। প্রত্যেকেই সতর্ক। প্রত্যেকেই পুলিশের পোশাকে। দেয়ালে আরও অনেকগুলো স্ক্রিন বসানোর এন্তেজাম। আফজাল হোসেন সবার কেন্দ্রবিন্দু। তার পিছনে দাঁড়িয়ে শতাব্দী ওয়াদুদসহ তিনজন। কেউ কোনো কথা বলবে না, শুধু শুনে যাবে আফজাল হোসেনের কমান্ড। ডিএমপি কমিশনার তিনি!
দৃশ্য ৫৭, শট ২, টেক ১
ডান দিক থেকে হালকা প্যান হয়ে ক্লোজ ফ্রেমে আফজাল হোসেনকে ধরা হবে। তার চশমার স্বচ্ছ কাঁচে আলোর নাচন। ডানে তাকিয়ে আফজাল হোসেন সংলাপ দেবেন, ‘শহরের সমস্ত ট্রাফিক সার্জেন্টকে অ্যালার্ট থাকতে বলবেন...’। চেহারা থমথমে থাকবে। কিন্তু উদ্বেগ। শহর বড়সড় সংকটে!
কিন্তু সংলাপ শুরু করার আগেই আটকে গেলেন আফজাল। মাথা নাড়িয়ে নিজেই নিজের ওপর বিরক্ত হলেন বোধহয় খানিকটা। ঠোঁট তার কিছু একটা আওড়াচ্ছে সর্বক্ষণ।
দৃশ্য ৫৭, শট ২, টেক ২
আবার শট নেওয়া হবে। একইভাবে ডান দিক থেকে প্যান করে তার ওপর ক্যামেরা ধরা হলে, তিনি সংলাপ বলবেন। কমান্ড ছুটে গেলো, ‘লাইট, সাউন্ড’, উত্তর ফিরে এলো ‘রোলিং’।
এবার অ্যাকশন। এবার আফজাল হোসেন সংলাপ বলতে গিয়ে আটকে গেলেন ‘ট্রাফিক সার্জেন্ট’-এ এসে। সময় নিলেন খানিকটা। ঠোঁট তার আরও ব্যস্ত সংলাপ মুখস্ত করতে।
দৃশ্য ৫৭, শট ২, টেক ৩
একটা শব্দ খুব বিরক্ত করছে। হাতুড়ি দিয়ে কাঠের ওপর অনবরত বাড়ি মারার শব্দ। সেট থেকে বেরিয়ে কয়েকজন সহকারি ছুটে গেলেন শব্দের উৎপত্তিস্থলের খোঁজে। না থামালে কাজই হচ্ছে না। এই টেকে শব্দটা খুব ঝামেলা পাকালো। ফলে আফজাল হোসেন সংলাপ বলতে পারলেন না।
বেরিয়ে এলেন শতাব্দী ওয়াদুদ। মনিটরের কাছে এসে বিড়বিড় করে কিছু একটা বললেন কারও সঙ্গে। যার অর্থ অনেকটা এ রকম- এটা সিনেমা ভাই! সবাইরেই নার্ভাস করে দেয়!
চতুর্থবারে শটটা ওকে হলো। আফজাল হোসেন শান্ত গলায় সংলাপগুলো, অভিব্যক্তিগুলো ঠিকঠাক দিতে পেরে, হেসে উঠলেন। খানিকটা নার্ভাস তো তিনি ছিলেনই। এমন ভারী একটা চরিত্র। তাছাড়া চলচ্চিত্রের ক্যামেরার সামনে অনেকদিন পর। শুরুর দিকে বারবার সংলাপ ভুলে গেলেও, চরিত্র থেকে বেরিয়ে গেলেও; পরবর্তীতে তিনি আফজাল হোসেনের মতোই দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে গেলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৬
কেবিএন/