‘বিজ্ঞাপনের অত্যাচার থেকে দর্শকদের রক্ষা করো’, ‘কুরুচিকর অসামাজিক সিরিয়াল বন্ধ করো’, ‘সমাজ ও কৃষ্টিকে অবমাননা করে প্রদর্শিত সিরিয়াল বন্ধ করতে হবে’, ‘দেশীয় সংস্কৃতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দিবো’- প্ল্যাকার্ডে এসব স্লোগান লিখে রোদ মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ছোটপর্দার শিল্পী ও কলাকুশলীরা।
ঢাকার কারওয়ান বাজারে বেসরকারি চ্যানেল একুশে টেলিভিশন কার্যালয়ের সামনে দেখা গেলো এই চিত্র।
‘শিল্পে বাঁচি, শিল্প বাঁচাই’ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে এফটিপিও প্রথমে পাঁচ দফা ও পরে সাত দফা দাবির কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে জোর দেওয়া হচ্ছে ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক প্রচার বন্ধের দিকেই জোর দিচ্ছে সংগঠনটি।
এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এফটিপিওর আহ্বায়ক মামুনুর রশীদ। তার ভাষ্য, ‘তিনি আগেরবার যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, একসঙ্গে ১৭টি ডাবিং করা ধারাবাহিক বন্ধ করেছিলেন। এখন সংখ্যাটা আরও কম। সুতরাং এগুলো বন্ধ করা তার জন্য খুব একটা অসুবিধা হবে না। ’
যোগ করে মামুনুর রশীদ আরও বলেন, ‘আমরা আজ এখানে দাঁড়িয়েছি সংস্কৃতি রক্ষার জন্য, আমাদের জনগণকে সত্যিকার অর্থে এই আজাবের হাত থেকে বাঁচাতে। আপনারা জানেন, ভারতীয় চ্যানেলগুলো আমাদের পারিবারিক বন্ধন নষ্ট করে দিচ্ছে। আমাদের পারিবারিক জীবনকে ধ্বংস করছে। পরকীয়া, হিংসা, বিদ্বেষ- এগুলো কোনো গল্পের বিষয়বস্তু হতে পারে না তা নিয়ে খোদ ভারতেই প্রশ্ন উঠছে। ’
চলমান আন্দোলন সফল করতে সাধারণ দর্শকদের সহযোগিতাও চেয়েছেন মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘দর্শকরা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। আপনারা আমাদের শক্তি। চ্যানেল মালিকদের প্রতি অনুরোধ, অচিরেই আপনাদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদ্রেক হোক। আশা করি, পুরনো বছর শেষ হওয়ার সঙ্গে আমাদের টেলিভিশন শিল্পে যে অন্ধকার নেমে এসেছে সেটাও কেটে যাবে। ’
এফটিপিওর সদস্যসচিব ও ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত মঙ্গলবার বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক মুক্ত বাংলাদেশি চ্যানেল দেখতে চাই। ’ সেই সঙ্গে বিদেশি যে কোনো অনুষ্ঠান আমদানির ক্ষেত্রে ২০০-৩০০ ভাগ কর যুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
গাজী রাকায়েতের অভিযোগ, ‘কিছু স্বার্থলোভী লোক আমাদের শিল্পী-কলাকুশলীদের মধ্যে বিরোধ ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের শিল্পী-কলাকুশলীদেরকে কেউ বিভক্ত করতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামীতেও আমরা যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। ’
ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এসএ হক অলিক বলেন, ‘আমাদের নির্মাণ ও অভিনয় করা অনুষ্ঠান চালিয়ে একুশে টেলিভিশন এ পর্যায়ে এসেছে। কিন্তু এখন আমাদেরকে বাদ দিয়ে চ্যানেলটিতে বিদেশি ধারাবাহিক চালানো হচ্ছে। ’
অলিক অভিযোগ করেন, দীপ্ত টিভি ‘সুলতান সুলেমান’ চালানোর পক্ষে অনুষ্ঠিত একটি কর্মসূচির খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে। এটাকে আয়োজন করা আন্দোলন ও সাধারণ দর্শকের মানসিকতাকে পুঁজি করে চ্যানেলটি ব্যবসা করছে মন্তব্য করে তিনি এর নিন্দা জানান।
সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) দীপ্ত টিভির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এফটিপিও। এখানে চ্যানেলটির চলমান বিদেশি ধারাবাহিক ‘সুলতান সুলেমান’ বন্ধের দাবি জানান তারা। আগামী ২৮ ডিসেম্বর এসএ টিভি এবং ২৯ ডিসেম্বর মাছরাঙা টেলিভিশন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবে এফটিপিও।
আরও পড়ুন>>>
* চারটি টিভি চ্যানেলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করবে এফটিপিও
* বিজয় দিবসে ‘সুলতান সুলেমান’, দীপ্ত টিভি বন্ধের অনুরোধ
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
জেএইচ