যে সব চাহিদা পূরণ করেও বুঝিয়ে দিয়েছিল কোনো বস্তুবাদী চাহিদাই শেষ পর্যন্ত মানসিক তৃপ্তি নিয়ে আসতে পারে না। এ সব কিছুই তিনি দেখিয়েছিলেন পর্দায়।
তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ এবং দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ শুধু দর্শকদের মন জয় করতে সফল হয়েছে তা নয়। পশ্চিমবঙ্গের দর্শকদের কাছে চলচ্চিত্র দুটি এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে। চলচ্চিত্র দুটির পরে অনেকেই বলছেন সত্যজিৎ রায়ের ঘরানার উত্তরসূরি অনীক দত্ত।
অনীক দত্ত উঠে এসেছেন বিজ্ঞাপন জগৎ থেকে। এই জায়গাতেও সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তার মিল। প্রথম দুটি ছবিতেই কমেডির মোড়কে শ্লেষাত্মক চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছিলেন অনীক। এবার বিষয় বদলে একেবারে রহস্যে চলে গিয়েছেন। রহস্য ছবিতে আবারও আবির্ভাব ঘটেছে সব্যসাচী চক্রবর্তীর। তবে এই ছবিতে তিনি ফেলুদা তো ননই, নন কোনো সত্যান্বেষীও। রয়েছেন আরেক ‘ফেলুদা’ আবির চট্টোপাধ্যায়ও। আসলে নামের মতোই ছবির সবকিছু ঘিরেই রহস্য। আর সেটা জানতেই বাংলানিউজ হাজির হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্থান রোডের শুটিং ফ্লোরে।
শুটিং ফ্লোরে গিয়ে দেখা গেল পুরোদমে শুটিং চলছে। প্রখ্যাত প্রফেসর এবং যশস্বী লেখক অসিমাভ বোসের বাড়ি। নিজের লেখা বইয়ের উদ্বোধনে এসেছেন কলকাতায়। সেই উপলক্ষে ছোট একটা গেট টুগেদার। বাড়িতে তার দ্বিতীয় স্ত্রী ইন্দ্রাণী, বহুদিনের বন্ধুসহ আরও কয়েকজন অতিথি আছেন। এমন সময় অঘটন। গৃহ সহায়কের অসাবধানতায় কাচের গ্লাস ঝনঝন শব্দে ভেঙে গেল। সবাই ছুটে আসে। বোঝা যায় সে নেশা করেছে। গৃহ সহায়ক যে নিয়মিত প্রফেসরের হুইস্কি চুরি করে খান, সেটাও ধরা পড়ে। প্রফেসর প্রচণ্ড রেগে তাকে গলাধাক্কা দেন। তিনি তখন চেঁচিয়ে ওঠেন, ‘আমি সব ফাঁস করে দেব। ’ কিন্তু কী ফাঁস করবেন?
কী ফাঁস করে দেবেন তিনি? প্রফেসরের কোনো গোপন অতীত? তাই জিজ্ঞাসু মন নিয়ে পাকড়াও করলাম প্রফেসর অসিমাভ অর্থাৎ সব্যসাচী চক্রবর্তীকে। কিন্তু অভিনেতা রহস্য ফাঁস করতে নারাজ।
তিনি বললেন, রহস্য গল্পের রহস্য ফাঁস না হওয়ায় ভালো। তাহলে আপনিই কি রহস্য উদ্ঘাটন করবেন? থামিয়ে দিয়ে সব্যসাচী জানালেন, ‘না, না আমিই এখানে রহস্য। রহস্যটা কী সেটা ছবির শুরুতেই জানা যাবে। এরপর ছবি যত এগিয়ে যাবে রহস্যও তত ঘনীভূত হবে। ’
পরিচালক বললেন, ‘মেঘনাদ বধ কাব্য মধুসূদন দত্তের অসাধারণ সৃষ্টি। সেই কাব্যের সঙ্গে নামের মিল থাকলেও আর কোনো মিল নেই। তবে একটা যোগাযোগ আছে। সেটাই এ ছবির রহস্য। কিন্তু সেই অর্থে ডিটেকটিভ গল্প নয়। বিশেষজ্ঞ কেউ রহস্যের কিনারা করতেও আসবে না। ’
গল্প নিয়ে প্রশ্ন করায় বললেন, ‘জানেন, হিচকককে যখন তার ছবির গল্প জিজ্ঞাসা করা হত, তিনি সম্পূর্ণ আলাদা একটি গল্প শুনিয়ে দিতেন। ’ সেইভাবেই অনীক দত্ত হেসে বললেন ‘না, না আমি তো আপনাকে গল্পটাই বলিনি। বাকি যা বলেছি তা অবশ্য সত্যি। ’
গল্পে প্রফেসর একজন স্বনামধন্য মানুষ। যিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন। এক সময় ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কল্পবিজ্ঞান নিয়ে অসাধারণ সব বই লিখেছেন, পুরস্কার পেয়েছেন। বর্তমান স্ত্রী ইন্দ্রাণীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন গার্গী রায়চৌধুরী। শুটিং-এর ফাঁকে পাওয়া গেল এ ছবির ‘ইন্দ্রাণী’ গার্গী রায়চৌধুরীকে।
তিনি বললেন, ইন্দ্রাণী এমন একটা চরিত্র যাকে দর্শকদের ভালো লাগবে। আর ভালো লাগলে আকর্ষণ বাড়বে, রহস্যও বাড়বে।
কাহিনী বিন্যাস এবং চিত্রনাট্যে তাকে সহায়তা করছেন উৎসব মুখোপাধ্যায়। ক্যামেরা পরিচালনা করছেন অভীক মুখোপাধ্যায়। সুর করছেন দেবজ্যোতি মিশ্র। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন সায়নী ঘোষ, অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, সোহাগ সেন, কল্যাণ রায়, বিক্রম এবং ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবিটির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হবে বোলপুরে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
ভিএস/আরআর/এমজেএফ