ফারুকী বলেছেন, ‘আগেই জানা ছিলো জামিল আহমেদ চেনা কোনো জগৎ নির্মাণ করবেন না। প্রতিদিনের ডালভাত উনি সার্ভ করবেন না।
সৈয়দ জামিল আহমেদ সম্পর্কে তার মূল্যায়ন এমন, “আগেও বলছি, নব্বই দশকের শুরুতে করা ‘বিষাদসিন্ধু’ দিয়ে জামিল আহমেদ বাংলাদেশের থিয়েটারের নতুন চোখ খুলে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে বাংলাদেশে হওয়া আমাদের বেশির ভাগ থিয়েটার প্রযোজনাই মোটামুটি কোনো না কোনোভাবে ‘বিষাদসিন্ধু’ দ্বারা ইন্সপায়ার্ড। হয় সেটে, নয় আলোতে, নয় কোরিওগ্রাফি, নয় পোশাক। কিন্তু আপনি এটা খুব বেশি শুনবেন না, কারণ যে যে সব রাজনীতির মধ্যে থাকলে ইতিহাস বা মিডিয়া এগুলারে লিপিবদ্ধ করে, জামিল আহমেদের বসবাস এসবের বাইরে। ”
নাটকটি নিয়ে ফারুকী তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “রিজওয়ান’-এ জামিল আহমেদ এক বিমূর্ত রাজনৈতিক কবিতা রচনা করেছেন যেখানে দেখানো হয় রাষ্ট্রশক্তি কিভাবে দূর্বল নাগরিককে ধ্বংস করে দেয়।
গল্পটা কাশ্মীরের। রাষ্ট্র যেখানে নাগরিকের জান কবচ করে। রিজওয়ানের বাবাকে হত্যা করে, বোনকে ধর্ষণের পর হত্যা করে, সব শেষে রাষ্ট্র তার তামাশার চুড়ান্ত রুপ দেখায় এই বলে যে, তুমি নিজেই তোমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছো। সুতরাং তোমাকে শাস্তিস্বরুপ মেরে ফেলা হবে। এবং রাষ্ট্র ন্যায়ের প্রতীক হয়ে রিজওয়ানকে হত্যা করে।
কেউ মারা গেলে ছোটবেলায় আমার আম্মা আকাশের দিকে নির্দেশ করে বলতো, ‘আল্লায় নিয়া গেছে’! ফলে আমাদের শিশুমনে মৃত্যূর সাথে আকাশের একটা যোগসুত্র তৈরি হয়ে গেছিলো। আমার মনে হয় বেশির ভাগ বাঙালি শিশুই এই ইমেজ নিয়ে বড় হয়েছে। আমি জানিনা জামিল আহমেদ তার শিশুবেলায় এই গল্প শুনেছেন কি-না। কিন্তু আমার বিশ্বাস শুনেছেন এবং সেই ইমেজ এখনো তার মনে গেঁথে আছে।
সেই কারনেই কি-না জানিনা ‘বিরাট শিশু’ জামিল আহমেদ মৃতদের জগৎ বানিয়েছেন আকাশে। মৃত্যুর পর রিজওয়ান যখন আকাশের দিকে উঠে যায়, সপ্ত আকাশের প্রথম আকাশে দেখা হয় বোনের সঙ্গে। রিজওয়ান ছিলো পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য যে পৃথিবীতে অপেক্ষায় ছিলো এই আশায় যে তার বাবা একদিন ফিরে আসবে।
মৃত বোনের সাথে সাক্ষাতে রিজওয়ান যখন বলে উঠে ‘বোন, বাবাকে বলো না আমি মারা গেছি, আমাকেও বলো না বাবা মারা গেছে’— তখন আমার গলা পর্যন্ত কান্না এসে ভর করে, আমি অসহায় হয়ে যাই। ”
সবাইকে নাটকটি দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে ফারুকী লিখেছেন, ‘এই অসহায়ত্বের ভার নিতে চাইলে শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে থিয়েটারটা দেখে আসেন। টেকনিক্যাল দিক নিয়ে কিছু বললাম না। শুধু বলবো আপনার জন্য ম্যাজিক অপেক্ষা করছে। দেখে আসুন। ডুবে যান, ঝিলের জলে, কবিতার ঝিলে। ’
জানা গেছে, শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ঈদের আগের দিন (১ সেপ্টেম্বর) থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘রিজওয়ান’-এর দুটি করে প্রদর্শনী চলছে। এটি প্রযোজনা করেছেন নাটবাঙলা। প্রতিদিন বিকেল ৪টা ও রাত ৮টায় দেখানো হচ্ছে নাটকটি। ‘রিজওয়ান’-এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর মঞ্চে ফিরেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। সবশেষ ১৯৯২ সালে ঢাকা পদাতিকের ‘বিষাদসিন্ধু’ নাটকটি নির্দেশনা দেন জামিল আহমেদ। নানা কারণে এটি বেশ আলোচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৭
এসও