বাংলানিউজ: ‘ঢাকা অ্যাটাক’ দর্শক সমাদৃত হচ্ছে। ব্যবসায়িক সাফল্যও পেয়েছে।
আরিফিন শুভ: আমি জানতাম যে, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সহজ কোনো ছবি নয়। এটা শেষ করতে হলে প্রচুর কষ্ট করতে হবে। কিন্তু ভবিষ্যৎ জানতাম না। একজন শিল্পী হিসেবে আমার খুব লোভ হয়েছিলো ছবিটি করার জন্য। এখন মনে হচ্ছে, মনের বিশ্বাস থেকে কিছু করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বাংলানিউজ: ছবিটি তৈরি হতে বেশ সময় লেগেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, চিত্রনাট্য একরকম থাকে, শুটিং হয় আরেক রকম, ছবি মুক্তির পর পাওয়া যায় আরও খারাপ কিছু। এ ক্ষেত্রে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ কেমন?
শুভ: এটা নিঃসন্দেহে কেউ বলতে পারবেন না যে, যেটা টেবিলে ছিলো সেটা পুরোপুরিভাবে কাজে প্রতিফলিত হয়েছে। কখনো সেটা অনেক বেশি আলাদা হয়ে যায়, কখনো একটু কম হয়, কখনো একটু বেশি হয়। ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর বেলায় আমরা চেয়েছিলাম একজন সাধারণ মানুষ ছবিটি দেখে উপভোগ করুন। আমার শতভাগ সফল হয়েছি।
বাংলানিউজ: অনেকে বলছেন, পুলিশ পরিবারের প্রযোজনায় আরও সাহসী গল্প নির্বাচন করা যেতো। ভবিষ্যতে কি তেমনটি দেখা যেতে পারে? সিক্যুয়েল তো হওয়ার কথা…
শুভ: আপনার সঙ্গে আমি একমত। তবে দ্বিমতও আছে, বলবো না সাহসী গল্পের বিষয়। আমি বলবো, গল্পের ৩০ ভাগ একজন পুলিশের ব্যক্তিগত ত্যাগের জায়গা থেকে, সেটা নিয়ে আরও শক্তিশালী প্লট হতে পারতো, হতে পারে। হয়তো সামনে হবে। সিক্যুয়েলের ব্যাপারে আমি এই মূহুর্তে কিছু বলতে চাই না।
বাংলানিউজ: আপনার সহশিল্পীদের মধ্যে শতাব্দী ওয়াদুদ, এবিএম সুমন, এমনকি ভিলেনের ভূমিকায় নবাগত তাসকিন রহমানের অভিনয় প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু চিত্রনায়িকা মাহির চরিত্রায়ণ, উপস্থাপন ও অভিনয় নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। আপনি কীভাবে মূল্যয়ণ করবেন?
শুভ: একজন শিল্পী চাইলেও সব সময় তার সেরাটা দিতে পারেন না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা। আমিও সব সময় পারি না। সে জায়গা থেকে বলবো, মাহি চেষ্টা করেছে…। দর্শক ভালো বলতে পারবেন, ও কতোটা ভালো করেছে।
বাংলানিউজ: আপনার চুলের কন্টিউনিটি (ধারাবাহিকতা) নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। কখনো বড় কখনো ছোট চুলে পর্দায় হাজির হতে দেখা গেছে আপনাকে। অনেকের কাছে এটি দৃষ্টিকটু লেগেছে। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
শুভ: এ নিয়ে দুটি কথা বলা যায়। ধরেন এর মধ্যে একটি চেপে যাচ্ছি (হাসি), আরেকটি বলছি। বিচক্ষণ দর্শকরা বুঝবেন বিষয়টি। দু’ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে শুটিং হয়েছে তো…। কখনো কখনো শিল্পীদের শিডিউল শেষ হয়ে যায়…।
একটি উদাহরণ দিই, ‘একটি সিনেমার গল্প’-এর প্রথম লট শেষ করলাম গত মাসে। কাল থেকে দ্বিতীয় লটের কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে এটি শেষ না হলে আমি তো আরেকটি ছবিতে (বেসিক আলী) ঢুকে যাবো। সেই সময় যদি ‘একটি সিনেমার গল্প’র শুটিং হয়, একই কন্টিউনিটি থাকবেনা আমার, থাকবে কি? তো এর বেশি কিছু আমি বলবো না।
বাংলানিউজ: ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এ স্বল্প উপস্থিতি নিয়ে সবার নজর কেড়েছেন তাসকিন রহমান। তার অভিনয় নিয়ে কিছু বলুন।
শুভ: আমি ব্যক্তিগতভাবে তাসকিনের অভিনয়ের ভক্ত। এটা অনেকেই জানেন না, জানবার কথা নয়, অন্তত ৭-৮ বছর আগে আমরা একই টেলিফিল্মে (চক্র) কাজ করেছিলাম। ও আমার খুব ভালো বন্ধু। যখনই সিডনি যাই ওর সাথে দেখা হয়, আড্ডা হয়। তাসকিনের মধ্যে গিফটেড ট্যালেন্ট রয়েছে। আমি যেমন অভিনয় শিখে আসিনি, ও তেমনই। আমরা ‘মৃত্যুপূরী’তেও একসঙ্গে অভিনয় করেছি। তাসকিনের উচিত বাংলাদেশি ছবিতে আরও বেশি অভিনয় করা, তাহলে আরো একজন ভালো শিল্পী পাবো আমরা।
বাংলানিউজ: ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর জন্য ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন নিশ্চয়ই! কেমন উপভোগ করছেন?
শুভ: ‘ছুঁয়ে দিলে মন’-এ সর্বোচ্চ ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম। সেটিকেও ছাড়িয়ে গেলো ‘ঢাকা অ্যাটাক’। একটা জিনিস কমন পেলাম। আমি বলতে চাই, এখনকার স্মার্ট অডিয়েন্স, যাদের প্রচুর ক্ষুধা সিনেমা দেখার, (আমরা যারা জানিনা ও মানিনা এখনকার জেনারেশন সিনেমা দেখতে চায়), তারা অামাকে খুব বলছেন, ‘আপনি সিনেমা করছেন বলে আমরা হলে যাই…। ’ আমি তাদের কাছে খুব কৃতজ্ঞ। কিন্তু একই সাথে আমার জন্য তৃপ্তির, আবার শিল্পী হিসেবে দায়ভারেরও। এটা ফিল করেছি ‘ছুঁয়ে দিলেন মন’-এর বেলায়, ‘নিয়তি’র বেলায়, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ তো আছেই…
বাংলানিউজ: মানে কেউ কেউ সাফল্য উপভোগ করতে পারেনা, তেমন কিছু কি?
শুভ: আমার স্ত্রী সেদিন বলছিলেন, ‘সবাই এতো আনন্দিত। তুমি কেন উচ্ছ্বসিত নও?’ আমি বললাম, এটা দেখতে গেলে তো ক্ষণিকের। উচ্ছ্বসিত আমি। তবে আমি মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ, দর্শকের কাছে কৃতজ্ঞ, কোনো ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই। আমার মতো ক্ষুদ্র শিল্পীর কাজ সবার ভালো লেগেছে। এর চেয়ে বড় বিষয় আমাকে ভাবাচ্ছে, হয়তো আমি মানুষই এরকম যে সফলতা উপভোগের সময়ে ভবিষ্যতের দায়িত্বভার দেখতে পাচ্ছি, সেটি নিয়ে ভাবছি। আমার মনে হচ্ছে, আরও বেশি পরিশ্রম করে কাজ করতে হবে আমাকে, দর্শকের এই ভালোবাসার জায়গাটা ধরে রাখতে হবে।
বাংলানিউজ: দর্শক বা ভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে?
শুভ: দর্শক একটা জিনিস পরিস্কার করে দিয়েছেন যে, সমসাময়িক স্মার্ট ফিল্ম, যেটা তারা দেখতে চান, তারা উপভোগ করবেন, সেটাতে তারা আমাকেই চান। এটা একটা যেমন ভালো লাগার, আবার দায়িত্বের ব্যাপারও। তাই ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর এই সাফল্য মাথায় তুলতে চাই না।
বাংলানিউজ: ছবিটির নির্মাতা দীপংকর দীপনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
শুভ: তিনি খুব সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে কাজ করেছেন। কাজের অভিজ্ঞতা ভালো। আমি তাকে সাধুবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই। ভবিষ্যতে তিনি আরও ভালো করবেন এই প্রত্যাশা।
বাংলানিউজ: আপনার মা এখন কেমন আছেন? ছেলের সাফল্যে তিনি নিশ্চয়ই খুশি?
শুভ: ১৩ দিন হলো মা হাসপাতালে…। অনেকে জানেন না যে, গোটা সময়টাতে, আমার শুটিং, ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর প্রমোশন (মাহি ছিলেন না), হাসপাতাল একলা সামলেছি। হয়তো এ কারণে কিছুটা ক্লান্ত আমি। মা কিছুটা ভালো এখন। এই ভালোটা যদি অপরিবর্তিত থাকে, তাহলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর খবর তাকে দিয়েছি। কিন্তু মা এই আনন্দ উপভোগ করার মতো অবস্থায় নেই…
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৭
এসও